Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আবাস প্রকল্পে ‘সিন্ডিকেটের’ ছায়া, পোস্টার

সোনামুখীর পুরপ্রধান তৃণমূলের সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এমন কিছু উপভোক্তা আছেন, যাঁরা সরকারি টাকা খেয়ে-পরে নষ্ট করে দেবেন। তাই আমরা কাউন্সিলরদের বলেছি, যাতে বাড়ির টাকায় বাড়িই তৈরি হয়, সেটা দেখতে। তবে যদি কোনও উপভোক্তা নিজের বাড়ি নিজে করতে চান, তবে সরাসরি আমাকে বলুন। নিশ্চয়ই তিনি তা করতে পারবেন।’’

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সোনামুখী শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪০
Share: Save:

আবাস যোজনা প্রকল্পে উপভোক্তারই ঘর তৈরি করার নিয়ম। অথচ, সোনামুখী পুর-এলাকায় উপভোক্তার কাছ থেকে প্রকল্পের টাকা নিয়ে সে ঘর তৈরি করার নামে তৃণমূল নেতাদের একাংশ ‘সিন্ডিকেট’ চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার সকালে সোনামুখীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক জায়গায় পোস্টারও পড়ে। ৪ নম্বর ওয়ার্ড নাগরিকবৃন্দের নামে ওই পোস্টারে লেখা— ‘৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঘর নিয়ে তৃণমূল নেতাদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সমস্ত মানুষ এক হও’।
যদিও ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কাশীনাথ লোহার অভিযোগ মানতে চাননি। সোনামুখীর পুরপ্রধান তৃণমূলের সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এমন কিছু উপভোক্তা আছেন, যাঁরা সরকারি টাকা খেয়ে-পরে নষ্ট করে দেবেন। তাই আমরা কাউন্সিলরদের বলেছি, যাতে বাড়ির টাকায় বাড়িই তৈরি হয়, সেটা দেখতে। তবে যদি কোনও উপভোক্তা নিজের বাড়ি নিজে করতে চান, তবে সরাসরি আমাকে বলুন। নিশ্চয়ই তিনি তা করতে পারবেন।’’
যদিও উপভোক্তাদের একাংশ দাবি করছেন, কাউন্সিলরেরা বাড়ি তৈরির টাকা খরচের ব্যাপারে মাথা গলাতে পারেন না। বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস-ও বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে উপভোক্তা চাইলে নিজে অথবা পছন্দের কাউকে দিয়ে বাড়ি তৈরি করাতে পারেন। কিন্তু কোনও ঠিকাদার বা কেউ বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য জোরাজোরি করছে বলে অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সংসদীয় জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, ‘‘উপভোক্তাদের নিজেদেরই বাড়ি করার কথা। কাউন্সিলর বা জনপ্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে থেকে বড়জোর তদারকি করতে পারেন। কিন্তু প্রকল্পের টাকাপয়সার লেনদেনে কোনও ভাবেই তাঁরা যুক্ত হাতে পারেন না। দলেরও তেমনই নির্দ‌েশ। সোনামুখীতে কী হচ্ছে, আমি খোঁজ নিচ্ছি।’’
এ দিন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অন্য অভিজ্ঞতা হয়েছে। মনোহরতলার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ‘‘একটি মাত্র ঘরে ঠাসাঠাসি করে বাস করি। কিন্তু আবাস যোজনায় বাড়ি প্রাপকের তালিকায় নাম ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। ধারদেনা করে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। কিছু দিন আগে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকাও এসেছে। কিন্তু শুক্রবার রাতে শাসকদলের দু’জন নেতা এসে জানিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের পছন্দের লোককে দিয়েই বাড়ি করাতে হবে। আমি নিজে বাড়ি করব বলেছি। কিন্তু তাতে ওরা রাজি হননি। জানি না বাড়িটা আদৌ তৈরি হবে কি না।’’ তাঁর স্ত্রীর আক্ষেপ, ‘‘খড়ের ছাউনির উপরে পলিথিন দিয়ে কোনও রকমে আছি। বৃষ্টি পড়লে বাচ্চাদের কোলে নিয়ে রাত জেগে বসে থাকতে হয়। সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাব শুনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি বাড়ি পাওয়া খুব সহজ নয়।”
ওই ওয়ার্ডের আর এক মহিলা বলেন, ‘‘ছেলের নাম আবাস যোজনার তালিকায় উঠেছে। এখনও প্রকল্পের টাকা পাইনি। জানি না, আদৌ বাড়ি পাব কি না।’’ বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এখানে কেউ আবাস যোজনার বাড়ি নির্মাণ নিজে করলে তাঁর টাকা আটকে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের অবশ্য দাবি, ‘‘আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের কাউকে জোরাজোরি করার
প্রশ্নই নেই।’’
পোস্টার পড়ার পিছনে বিজেপির হাত দেখছেন তৃণমূলের পুরপ্রধান। তাঁর দাবি, ‘‘বিশৃঙ্খলা তৈরির মতলবেই বিজেপির ছেলেরা রাতের অন্ধকারে ওই ওয়ার্ডে মিথ্যা কথা লেখা পোস্টার সেঁটেছে। অভিযোগ থাকলে উপভোক্তারা সরাসরি আমাকে জানান। আড়াই মাস ধরে প্রকল্পের টাকা না আসায় অসুবিধা হচ্ছে উপভোক্তাদের।’’ বিজেপির বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক কোষাধ্যক্ষ পীযূষ গোস্বামীর পাল্টা দাবি, “প্রকল্পের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল এই পোস্টার সাঁটা। এর সঙ্গে বিজেপির কোনও
সম্পর্ক নেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

Awas Yojna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy