ছবি: সংগৃহীত।
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইংরেজ আমলে তৈরি শতাব্দী প্রাচীন ‘টেরিটোরিয়াল আর্মি’ বা ‘টিএ’ ক্যাম্প। পুরুলিয়ার আদ্রায় মোহনপুর জঙ্গলের পাশে, ঐতিহ্যবাহী সেনাছাউনিটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে রেলমন্ত্রক। সূত্রের খবর, দেশের ছ’ জায়গায় বর্তমানে আছে ওই টিএ ক্যাম্প। তার মধ্যে তুলে দেওয়া হচ্ছে আদ্রা-সহ ঝাঁসি, কোটা, সেকেন্দ্রাবাদ ও চণ্ডীগড়ের ক্যাম্পগুলি। চালু থাকছে শুধু জামালপুরের টিএ ক্যাম্পটি।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কেএস আনন্দ বলেন, “টেরিটোরিয়াল আর্মি ক্যাম্পগুলি তুলে দেওয়ার বিষয়ে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও ‘ডিরেক্টর অফ টেরিটোরিয়াল আর্মি’-কে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কমিটি রেল মন্ত্রকের কাছে পাঁচটি সেনাছাউনি তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তার পরেই, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক।” সূত্রের খবর, গত ৩ জুন নির্দেশ জারি করেছে রেলমন্ত্রক। আগামী ন’মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হবে ক্যাম্পগুলি। রেলের এক আধিকারিক বলেন, “যুদ্ধকালীন বা অন্য কঠিন পরিস্থিতিতে যাতে রেল চলাচল ব্যাহত না হয়, সে লক্ষ্যেই রেলকর্মীদের সামরিক জীবনের সঙ্গে অভ্যস্ত করে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় টেরিটোরিয়াল আর্মি ক্যাম্পে।”
তবে শতাব্দীপ্রাচীন সেনাছাউনি বা ক্যাম্পটি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে খুশি নন আদ্রা শহরের বড় অংশের বাসিন্দারা। তাঁদের মত, টিএ ক্যাম্পের সঙ্গে বাসিন্দাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না-থাকলেও তা আদ্রার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। রেল-শহর হিসেবে আদ্রার গড়ে ওঠার ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা প্রাক্তন রেলকর্মী অনিল পাত্র জানান, আদ্রায় মোহনপুরা জঙ্গলের পাশে, ১৮৮৯ সাল নাগাদ ইংরেজরা তৈরি করেছিল সেনাছাউনিটি। পরে, ১৯০৪-এ তা বদলে যায় টেরিটোরিয়াল আর্মি ক্যাম্পে।
কেন তৈরি করা হয়েছিল সেনাছাউনিটি? অনিলবাবুর দাবি, এর পিছনে আছে সিপাহি বিদ্রাহের প্রভাব। ১৮৫৭-র ওই বিদ্রোহের প্রভাব পড়েছিল জঙ্গলমহল এলাকাতেও। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পঞ্চকোট রাজবংশের রাজা নীলমণি সিংহদেও। লুট করা হয়েছিল রঘুনাথপুরের ট্রেজারি। পরে, রাজাকে গ্রেফতার করেন ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন ওকস। অনিলবাবু বলেন, “সে সময়ে এলাকায় সেনাছাউনি বলতে ছিল অধুনা পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জে। কিন্তু সেখান থেকে পুরুলিয়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হওয়াতেই এই এলাকায় সেনাছাউনি তৈরির পরিকল্পনা করেছিল ব্রিটিশরা।”
পরে, আদ্রায় রেললাইন পাতার কাজ শুরু হয়। হিংস্র বন্য়প্রাণীতে ভরা জঙ্গল এলাকায় রেললাইন পাতার কাজে তৈরি হওয়া বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলাতেও সেনাছাউনি তৈরির প্রয়োজনীয়তা ছিল। অনিলবাবু বলেন, “এক দিকে, এলাকায় ব্রিটিশ-বিরোধী সংগ্রাম নিয়ন্ত্রণ, অন্য দিকে, রেললাইন পাতার কাজে তৈরি হওয়া সমস্যা মেটানো— মূলত দু’ কারণে তৈরি হয়েছিল সেনাছাউনিটি। পরে, যা বদলে যায় টেরিটোরিয়াল আর্মি ক্যাম্পে।” তিনি আরও জানান, পরবর্তী সময়ে সেনাছাউনির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় রেল কর্তৃপক্ষ। জল, বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে অন্য পরিষেবা দিত রেলই। “তবে টেরিটোরিয়াল আর্মি ক্যাম্প তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। আদ্রার একটা অধ্যায় শেষ হয়ে যাবে”, আক্ষেপ তাঁর।
সেনাছাউনি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে রেলকর্মী সংগঠন, ‘মেন্স কংগ্রেস’। সংগঠনের আদ্রার নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত রেলকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। টিএ ক্যাম্প তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও রেলের পক্ষে ক্ষতিরই হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy