বাঁ দিকের ঘরে বসেই সাইবার অপরাধের কাজকর্ম চালাত অভিষেক। ডান দিকে অভিষেকের নতুন বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া ঘরে বসে সাইবার অপরাধের সাম্রাজ্য পরিচালনা। বাঁকুড়ার ধোবারগ্রামের অভিষেক মণ্ডলের কীর্তিকলাপ যত জানতে পারছেন ততই এমন ধারণা পোক্ত হচ্ছে তদন্তকারীদের। পুলিশের মতে, করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে সাইবার অপরাধের জগতে ‘অভিষেক’ ঘটে অভিষেকের।
তদন্তকারীদের ধারণা, অভিষেক অন্ধকার দুনিয়ার সঙ্গে যত পরিচিত হয়েছিল ততই তার আয় বাড়ছিল। সাইবার প্রতারকদের ই-ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট বিক্রি করে সে কৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেছিল। সম্প্রতি সেই টাকায় গ্রামে একটি চার কামরার বড়সড় বাড়ি তৈরির কাজও শুরু করে অভিষেক। পুলিশের দাবি, জেরায় এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে অভিষেক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেক উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হলেও প্রথম বর্ষেই পড়াশোনায় ইতি টেনে দেয়। সে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হয়ে উঠেছিল। পুলিশের দাবি, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় লকডাউন চলাকালীন ডার্ক ওয়েবের কথা প্রথম জানতে পারে অভিষেক। তার মাধ্যমেই সে একটু একটু করে সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
ভুয়ো নথির মাধ্যমে সিম কার্ড আক্টিভেট করে, একের পর এক ই-ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট তৈরি করে প্রতারকদের বিক্রি করে মোটা টাকা আয় করে অভিষেক। পুলিশের ধারণা, অন্ধকার জগতে খুব দ্রুত নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করে ফেলেছিল সে। তাড়াতাড়ি তার কাজের পরিধিও বেড়েছিল। সব কাজ একা হাতে সামাল দিতে না পেরে নিজের ভাই অভিজিৎকেও এ পথে টেনে এনেছিল সে। ভুয়ো নথি সংগ্রহ এবং কম্পিউটারের সাহায্যে ভুয়ো আধার কার্ড-সহ অন্যান্য নথি তৈরির জন্য বহু লোককে দলে টেনেছিল অভিষেক। সিম কার্ডের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার ডিলারের সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি করেছিল সে।
অভিষেক এবং তার ভাই অভিজিতের আইনজীবী অভিষেক বিশ্বাস দাবি করেছেন, ‘‘অভিযুক্তদের বয়স যথেষ্ট কম। পুলিশ দুই ভাইকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। আমরাও চাই সত্য সামনে আসুক। অভিষেক এবং অভিজিতের দ্বারা কেউ প্রতারিত হয়েছে এমন কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে নেই। ওরা দু’জনেই নিরপরাধ।’’
এই কাণ্ডে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ আরও তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম মানস সাহানা, কৃপাসিন্ধু সাহানা এবং দীপক গুঁই। মানস এবং কৃপাসিন্ধু বাঁকুড়া সদর থানার বেলিয়াডি গ্রামের বাসিন্দা। দীপকের বাড়ি জয়পুরে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার ডিলার মানস এবং কৃপাসিন্ধু সিম কার্ড সরবরাহ করত অভিষেককে। দীপক একটি ই-ওয়ালেট সংস্থার মার্চেন্ট হিসাবে কাজ করত। তার মাধ্যমেই ভার্চুয়াল অর্থ নগদে পরিণত করত অভিষেক, যাতে পুলিশের কাছে ধরা না পড়ে। কিন্তু শেষররক্ষা হল না।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “এই ঘটনায় আর কেউ যুক্ত আছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। মোবাইলের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশানের মাধ্যমে অভিষেক কোন কোন প্রতারক চক্রের সঙ্গে লেনদেন চালাত তা জানতে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফরেন্সিক পরীক্ষার ফল জানা গেলে বহু তথ্য সামনে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy