শুভেন্দু অধিকারী।
কয়েক মাস আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন উপপুরপ্রধান। দল দু’পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগীও হয়েছিল। তবে তাতে যে দুই নেতার মধ্যে বরফ গলেনি, তা স্পষ্ট হয়ে গেল শুক্রবার, উপপুরপ্রধানের দলীয় নেতৃত্বের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর ঘটনায়। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে উপপুরপ্রধানের পদ ছাড়তে চেয়ে এ দিন দলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী ও বাঁকুড়া সংসদীয় জেলা সভাপতি শুভাশিস বটব্যালের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর দাবি করলেন দিলীপ আগরওয়াল।
দিলীপবাবু দাবি করেছেন, ‘‘উপপুরপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করার চিঠির ছবি আমি শুভেন্দুবাবু ও শুভাশিসবাবুর কাছে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছি।’’ পরে সেই পদত্যাগপত্রের ছবি সাংবাদিকদের কাছেও পৌঁছে দেন তিনি।
পদত্যাগপত্রে দিলীপবাবুর অভিযোগ, গত দু’বছর ধরে তাঁকে উপপুরপ্রধান হিসেবে কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুরপ্রধান তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই সমস্ত কিছু ক্ষেত্রে কাজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি অপমানিত বোধ করছেন। তাই তিনি উপপুরপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন।
ঘটনা হল, বেশ কয়েক মাস আগে পুরসভার কাজে দিল্লি গিয়েছিলেন দিলীপবাবু। সেখান থেকেই এক অভিযোগ তুলে ‘ফেসবুকে’ পোস্ট করেন তিনি। যা কেন্দ্র করে অস্বস্তি দানা বেঁধেছিল জেলা তৃণমূলের অন্দরে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জেলা নেতৃত্বকে পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানের বিবাদ মেটাতে বৈঠকে বসার নির্দেশ দেন। বৈঠকেও বসা হয়। দিলীপবাবু এ দিন অভিযোগ করেন, “বৈঠকের পরে ভেবেছিলাম পুরসভায় যোগ্য সম্মান পাব। কিন্তু তা হয়নি। আমি বার বার এই সমস্যার কথা আগে দলকে জানিয়েছি। সুবিচার না পাওয়ায় পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।”
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, সামনের বছরেই বাঁকুড়া পুরসভায় নির্বাচন। এ বার লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে তৃণমূল এই শহরে মোটেই স্বস্তিতে নেই। ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টিতেই বিজেপির কাছে পিছিয়ে তৃণমূল। শাসকদলের নিচুতলার কর্মীদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে পুরএলাকার মানুষের সমর্থন ফেরাতে যেখানে তৃণমূল কাউন্সিলরদের সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা, সেখানে পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানের দ্বন্দ্ব উল্টে দলের ক্ষতি আরও না বাড়ে। অনেকে আবার পুরপরিষেবার এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর নীলাদ্রিশেখর দানার দাবি, “তৃণমূলের দ্বন্দ্বের জন্য যদি সাধারণ মানুষের পরিষেবা ব্যাহত হয়, তাহলে আমরা আন্দোলনে নামব।”
এ দিকে উপপুরপ্রধানের পদত্যাগ প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুরপ্রধান মহাপ্রসাদবাবু। তিনি বলেন, “উনি পদত্যাগ করেছেন বলে আমি শুনিনি। তাই তিনি কী অভিযোগ তুলছেন, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।” তিনি যুক্ত করেন, “লোকসভায় খারাপ ফলাফলের পরে দল আমাকে শহরে জনসংযোগ বাড়ানো ও পরিষেবার মানোন্নয়ন ঘটানোর নির্দেশ দিয়েছে। সেই লক্ষ নিয়েই আমি চলছি। কে কোথায় বিতর্ক বাঁধাতে চাইছেন, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না।”
দিলীপবাবুর উপপুরপ্রধানের পদে ইস্তফা দেওয়ার পদ্ধতি নিয়েও বিভিন্ন মহলে উঠছে প্রশ্ন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “উপপুরপ্রধান পদত্যাগ করতে চাইলে পুরপ্রধানকে ইস্তফাপত্র দিতে হয়। এটাই নিয়ম।” তাই পুরপ্রধানের বদলে দলের কাছে ইস্তফা দিলে তা কতখানি গ্রাহ্য হবে, তা নিয়েও দানা বেঁধেছে জল্পনা। দিলীপবাবু অবশ্য বলেন, “দলই আমাকে পদ দিয়েছিল, তাই দলের কাছেই আমি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি। দলের তরফে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমি উপপুরপ্রধান হিসেবে কোনও কাজই করব না।” এ দিন বারবার চেষ্টা করেও শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। কী সমস্যা হচ্ছে, তা নিয়ে দিলীপের সঙ্গে আলাাদা করে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy