মথুরাপুর থেকে গ্রেফতার অভিযুক্ত
পুলিশের নজর এড়িয়ে গত আট বছরে বারবার ভাড়া বাড়ি বদলেও লাভ হল না। ২০১৪ সালে জয়পুর থানার গেলিয়া গ্রামে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় এ বার গ্রেফতার হলেন অন্যতম অভিযুক্ত অনিতা চট্টোপাধ্যায়। গত ২৯ অগস্ট দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর থেকে অনিতার স্বামী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার পর থেকেই খোঁজ চলছিল অনিতার। তক্কে তক্কে থেকে মথুরাপুর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে অনিতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার তাঁকে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করায় জয়পুর থানার পুলিশ। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ফের অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল জোড়া খুনের ঘটনার নৃশংসতায় কার্যত শিউরে ওঠে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার গেলিয়া গ্রাম। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে নিজের ভ্রাতৃবধূ মমতা চট্টোপাধ্যায় ও দেড় বছরের ভাইঝি অনন্যাকে নৃশংস ভাবে খুন করে বাড়ির উঠানে মাটি চাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রী অনিতার বিরুদ্ধে। খুনের ঘটনা জানাজানি হতেই ধরা পড়ার ভয়ে নিজের তিন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গা ঢাকা দেন তাঁরা। গত আট বছর ধরে পুলিশ চেষ্টা করেও তাঁদের খোঁজ পায়নি। সম্প্রতি সূত্র মারফত পুলিশ খবর পায়, অভিযুক্ত প্রদীপ নাম ভাঁড়িয়ে মথুরাপুরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে দিব্যি ভাড়া বাড়িতে জীবন কাটাচ্ছেন। সেখান থেকে প্রদীপকে পাকড়াও করলেও অনিতা অধরাই ছিলেন। প্রদীপকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করে ও সূত্র কাজে লাগিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মথুরাপুর এলাকা থেকেই অনিতাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, মথুরাপুরে রাজমিস্ত্রির কাজ বেছে নেন প্রদীপ। অনিতা একাধিক নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করছিলেন। দিনের বেলায় প্রদীপ যখন কাজে যেতেন, তখন দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকতেন অনিতা। সন্ধ্যায় প্রদীপ বাড়িতে ফিরলে কলকাতায় যেতেন তিনি। সেখানে কখনও নার্সিংহোমে, আবার কখনও অন্যের বাড়িতে আয়ার কাজ করতেন। পুলিশের চোখে পড়ার ভয়ে কখনই মথুরাপুরে এক জায়গায় বেশি দিন থাকতেন না তাঁরা। ঘন ঘন বদল হত ভাড়াবাড়ি। মেয়েদেরও সে ভাবে বাইরের লোকেদের সঙ্গে মিশতে দিতেন না তাঁরা। এত সব কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হল না।
তদন্তকারীদের থেকে জানা গিয়েছে, মথুরাপুরের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে সম্প্রতি দুই মেয়েকে নিয়ে কাকদ্বীপের দিকে চলে যান অনিতা। স্বামী ধরা পড়ার পর সম্ভবত সেখানে বাড়ি ভাড়া নিয়ে গা ঢাকা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মথুরাপুরের পুরনো ভাড়া বাড়িতে ফিরতে হয় তাঁকে। আর সেই ফেরাই কাল হল। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘জোড়া খুনের ঘটনায় আগেই প্রদীপ ও অনিতার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। প্রদীপ কয়েক দিন আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। এ বার অনিতাও গ্রেফতার হলেন। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ফের তাঁদের আদালতে হাজির করানো হবে।’’
নিহত মমতার স্বামী সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার দাদা ও বৌদি আমার স্ত্রী ও মাত্র দেড় বছরের কন্যাকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে। এটা ভাবলে আজও আমি শিউরে উঠি। দীর্ঘ আট বছর কেটে যাওয়ার পরও অভিযুক্তেরা গ্রেফতার না-হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম আর কোনও দিনই তাঁরা ধরা পড়বেন না। এখন ওই দু’জনের একমাত্র মৃত্যুদণ্ড দিলে আমার বুকের জ্বালা জুড়োবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy