বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পরে তৃণমূলের উচ্ছ্বাসের নানা মুহূর্ত।
হকি থেকে ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট থেকে ফুটবল— এ বার পুরভোটে সব খেলাই হবে বলে হেঁয়ালি করে বলেছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বিরোধী শিবিরের সম্মিলীত অভিযোগ, সেই ‘খেলা’ খেলেই ভোটের ঢের আগে সাঁইথিয়ার পরে জেলা সদর সিউড়িতেও পুরসভার বোর্ড গঠন পাকা করে ফেলেছে তৃণমূল!
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের প্রথম দিন, শুক্রবার ২১ ওয়ার্ডের সিউড়ি পুরসভায় ১৫টি আসন থেকে সমস্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিরোধীদলের প্রতিনিধিরা। বোর্ড গঠন পাকা না হলেও একই পথে এগোচ্ছে দুবরাজপুরও। সূ্ত্রের খবর সিউড়ির ২১টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখনও বিরোধী প্রার্থী রয়েছেন ২, ৩, ৪, ১১, ১২ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। বাকি সব ওয়ার্ডের বিরোধী প্রার্থীরা (নির্দল সহ) পুরভোটের লড়াই থেকে সরে গেলেন। সেই তালিকায় রয়েছেন সিউড়ির বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিজেপি প্রার্থী অনিল বাগদি (২০ নম্বর), ওমপ্রকাশ তিওয়ারি (১৭), পথিক দাস(১৫), গৌতম দেবনাথ (১৩), অপর্ণা দাস(১৬)-সহ ১৩ জন। শেষ জন তো শাসকদলে যোগও দিয়েছেন। এ ছাড়া কংগ্রেসের সুদীপ বিষ্ণু, শেখ ফিলিপ-সহ চার প্রার্থী, চার জন বাম এবং নির্দল প্রার্থীও সরে দাঁড়িয়েছেন।
সাঁইথিয়া, সিউড়ির পাশাপাশি দুবরাজপুর পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটি ইতিমধ্যেই বিরোধী-শূন্য হয়েছে। শুক্রবারই ৫ ,৮,৯, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৩ জন বিরোধী প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সেখানে কোনও ভোট হবে না। অন্য দিকে, বোলপুরের ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি বিরোধী-শূন্য । সেই তালিকায় রয়েছে১১, ১৩, ১৪, ১৭,১৮, ১৯, ২০ ও ২১। রামপুরহাটর পুরসভার ৪ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
আজ, শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে কী হয়, সেটা নিয়ে সংশয়ে বিরোধীরা। তবে তাঁদের আশা, ‘চাপ’ সামলে বোলপুর ও রামপুরহাটে হয়তো লড়াই হবে। যাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন, তাঁদের অধিকাংশই স্বেচ্ছায় কিংবা পারিবারিক সমস্যার কথা তুলে ধরলেও সিউড়ির এক বিজেপি প্রার্থী নাম না-প্রকাশ করার শর্তে বললেন, ‘‘শহর জুড়ে কী চলেছে, সেটা সবাই জানেন। নিজের নিরাপত্তার জন্য সরে গেলাম।’’
বাম-বিজেপি-কংগ্রেস একযোগে অভিযোগ করেছে, তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে সম্ভাব্য সব কৌশল কাজে লাগানো হয়েছে। কারও ক্ষেত্রে অনুরোধ, কারও ক্ষেত্রে টোপ, কারও কারও কারও ক্ষেত্রে শাসানি কিংবা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকির মতো দাওয়াই প্রয়োগ করা হয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিরোধী শিবির চরম ক্ষুব্ধ।
জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘কেউ কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বলতে পারব না। কিন্তু মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ উঠে এসেছে, সেগুলির প্রত্যেকটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।’’
যদি প্রশাসনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিরোধীরা। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা এ দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘এত সন্ত্রাসেও প্রশাসনের কোনও সাহায্য আমরা পাইনি। প্রাণ ও সম্মান বাঁচাতে তাই প্রার্থীদের লড়াইয়ে রাখার ঝুঁকি নিইনি।’’ পুর-নির্বাচনে আদৌ বিজেপি থাকবে কি না, সেটা শনিবার ঘোষণা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন ধ্রুব। প্রায় একই সুর কংগ্রেস জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদের। তিনি বলছেন, ‘‘কী পরিস্থিতি তৈরি করেছে রাজ্য সরকার গণতান্ত্রিক দেশে এ বার ভোটদানের জন্য, মানুষই ভেবে দেখুন। ভোটে লড়ার অধিকার পেতেও আমাদের সংগ্রাম করে হবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের মন্তব্য, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে এ রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। পুরভোটেও তার প্রতিফলন দেখলাম। সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা কষ্টসাধ্য।’’
বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় যদিও বলছেন, ‘‘বিরোধী দলের কে প্রার্থী থাকবেন, কে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন, তার দায় কি শাসকদল নেবে? যাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy