বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’ থেকে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দিলেন অমর্ত্য। তার আগে জমি বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন নোবেলজয়ী। — ফাইল ছবি।
বাবার নামে থাকা জমি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁরই প্রাপ্য। এ নিয়ে কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই। যদি কোনও প্রশ্ন থাকে, তবে তা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে করা হোক। বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতন থেকে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে এমনটাই জানালেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। এক দিন আগে বিশ্বভারতীর সমালোচকদের ‘বুড়ো খোকা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। অমর্ত্য সে বলও উপাচার্যের কোর্টে ঠেলেছেন।
অমর্ত্যের সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের জমি নিয়ে বিবাদ তুঙ্গে পৌঁছেছে। বিষয়টি নিয়ে অমর্ত্যের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে এসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিরুদ্ধে অমর্ত্যের উদ্দেশে একাধিক বার কটু মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। সেই আবহেই বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’ থেকে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দিলেন অমর্ত্য। প্রথমে তিনি পৌঁছবেন মুম্বইয়ে। সেখান থেকে শুক্রবার আমেরিকাগামী বিমান ধরবেন। প্রতীচী থেকে বার হওয়ার সময় তিনি জানান, জমি নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর তিনি দেবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘(জমি নিয়ে) কোনও প্রশ্ন থাকলে উপাচার্য কে করুন!’’ তিনি কি বিষয়টিতে ব্যথিত? অমর্ত্য বলেন, ‘‘মনে ব্যথার অবকাশ কই? তাঁরা (বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ) যে হেনস্থা করছেন, সেটা বোঝার বিষয়েও জ্ঞানহীন।’’
অমর্ত্যের মতে, উত্তরাধিকার সূত্রে শান্তিনিকেতনের ওই জমির মালিক তিনিই। এ নিয়ে নতুন করে মীমাংসার প্রয়োজন নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কেন অমীমাংসিত থাকবে? জমি আমার বাবার নামে ছিল। এখন জমি আমার নামে হওয়া উচিত। এটায় না করার কোনও কারণ ছিল না। আমার বাবার উইলে লেখা যে, ওঁর জীবন যখন শেষ হবে, সেটা আমার মায়ের কাছে যাবে। সেখান থেকে আমার কাছে আসবে। এতে তর্কাতর্কির কিছু নেই।’’
বিশ্বভারতীর সমালোচকদের বুধবার ‘বুড়ো খোকা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন বিদ্যুৎ। তিনি কারও নাম করেননি। তবে নিশানায় যে নোবেলজয়ী অমর্ত্যও ছিলেন, তা এক প্রকার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখানে অনেক অশিক্ষিত এবং অল্পশিক্ষিত মানুষেরা রয়েছেন, যাঁরা নিজেদের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য শব্দবাণের দ্বারা বিশ্বভারতীকে কলুষিত করে যাচ্ছেন। আমি বলি এঁরা বুড়ো খোকা। বুড়ো বয়সে মানুষের ভারসাম্য হয়তো নষ্ট হয়, সেই জন্যই বোধ হয়। কারণ বিশ্বভারতীর কোনও কাজে তাঁদের পাওয়া যায় না। কিন্তু তাঁরা প্রতিনিয়ত বিশ্বভারতীর সমালোচনা করতে উৎসুক।’’ বিদ্যুতের সংযোজন, ‘‘সেই বুড়ো খোকাদের জন্য এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমি প্রস্তাবনায় কিছু কিছু শব্দের ব্যাখ্যা করি। যে ব্যাখ্যা আমার নয়। এই ব্যাখ্যার ভিত্তি গুরুদেবের লেখা। অর্থাৎ আমি এটাই বলতে চাইছি, যাঁরা বক্তৃতা করেন বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে, তাঁদের পড়াশোনার ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।’’ বিদ্যুতের এই মন্তব্য নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন প্রবীণ আশ্রমিকেরা। উপাচার্যের ‘বুড়ো খোকা’ মন্তব্য প্রসঙ্গে অমর্ত্যের দাবি, কোন কথার কী মানে, সেটা বলার সময় ভেবে দেখতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের বাক্য উপাচার্য যদি পছন্দ করেন, তা হলে তিনিই জানেন। উনি এগুলি বলছেন ঠিকই, কিন্তু তার কতটা মানে রয়েছে, সেটাও তো ওঁকে দেখতে হবে।’’
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর জমি দখল করে রয়েছেন। প্রয়োজনে রাজ্য ভূমি সংস্কারের তরফে নিয়ম মেনে বিশ্বভারতীর প্রতিনিধি, অমর্ত্য সেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে জমির মাপ নেওয়া হোক। তা হলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে অভিযোগপত্রও পাঠানো হয়। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং অমর্ত্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে অমর্ত্যের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিম্যাল জমি দখলের অভিযোগ করেন কর্তৃপক্ষ। জায়গা ফেরত চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয় ‘প্রতীচী’-র ঠিকানায়। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় অমর্ত্য জানালেন, উত্তরাধিকার সূত্রে বাড়ির মালিকানা শুধুই তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy