Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

ঝান্ডা হাতে কারা, প্রশ্ন বিজেপিরই

দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন অনেকেই পদ্মফুলের পতাকা নিয়ে নানা জায়গায় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে দাবি করছেন বিজেপির বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র ও স্বপন ঘোষ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

দলে হু হু করে ঢুকে পড়ছে ‘বেনোজল’। যা সামলাতে কার্যত হিমসিম অবস্থা বাঁকুড়া জেলা বিজেপি নেতৃত্বের। নিজেরাই সে কথা স্বীকার করছেন। পরিস্থিতি এমনই যে পদ্মফুল আঁকা পতাকা হাতে নিয়ে যাঁরা এলাকায় ‘দাপিয়ে’ বেড়াচ্ছেন, গোলমালে জড়ালে তাদের সরাসরি গ্রেফতার করতে পুলিশকে বলছেন বিজেপি নেতারাই।

দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন অনেকেই পদ্মফুলের পতাকা নিয়ে নানা জায়গায় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে দাবি করছেন বিজেপির বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র ও স্বপন ঘোষ। বিষ্ণুপুরের সভাপতি জানাচ্ছেন, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে গিয়ে দলের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিজেপির পতাকা নিয়ে কেউ কোথাও গোলমাল করলে দলের কর্মীরাই যাতে তাঁদের আটকে পুলিশের হাতে তুলে দেন, সেই নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি মণ্ডলকে নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশের অনুমতি না নিয়ে কোনও ভাবেই বিজয় মিছিল করা যাবে না।

স্বপনবাবু বলেন, “সমস্ত থানায় আমরা মৌখিক ভাবে বলেছি, বিজেপির পতাকা নিয়ে কেউ কোথাও ঝামেলা করলে গ্রেফতার করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দলের সংস্কৃতি এটা নয়। যাঁরা করবেন তাঁরা নিশ্চয়ই বেনোজল।” তিনি যুক্ত করেন, “শীঘ্রই আমরা জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে গিয়ে এ নিয়ে স্মারকলিপি দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গোড়াতেই বেনোজল রুখতে হবে।” জেলা পুলিশের এক কর্তাও বলেন, ‘‘মৌখিক ভাবে বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, তাঁদের দলের পতাকা নিয়ে অপরিচিতেরা গোলমাল পাকাচ্ছে। ওই সব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।’’

বস্তুত, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরেই রাজ্যে একের পর এক রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটছে। তৃণমূলের কার্যালয় দখল করা, ওই দলের কর্মীদের কর্মীদের মারধর করা, এমনকি গ্রামছাড়া করার মতো অভিযোগে নাম জড়াচ্ছে বিজেপির বিরুদ্ধে। বাঁকুড়া জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রেও বিজেপি বড় ব্যবধানে জিতেছে। জেলার ১২টি বিধানসভাতেই পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। ওন্দা ও জয়পুরে তৃণমূলের কার্যালয় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পরে তৃণমূল ফের সেই কার্যালয় উদ্ধার করে। এখনও পর্যন্ত কেবল ওন্দা ব্লকেই তিনটি রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন বিজেপি কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। ইন্দাস, পাত্রসায়র, শালতোড়া, তালড্যাংরা ব্লকেও বিক্ষিপ্ত ভাবে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরার দাবি, ‘‘এক সময়কার সিপিএমের হার্মাদেরাই বিজেপি হয়ে গিয়ে গোলমাল করছে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করলেও দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন অনেকেই বিজেপির পতাকা নিয়ে ঝামেলা করছে বলে দাবি করছেন বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি।

ঘটনা হল, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া সৌমিত্র খাঁ এখন বিষ্ণুপুরের সাংসদ। তাঁর অনুগামীদের একটা অংশ এখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তাঁর অনুগামীরাও এখন বিজেপিমুখী। এই পরিস্থিতি বিষ্ণুপুরে বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীদের মধ্যে ‘চাপ’ সৃষ্টি হয়েছে। স্বপনবাবু বলেন, “সমস্যা হচ্ছে ভোটের পরে তৃণমূল ও সিপিএমের একটা অংশ নিজেরাই বিজেপির পতাকা তুলে ফেলেছেন। ওঁরা কেউই আনুষ্ঠানিক ভাবে দলে আসেননি। আমরা তাঁদের চিনিও না। গোলমালটা ওই লোকজনদের একটা অংশই পাকাচ্ছে।”

বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দবাবুরও দাবি, “কিছু দিন আগে তালড্যাংরার পাঁচমুড়ায় কিছু লোকজন বিজেপির পতাকা নিয়ে গিয়ে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। দলের সঙ্গে অভিযুক্তদের কোনও সম্পর্কই নেই।” তিনি জানান, তালড্যাংরায় বিজেপির মণ্ডল সভাপতিকে দলীয় ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দলীয় ভাবে থানায় অভিযোগ করতে। পাশাপাশি জেলার বাকি মণ্ডল সভাপতিদেরও রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে সেখানে কারা জড়িত তার উপর নজর রাখার নির্দেশ বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিবেকানন্দবাবু।

বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সভাপতি শ্যামলবাবুর কটাক্ষ, “দলের কর্মীদের উপর যে বিজেপির নেতাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, তা মানুষ বুঝে গিয়েছেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Bankura BJP Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE