Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

Coronavirus in West Bengal: কোভিড-রোগীদের ‘ভরসা’ অজিত

কাজের স্বার্থে এখন বাঁকুড়ার বড়জোড়া হাসপাতালে থাকেন কোভিড-অ্যাম্বুল্যান্সের চালক অজিত কর্মকার।

অজিত কর্মকার।

অজিত কর্মকার। নিজস্ব চিত্র।

তারাশঙ্কর গুপ্ত
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩৮
Share: Save:

সংক্রমণের ভয়ে বাড়ি ফেরেননি প্রথম পর্বের লকডাউনের সাত মাস। আস্তে-আস্তে কাজ বেড়েছে। নিজেও নিয়েছেন করোনা-আক্রান্ত এবং তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব। কাজের স্বার্থে এখন বাঁকুড়ার বড়জোড়া হাসপাতালে থাকেন কোভিড-অ্যাম্বুল্যান্সের চালক অজিত কর্মকার।

ঘুটগোড়িয়া গ্রামের বছর বাহান্নর অজিতবাবু ভাড়ার গাড়ি চালাতেন। গত বছর ২৫ মার্চ করোনার প্রথম ঢেউয়ের ঝাপটায় যখন লকডাউন ঘোষণা হয়, তাঁকে ফোন করে কোভিড রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে অনুরোধ করেন বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়। অজিতবাবুর মনে পড়ে, ‘‘অলোকদা বলেছিলেন, ‘কোভিড অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর মতো সাহস তোর আছে। তুই পারবি।’।’’ সেই থেকে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কোভিড-অ্যাম্বুল্যান্সের স্টিয়ারিং তাঁর হাতে।

গত এক বছরে করোনা রোগীদের আপনজন হয়ে উঠেছেন অজিতবাবু। বড়জোড়ার গণেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাকে যখন ওন্দার কোভিড হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, ভয় পেয়েছিলাম। অজিতদাই সাহস দিয়েছিলেন।’’

হাটআশুড়িয়ার এক কোভিড আক্রান্তের স্ত্রী মুনমুন গুপ্তের কথায়, ‘‘স্বামী এবং বাড়ির অন্যদের কোনও গাড়ি কোভিড-পরীক্ষা করাতে নিয়ে যেতে চাইছিল না। অজিতদাই এগিয়ে এসেছিলেন।’’ মানাচরের শৈলেন সরকার কোভিড হওয়ায় ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। শৈলেনবাবু জানাচ্ছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে অজিতবাবু কয়েকদিনের বাজার করে দিয়ে এসেছিলেন বাড়িতে। তিনি কেমন আছেন, নিয়মিত সে খবর দিতেন তাঁর স্ত্রী-কে।

বিধায়ক অলোকবাবু বলেন, ‘‘অজিতের দায়িত্বজ্ঞানের তুলনা হয় না। রোগীদের ভীষণ যত্ন নেয়। রোগীদের পরিবারকেও যতটা পারে, সাহায্য করে।’’

শুরুটা কিন্তু মসৃণ ছিল না। অজিতের অভিজ্ঞতা, এলাকার অনেকে এড়িয়ে চলছিলেন। গ্রামে ঢুকলে অনেকে ‘রে-রে’ করে উঠতেন, যেন অজিতের (স্বাস্থ্যবিধি অক্ষরে অক্ষরে মানেন) দৌলতে সংক্রমণ হতে পারে তাঁদের। গ্রামের চায়ের দোকানেও তেমন উষ্ণ অভ্যর্থনা মিলত না। তবে সে দোকানেই এক বার কয়েকজন ক্রেতা দোকানদারের ভুল ভাঙান। বলেন, ‘‘ওঁকে দূরে সরাবেন না। উনি সমাজের জন্য কাজ করছেন।’’ এখন আর আতঙ্কের-সমস্যা নেই, জানান অজিত।

দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সতেরো বছরের ছেলে আর স্ত্রী রয়েছেন বাড়িতে। ছেলের মাথার যন্ত্রণার নিয়মিত চিকিৎসায় মাসিক হাজার চারেক টাকা খরচ হয়। অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর মাস পারিশ্রমিক থেকে ছেলের ওষুধের খরচ মেটাতে পারলেও, ছেলের মাথা ব্যথার সময় পাশে থাকতে না পারার খেদ রয়েছে তাঁর।

তাঁর স্ত্রী নয়ন কর্মকারও বলেন, ‘‘উনি ভাল একটা কাজ করছেন। সে জন্য গর্ব হয়। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে চিন্তা যাওয়ার নয়।’’

অজিতবাবুর কাছে গাড়ি চালানো শিখেছেন এবং অ্যাম্বুল্যান্সের কাজেও তাঁকে সাহায্য করেন স্থানীয় যুবক গোপাল চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির চিন্তা থাকলেও কাজের ব্যাপারে সব সময় ১০০ শতাংশ দেন অজিতদা। ওঁকে দেখে মনে জোর পাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy