এক কোদাল মাটি কাটা হয়নি। অথচ ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে চারটি পুকুর সংস্কার দেখিয়ে উঠে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা!
প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যেই দায়ের হওয়া ওই অভিযোগের মীমাংসা এখনও বাকি। তার মধ্যেই কালীপুজোর দিন ‘সংস্কার’ হওয়া একটি পুকুরেই কিছু জবকার্ডধারীদের কাজে লাগিয়ে অভিযোগের সত্যতা মুছে ফেলার অভিযোগ উঠল স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। আগের অভিযোগকারীদের বাধায় এবং বিষয়টি ফের প্রশাসনের নজরে আনায়, সে কাজ অবশ্য সম্পন্ন করা যায়নি। শনিবার সকালে দুবরাজপুরের গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের মেটেলাগ্রামের ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ১১ আসন বিশিষ্ট গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে মোট তিনটি সংসদ। ৭ নম্বর সংসদ এলাকায় থাকা বনশুলি হীড়, বদির হীড়, মালবাঁধ ও কালোমানিক নামে চারটি পুকুরের সংস্কার করা হয়েছে দেখিয়ে সরকারি প্রকল্পের টাকার কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণগোপাল মণ্ডল, রথীন মণ্ডলরা বলছেন, ‘‘কানাঘুষো শুনছিলাম, চারটি পুকুর সংস্কার হয়েছে। অনেক জবকার্ডধারী টাকাও নাকি পাচ্ছে। এটা জানার পরেই আমরা অবাক হয়ে যাই। যে পুকুর থেকে এক ছটাক মাটিও ওঠেনি, সেই পুকুর কাটার টাকা কীভাবে পাচ্ছে?’’ স্থানীয় বাসিন্দা দুঃখহরণ মণ্ডল, বাবলু মণ্ডলদের দাবি, ‘‘খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, জীবন মণ্ডল নামে যিনি এলাকার জব সুপারভাইজার, তার তত্ত্বাবধানেই গোটা ব্যাপারটা হয়েছে। এ নিয়ে পঞ্চায়েতকে প্রশ্ন গেলেও ঠিক উত্তর পাইনি।’’ শেষমেশ গত সেপ্টেম্বরে আরটিআই (তথ্য জানার অধিকার) করে তাঁরা জানতে পারেন, ওই চারটি পুকুর সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর পরেই তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। ঘটনার সত্যতা খুঁজতে বিডিও, জেলাশাসকের কাছে আবেদনও জানান।
এ দিন সকালে ঠিক কী হয়েছে?
অভিযোগকারীদের দাবি, তদন্ত এখনও বাকি। কিন্তু এ দিন সকালে সেই জীবনবাবুর নির্দেশেই জনা কুড়ি জবকার্ডধারী বনশুলিহীড়ে মাটি ‘ড্রেসিং’ করতে এসেছিল। রথীনবাবুরা সেই কাজেই বাধা দেন। কার নির্দেশে তাঁরা এই কাজ করতে এসেছে, মজুরদের সমস্ত বক্তব্য মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করেও তাঁরা রাখেন। খবর পাঠানো হয় বিডিও ও পঞ্চায়েত প্রধানকে।
দুবরাজপুরের বিডিও বনমালি রায় বলেন, ‘‘গ্রামের কিছু মানুষের কাছে ওই অভিযোগ পাওয়ার পরেই কাজ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। ওই কাজ নিয়ে আগেই একটা অভিযোগ রয়েছে। সেই তদন্ত এখনও চলছে। সেটা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোনও কাজ ওখানে হবে না।’’ তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাসও তিনি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত সুপারভাইজারের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান চন্দ্ররেখা বাউড়ি বলছেন, ‘‘ছুটির দিনে ওখানে কোনও কাজ হচ্ছিল বলে আমার জানা নেই।’’ আর অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান বলেন, ‘‘এখন ১০০ দিনের কাজ যেমন খুশি করা যায় না। কাজের চাহিদা, জবকার্ডধারীদের আবেদনের ভিত্তিতে নিয়ম মেনেই কাজ হয়। তাই কাজ না করে টাকা তোলার অভিযোগ ঠিক নয়। তবে হতে পারে, তুলনায় কম কাজ হয়েছে। আর প্রধান তো ফিল্ডে যান না। ওখানকার নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যও মাস্টাররোলে সই করেছেন।’’ যদিও রেখা মণ্ডল নামে ওই তৃণমূল সদস্যের দাবি, ‘‘ওই পুকুরগুলিতে কাজ হয়েছে বলে জানা নেই। আমি সইও করিনি।’’
কে ঠিক বলছেন, কে ভুল, আদৌ কারচুপি হয়েছে কিনা— উত্তর জানতে এখন প্রশাসনের তদন্তের দিকেই তাকিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে, অনেকেই আড়ালে দাবি করেছেন, ‘‘সব ঠিকঠাকই চলছিল। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে গন্ডগোলের জন্যই বিষয়টি সামনে এল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy