E-Paper

মাতৃভাষা সাঁওতালিতে পড়াশোনায় ধাক্কা, ভাষা দিবসে চর্চা জেলায়

২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। ২০১১ সালে এ রাজ্যে সাঁওতালিকে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৬
Share
Save

আদিবাসী পড়ুয়াদের সমস্যা মাতৃভাষায় পাঠ দিতে ৮টি প্রাথমিক স্কুলে সাঁওতালি ভাষায় ও অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু পরিকাঠামোগত নানায় অসুবিধেয় অধিকাংশ স্কুলেই সেই উদ্যোগ ধাক্কা খেয়েছে। বুধবার, আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসে সেই সব সমস্যাই মেটানোর দাবি উঠল।

জেলা শিক্ষা দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল সমস্যা প্রাথমিকের পর স্কুলে ভর্তি হওয়া নিয়েই। কারণ একটিও আপার প্রাইমারি বা উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলে সেই সুযোগ নেই। সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি লিপি জানা শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব, সময়ে অলচিকি লিপিতে ছাপানো বই না পাওয়ার মতো নানা সমস্যায় পাঠদান বন্ধ। দু-একটি স্কুলে চালু থাকলেও আগ্রহ হারিয়েছে পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি এমন যে, অভিভাবকেরাই চাইছেন না তাঁদের সন্তানরা অলচিকি লিপিতে পাঠ নিক।

২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। ২০১১ সালে এ রাজ্যে সাঁওতালিকে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। সাঁওতালি মাধ্যমে পাঠে ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। হুট করে বাংলা মাধ্যম স্কুলে গিয়ে কিছু বুঝতে না পারায় সাঁওতালি পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুটের প্রবণতা বাড়ছে বলে প্রতিনিয়ত দাবি করে আসছিল আদিবাসী সামাজিক সংগঠনগুলি। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে জঙ্গলমহলের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার কয়েকশো বাংলা মাধ্যম স্কুলে সাঁওতালি মাধ্যম চালু করতে উদ্যোগী হয় তৃণমূল সরকার।

২০১৯ সালে ওই কর্মসূচিতে জুড়ে যায় বীরভূমও। উদ্যোগী হন তৎকালীন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু সব সেখানে পড়ুয়াদের ৯৫ শতাংশের বেশি পড়ুয়াই আদিবাসী ও অন্য দিক খতিয়ে দেখে যে ৮টি স্কুল নির্বাচিত হয়েছিল সেই তালিকায় মহম্মদবাজারের তিনটি স্কুল, সাঁইথিয়ার দু’টি, ইলামবাজারের দু’টি ও খয়রাশোলের একটি স্কুল ছিল। অনুমোদন দেয় রাজ্য শিক্ষা দফতর। সে বছর জানুয়ারিতে ওই স্কুলগুলির প্রি-প্রাইমারি ও প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য অলচিকি লিপিতে ছাপানো বই পৌঁছে গিয়েছিল। খুশি হয় আদিবাসী সমাজ। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

মহম্মদবাজারের উসকা সাঁওতাল প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তুলসীবোনা প্রাথমিক বিদ্যালয় অলচিকিতে পাঠ ছেড়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা মাধ্যমে ফিরেছে। উসকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পিন্টু মুর্মু, যিনি এই মুহূর্তে তুলসীবোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক হিসেবে ডেপুটেশনে রয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘এই শিক্ষাবর্ষ থেকে অভিভাবকদের দাবি মেনেই সেটা হয়েছে। কারণ এর পরে বাচ্চাগুলো পড়বে কোথায়?’’

সাঁইথিয়ার দেরিয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাইহাট প্রাইমারি স্কুলে অবশ্য অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠন চালু রয়েছে। তবে অধিকাংশ পড়ুয়া পড়ছে বাংলা মাধ্যমে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল্লা হিল কাফি বলেন, ‘‘৮০ জনের মধ্যে ১০-১২ জন পড়ুয়া সাঁওতালি মাধ্যমে পড়ছে। আমার স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি রয়েছে। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে তাদের বাংলা মাধ্যমেই ভর্তি হতে হবে। উৎসাহ কমছে সে কারণে। একার পক্ষে ছটি ক্লাসের বাচ্চাদের সঠিকভাবে শেখানো সম্ভব নয়। বইপত্রও সময়ে মেলে না।’’ খয়রাশোলের যাদবপুর সাঁওতাল প্রাথমিক বিদ্যালয়েও অলচিকিতে পঠনপাঠন থেমে গিয়েছে অনেক আগে। প্রধান শিক্ষক তপন পাল বলছেন, ‘‘একজন অলচিকি লিপি জানা শিক্ষককে ডেপুটেশনে দেওয়া হয়েছিল। কোভিডের সময় তুলে নেওয়া হয়। তারপর থেকেই সেটা বন্ধ। তবে পড়ুয়াদের সমস্যা মেটাতে আমরা সাঁওতালি কথ্য ভাষা শিখেছি।’’

একটু ব্যতিক্রম মহম্মদবাজারের ভাঁড়কাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের আগয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে অলচিকিতে পঠনপাঠন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক চন্দন লেট। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্কুলে ৫৮ জন পড়ুয়া। এ বার আট জন পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল। তাদের নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের আবাসিক স্কুলে (সাঁওতালি মাধ্যম) ভর্তি করিয়েছি। তবে সকলের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়।’’

জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) সমরেন্দ্র সাঁতরা সমস্যার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলে কেন অলচিকিতে পঠনপাঠনের পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’’ বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) চন্দ্রশেখর জাউলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করার আগে আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Santhali Language Ol Chiki Script

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।