বাঁকুড়া জেলা সংশোধনাগার। ছবি সংগৃহীত।
মহালয়ায় ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই কারাগার প্রাঙ্গণে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর স্তোত্রপাঠ। দেবীপক্ষের উষালগ্নে বাঁকুড়া জেলা সংশোধনাগারে বোধন হয়ে গেল শারদোৎসবের।
কারা বিভাগের অতিরিক্ত আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সুদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, “বাঁকুড়া সংশোধনাগারে এবারই প্রথম আবাসিকদের দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছে।” আর তাকে কেন্দ্র করে উৎসবের মেজাজে স্বজন-বান্ধব থেকে বহুদুরে থাকা বন্দি আবাসিকরাও। কেউ ব্যস্ত পুজোর হিসেবনিকেশ কষতে, কোথাও আবার আবাসিকেরা একজোট হয়ে পুজো পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করছেন।
সংশোধনাগারের সুপার শ্যামল তালুকদারের কথায়, “আবাসিকেরাই বন্দি জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে দুর্গাপুজো করার আবেদন জানিয়েছিলেন। ওঁদের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতেই ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ পুজোর ছাড়পত্র দিয়েছেন। সেই মতো আয়োজন করা হয়েছে। জেলা আইনি পরিবেষা কর্তৃপক্ষ পুজোয় সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।” জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব শুভ্রা ভৌমিক ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘সংশোধনাগারের আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে দুর্গাপুজোয় যুক্ত হতে না পারার আক্ষেপ জেনেছিলাম। তখনই সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করি। পুলিশ-প্রশাসন এনিয়ে সাহায্য করেছে"।
পুজোর চারদিন বিশেষ মেনুও চেয়েছিলেন বন্দিরা। রবিবারই বন্দি ও কারা কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সেই মেনু ঠিক করেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে অষ্টমীর দুপুর ছাড়া বাকি দিনগুলিতে দু’বেলা ভাত খাওয়া হবে। সপ্তমী ও দশমীতে মুরগির মাংস, নবমীতে খাসির মাংস থাকছে। অষ্টমীর দুপুরে থাকছে কচুরি। পুজো আয়োজনে সংশোধনাগারের কর্মীরা চাঁদা দিয়েছেন। বন্দি আবাসিকরাও নিজেদের শ্রমের বিনিময়ে উপার্জনের টাকার একাংশ পুজোর চাঁদা হিসেবে কেটে নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। প্রতিমা গড়ার বরাত দেওয়া হয়েছে বাঁকুড়ার মৃৎশিল্পীকে। পঞ্চমীর দিন প্রতিমা সংশোধনাগারে আসার কথা।
কারাগারের গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্যান্ডেল গড়ার কাজে মুখ্য ভূমিকায় থাকবেন ওই কাজে অভ্যস্ত আবাসিকদের একাংশ। বাইরে থেকে বাঁশের খুঁটি আনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একটি ঢাক কেনার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন কারাগার কর্তৃপক্ষ। ঢাক বাজাবেন আবাসিকরাই। মূল পুরহিত অবশ্য আসবেন বাইরে থেকে। তাঁকে সাহায্য করবেন জেলের আবাসিকরা। পুজোর চারদিন বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। সূত্রের খবর, সেখানে নাটক, সঙ্গীত, আবৃত্তি পরিবেশন করবেন আবাসিকদের অনেকে। তারও মহড়া পুরোদমে চলছে সংশোধনাগারের অন্দরে। সপ্তমীতে সংশোধনাগার লাগোয়া দশেরবাঁধে নবপত্রিকা স্নান করাতে নিয়ে যাবেন কারাকর্মীরা। দেবীর বিসর্জনও সেখানেই হওয়ার কথা। সংশোধনাগারের সুপার মানছেন, “আবাসিকেরাই সামনে থেকে পুজো পরিচালনা করছেন। পুজোর চারদিন বিশেষ মেনুর আয়োজন করা হয়েছে। আবাসিকেরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করবেন।”
বাঁকুড়া সংশোধনাগারের এক কারা কর্মী বলেন, “আগে পুজোর দিনগুলিতে বাইরে উৎসবের আমেজ থাকলেও কারাগারে কোনও উচ্ছ্বাস থাকত না। এ বার একেবারেই উল্টো ছবি। কারাকর্মী থেকে আবাসিক সকলেরই ব্যস্ততা তুঙ্গে। মনে হচ্ছে উৎসবের আলো কারার লৌহ কপাট ভেদ করে ভিতরেও ঢুকে পড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy