নিতুড়িয়া ব্লক এলাকায় এই জমিতে কয়লাখনির করার বিরোধিতায় স্থানীয়রা।
খোলামুখ খনি তৈরি করতে চায় ইসিএল (ইস্টার্ন কোল্ডফিল্ডস লিমিটেড)। কিন্তু জমি দিতে নারাজ গ্রামবাসী। চাষজমি রক্ষার দাবিতে ‘জমিরক্ষা কমিটি’ গড়ে আন্দোলন শুরু করেছেন নিতুড়িয়া ব্লকের ভামুরিয়া ও শালতোড়া পঞ্চায়েতের ১০-১২টি গ্রামের বাসিন্দারা। মিছিল ও বিক্ষোভ সভা করে তারা জানিয়ে দিয়েছেন, খোলামুখ খনি তৈরির জন্য তাঁরা চাষের জমি ছাড়বেন না।
ইসিএল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার কয়লাখনি অঞ্চল নিতুড়িয়া ব্লকের ভামুরিয়া পঞ্চায়েতের গোঁসাইডি মৌজা ও শালতোড় পঞ্চায়েতের পারবেলিয়া মৌজায় কমবেশি ৩০০ একর জমি নিয়ে খোলামুখ খনি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সূত্রের দাবি, ওই খনি থেকে কমবেশি সাড়ে নয় লক্ষ টন কয়লা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী ইসিএল। এর মধ্যে সমীক্ষক পাঠানো হয়েছিল এলাকায়। তাঁদের কাছে বাসিন্দারা জানতে পারেন, কোন এলাকায় সেই খনি তৈরি করা হবে। দুই মৌজার বাসিন্দাদের নিয়ে খোলামুখ খনি তৈরির ব্যাপারে বৈঠকও করেছে ইসিএল। তারপরেই জমি রক্ষার দাবিতে কমিটি গড়ে এলাকায় শুরু হয়েছে আন্দোলন। স্থানীয় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা বিপ্লব মারান্ডি ওই কমিটির সম্পাদক। তবে তাঁর দাবি, জমি রক্ষার আন্দোলন দলের উদ্যোগে নয়, পুরোটাই হচ্ছে জমির মালিক ও জমির সঙ্গে যুক্ত লোকজনের উদ্যোগে।
বিপ্লবের দাবি, খোলামুখ খনি তৈরি হলে ভামুরিয়া পঞ্চায়েতের রানাবাড়ি, কামারকুলি, গোঁসাইডি, দেবীডাঙা, হ্যান্ডেল ধাওড়ার মতো গ্রামগুলি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে শালতোড় পঞ্চায়েতের লাইনধাওড়া, গোপালধাওড়া, চূড়ামণি, খুঁটিধাওড়ার মতো গ্রামগুলি। বিপ্লব বলেন, ‘‘ইসিএল প্রায় তিনশো একর জমি অধিগ্রহণ করতে চাইছে। কিন্তু দাম দিচ্ছে মাত্র ১৪ হাজার টাকা প্রতি ডেসিমেল। এর আগেও নিতুড়িয়া এলাকায় কয়লাখনি তৈরিতে জমি অধিগ্রহণ করেছে ইসিএল। কিন্তু অনেক জমি মালিক এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। তারপরে নতুন করে খোলামুখ খনির জন্য জমি দিতে চাইছেন না সব গ্রামেরই বাসিন্দা।’’
ওই গ্রামগুলির মধ্যে কয়েকটা আদিবাসী অধ্যুষিত। জমি রক্ষা কমিটির মধ্যে সেই সম্প্রদায়েরই লোকজন আছে বেশি মাত্রায়। কমিটির সভাপতি তথা গোঁসাইডির বাসিন্দা মনজুড়া মাঝি হেমব্রম বলেন, ‘‘খোলামুখ খনি তৈরিতে জমি দিতে নারাজ সকলেই। কারণ যে এলাকায় ওই খনি তৈরি হবে, তার পুরোটাই চাষের জমি। এলাকায় অন্য কোনও ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের কাছে চাষই একমাত্র ভরসা। খোলামুখ খনি তৈরি হলে চাষের সমস্ত জমিই নষ্ট হয়ে যাবে।” তাঁর দাবি, কয়লাখনিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয় ঠিকই। কিন্তু খোলামুখ খনিতে কয়েক বছরের মধ্যেই সমস্ত কয়লা তুলে চলে যায় সংস্থা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে সেই খনি। ফলে স্থায়ী কর্মসংস্থানের কোনও সুযোগই সেখানে নেই। কমিটির প্রশ্ন, স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে না যখন, তাহলে চাষের জমি নষ্ট করতে দেওয়া হবে কেন?
মূলত চাষের জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে বলেই খোলামুখ খনি তৈরিতে তাঁরা জমি দিতে নারাজ বলে জানাচ্ছেন হ্যান্ডেলধাওড়ার বাসিন্দা দিলীপ টুডু, গোঁসাইডির মহাদেব মারান্ডিরা। তাঁদের কথায়, ‘‘পুরুষানুক্রমে চাষই আমাদের মতো কয়েক হাজার বাসিন্দার একমাত্র ভরসা। খনি হলে সেই চাষের জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। কোনও ভাবেই জমি দিতে চাইছি না আমরা।”
তাহলে কী ভাবে খোলামুখ খনি তৈরি হবে? ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার অনিলকুমার সিংহ বলেন, ‘‘নিতুড়িয়াতে খোলামুখ খনি তৈরির পরিকল্পনা আছে। কিন্তু এর চাইতে বেশি কিছু এখন বলা সম্ভব নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy