কুস্তাউরে অবরোধ তোলার কথা ঘোষণা করছেন অজিত। নিজস্ব চিত্র
অবরোধ প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো কুস্তাউর স্টেশন ছেড়ে চলে গেলেও রেললাইন থেকে সরলেন না আন্দোলনকারীদের একাংশ। বরং তাঁদের মধ্যে কয়েকজন অজিতের সামনেই জানিয়ে দিলেন, পাকাপাকি ভাবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অবরোধ তুলবেন না। অজিতের ছেড়ে যাওয়া মাইক ধরে তাঁরা অবরোধের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে গেলেন। যা দেখে অনেকের দাবি, এতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যদিও তাঁদের চেনেন না বলে দাবি করেছেন অজিত।
কুস্তাউর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের অজিত বলেন, ‘‘কুড়মি সমাজকে জনজাতির স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা পাঁচ দিন ধরে আন্দোলন করছিলাম। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ তুলে নিলাম। আমরা যাঁরা আদিবাসী কুড়মি সমাজ করি, তাঁরা বাড়ি যাচ্ছি। এরপরে নতুন আন্দোলনের জন্য আমরা তৈরি হব। যাঁরা অবরোধ তুলতে চাইছে না, তাঁদের সঙ্গে কোনও দিনই সম্পর্ক ছিল না। কোনও দিন দেখিনি। ওরা বিভ্রান্তি ছড়াতে এসেছে। বদমায়েসি করতে এসেছে। রবিবার থেকে ট্রেন চলবে। এদের কী হবে, তা পুলিশ বুঝবে।’’ ঘটনাচক্রে, এ দিনই সকালে স্টেশনের আশপাশে বিশেষ পুলিশ বাহিনীকে দেখা গিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে আদিবাসী কুড়মি সমাজ দাবি করে আসছিল, রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের চাহিদা মতো বিস্তারিত সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) রিপোর্ট পাঠাতে হবে। সেই রিপোর্টের প্রতিলিপি তাঁদেরও দিতে হবে। বৃহস্পতিবার সেই রিপোর্টের প্রতিলিপি দেখার পরে সন্ধ্যায় অজিত তাতে ভুল রয়েছে দাবি করে অবরোধ তুলবেন না বলে দাবি করেন।
এ দিন বেলায় জেলাশাসকের দফতরে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রধান সচিব সঞ্জয় বনশল, সিআরআই-এর এক কর্তা এবং পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক শুরু হয়। অজিতের সঙ্গে আসেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শশাঙ্কশেখর মাহাতো। ছিলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা, পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী এডিএম (সাধারণ) মুফতি সামিম শওকত, এডিএম (জেলা পরিষদ) আদিত্য বিক্রম এম হিরানি, এডিএম (উন্নয়ন) প্রণবকুমার ঘোষ।
সূত্রের খবর, অজিতের জিজ্ঞাসার জবাবে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের সচিব কুড়মি সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে ২০১৭ সাল থেকে রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, কেন্দ্রের উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রককে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবের স্বপক্ষে চিঠিতে কোন কোন বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করেন। কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে সিআরআই-এর পাশাপাশি নৃতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মাধ্যমেও সমীক্ষা করানো যেতে পারে।
আন্দোলনকারীদের তরফে দাবি তোলা হয়, রাজ্যের সুপারিশ যাতে কেন্দ্র নাকচ করে না দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আলোচনা করে রিপোর্ট তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সেখান থেকে বেরিয়ে অজিত বলেন, ‘‘এ দিন আমরা যা প্রশ্ন করেছি, জবাব পেয়েছি। ২০১৮ সালে দফতর একটি সদর্থক রিপোর্ট দিলেও তা আমাদের অজানা ছিল। সন্তোষজনক আলোচনার পরে আমরা অবরোধ তুলে নিচ্ছি। তবে আমাদের লড়াই জারি থাকবে। এরপরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে লড়াই চলবে।’’ তিনি জানান, পুজোর মুখে মানুষের সমস্যার কথাও তাঁরা ভেবে দেখেছেন।
সে কথা ছড়িয়ে পড়তেই আন্দোলনকারীদের একাংশের মধ্যে অবরোধ তুলবেন না বলে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। বিকেল ৫টায় অজিত অবরোধ তোলার কথা মাইকে ঘোষণা করতেই প্রতিবাদ করেন অবরোধকারীদের কয়েকজন। তর্ক-বিতর্ক হয়। অজিত বিরক্তি প্রকাশ করে সেখান থেকে চলে যান। অবরোধে অনড় থাকা যুবকদের একাংশের দাবি, খেমাশুলিতে অবরোধ চললে, এখানেও চলবে। সন্ধ্যা ফুরিয়ে রাত নামলেও রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম থেকে অবরোধকারীদের একাংশই সরেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy