পুরুলিয়ার মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে টিকা নিতে লাইন। বজায় রইল না দূরত্ব। ছবি: সুজিত মাহাতো।
কারও একটু ভয়-ভয় ভাব, কেউ আবার খানিক উত্তেজিত। ১৫-১৮ বছর বয়সীদের টিকাকরণ কর্মসূচি শুরুর প্রথম দিনে নানা স্কুলে দেখা গেল পড়ুয়াদের এমনই মুখ। দিনের শেষে, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া দুই জেলাতেই টিকাকরণে ভাল সাড়া মিলেছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে কিছু স্কুলে টিকা নেওয়ার লাইনে দূরত্ববিধি না মানার অভিযোগ উঠেছে।
দুই জেলাতেই এ দিন প্রতি ব্লক ও পুরসভায় একটি করে স্কুলে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পীযূষকান্তি বেরা বলেন, ‘‘প্রথম দিন পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বিকেল ৪টে পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্টে ৬,৫০৩ জন টিকা নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।’’ পুরুলিয়ার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) বুদ্ধদেব মণ্ডল জানান, এ দিন জেলায় ৬,৬০৫ জন পড়ুয়া টিকা নিয়েছে। ঝালদা ২ ব্লকের একটি স্কুলে ৬৭৬ জন পড়ুয়া টিকা নিয়েছে, যা জেলায় সর্বোচ্চ। এ দিন সকালে পুরুলিয়ার নানা ব্লকে ‘সার্ভার’-এ সমস্যা হওয়ায় টিকাকরণের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। বেলায় সমস্যা মেটে।
এ দিন সকাল থেকে স্কুলে জড়ো হতে শুরু করে পড়ুয়ারা। লাইনে দূরত্ববিধি বজায় রাখতে শিক্ষকদের নজরদারি ছিল। তবু কিছু স্কুলে দুরত্ববিধি লঙ্ঘন হতে দেখা গিয়েছে। জয়পুরের চ্যাংডোবা স্কুলে পড়ুয়াদের গা ঘেঁষে দাঁড়াতে দেখা যায়। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিন্ময় কোনার বলেন, “আমরা দূরত্ববিধি মেনে চলার বিষয়ে সচেতন করছি।’’ বাঁকুড়ার বঙ্গ বিদ্যালয়ে এ দিন টিকাকরণে নজর রাখেন মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) সুশান্তকুমার ভক্ত। স্থানীয় বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা, পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অলকা সেন মজুমদার, ভাইস চেয়ারম্যান গৌতম দাসেরা পড়ুয়াদের উৎসাহ দিতে আসেন। ওই স্কুলের ছাত্রী চন্দ্রিমা কোনার, স্নেহা মাহাতোরা বলে, “আমাদের আগে বড়রা টিকা নিয়েছেন। তাঁদের দেখে সাহস পেয়েছি।’’ প্রধান শিক্ষক অনিমেষ চৌধুরী বলেন, ‘‘কিছু পড়ুয়া আগেই ১৮ বছর অতিক্রম করে যাওয়ায় বাইরে থেকে টিকা নিয়ে ফেলেছে। তাদের চিহ্নিত করা হবে।’’
বিষ্ণুপুর পরিমলদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের শিবিরে এ দিন উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত। ওই স্কুলের ছাত্রী বিউটি লোহার, লক্ষী মুর্মুরা বলে, ‘‘একটু ভয়ে ছিলাম। দিদিমণিরা নিজেদের অভিজ্ঞতা শুনিয়ে ভয় কাটিয়েছেন।’’ খাতড়া কংসাবতী শিশু বিদ্যালয়ের (মাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষক প্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভিড় এড়াতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কম পড়ুয়াকে ডেকেছিলাম। ধাপে-ধাপে সবাইকে টিকা দেওয়া হবে।’’ বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা হলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে জন্য প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।’’
পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রায় এক লক্ষ ৭০ হাজার কিশোর-কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) বুদ্ধদেববাবু জানান, জেলা শিক্ষা দফতরের তৈরি করা স্কুলের তালিকার পাশাপাশি, সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলিতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে টিকাকরনের ব্যবস্থা হবে। পুরুলিয়া জেলা স্কুল, রাষ্ট্রীয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সৈনিক স্কুলে এ দিন টিকাকরণ হয়েছে।
বিভিন্ন স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের পড়ুয়াদের ‘সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ’-এ টিকাকরণের বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকার পড়ুয়াদের কাছে খবর না পৌঁছলে কী হবে, সে প্রশ্নে নানা স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, চলতি সপ্তাহে আর এক দিন টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তার পরেও যদি কোনও পড়ুয়া টিকা নিতে না পারে, স্কুলের তরফে তাকে একটি প্রমাণপত্র দেওয়া হবে। সেটি দেখিয়ে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে টিকা নেওয়া যাবে। এ দিন মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকাপ্রাপক নয়, এমন বেশ কিছু পড়ুয়াও হাজির হয়েছে। স্কুল চত্বরে লম্বা লাইনে দূরত্ববিধি দেখা যায়নি। এসেছেন অভিভাবকদের অনেকেও। এক অভিভাবকের বক্তব্য, ‘‘টিকা দেওয়া হবে বলেই ছেলেকে এনেছি। না হলে এই পরিস্থিতিতে বাইরে না বেরোলেই ভাল হত।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক কল্যাণপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘কৌতুহলে হয়তো বাইরের অনেকে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিল। ভিতরে নিয়ম মেনেই টিকা দেওয়া হয়েছে।’’
স্কুলছুট বা জেলার বাইরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের টিকা দিতে বিভিন্ন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিশেষ কাউন্টার গড়া হয়েছিল। বাঁকুড়া ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেই কাউন্টার থেকে ৬০ জন ১৫-১৮ বছরের ছেলেমেয়ে টিকা নিয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেন বলেন, “প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’’ পুরুলিয়ার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, স্কুলছুটেরা স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজের কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy