তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বিরোধীরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন। এ বার কর্মীদের মুখেও সেই একই অভিযোগ শুনলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলায় বিজেপিকে মানুষ কেন ভোট দিয়েছিলেন— সোমবার রাতে বিষ্ণুপুরের অধিবেশন মঞ্চে বুথ সভাপতিদের কাছে তা জানতে চান অভিষেক। এক বুথ সভাপতি বলে ওঠেন, “গতবার পঞ্চায়েত ভোট হয়নি বলে মানুষ ক্ষোভে ভোট দিয়েছে বিজেপিকে।” আরও অনেকেই পঞ্চায়েত ভোট না হওয়াকেই লোকসভায় তৃণমূলের এই জেলায় পরাজয়ের কারণ হিসেবে তুলে ধরেন। বুথ সভাপতিদের কাছ থেকে একের পর এক অস্বস্তিকর উত্তর আসায় অধিবেশন মঞ্চে মেজাজ হারান অভিষেক।
এ নিয়ে সরগরম জেলা রাজনীতি। ঘটনা হল, পাঁচ বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বাঁকুড়া ও খাতড়া মহকুমার বেশ কিছু আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারলেও বিষ্ণুপুর মহকুমার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় তৃণমূল। বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। মনোনয়ন পর্বের গোড়ায় রানিবাঁধে খুন হন বিজেপি কর্মী অজিত মু্র্মু। তারপরে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে এই জেলায় তৃণমূলের ফল খারাপ হয়। বিরোধীরা দাবি করেছিলেন, পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না পারার ক্ষোভেই মানুষ তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।
বিরোধীদের দাবি, এ বার অভিষেকের সামনে সেই সত্যিটা এনে তৃণমূলের কর্মীরা তাঁদের এতদিনের দাবিকে মান্যতা দিলেন। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহের দাবি, ‘‘বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েতের লক্ষ্যে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল তৃণমূল। সত্যিটা সামনে এসে পড়ায় অস্বস্তিতে মেজাজ হারান অভিষেক।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির দাবি, ‘‘আজও ভুলতে পারি না, দলের কেন্দ্রীয় নেতা, রাজ্য কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পঞ্চায়েতের প্রার্থীদের নিয়ে জেলাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা করতে যাচ্ছিলাম। কলার কাঁদি নিয়ে হেলমেটে মুখ ঢাকা তৃণমূলের গুন্ডারা আমাদের তাড়া করেছিল। তৃণমূলকে মানুষ ক্ষমা করেনি, করবেও না।’’ যদিও সে দাবি তৃণমূল নেতৃত্ব মানেন না।
অন্য জায়গার মতো সোমবার রাতে বিষ্ণুপুরের অধিবেশনেও অভিষেক দাবি করেন, জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনের বিচারে মানুষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু বুথ সভাপতিদের অনেকেই দাবি করেন, বিজেপি টাকা ছড়িয়ে ভোট নিয়েছে। কেউ বলেন, দলের কিছু নেতা গদ্দারি করে গোপনে বিজেপির হয়ে ভোট করিয়েছেন। কেউ দলের গোষ্ঠীদ্বনদ্বকে দায়ী করেন।
এরপরেই অভিষেক সুর চড়িয়ে বলেন, “আমি বলতে চাইছি, মানুষ নিজের অধিকারকে সামনে রেখে ভোট দেয়নি। তাহলে কোন বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে ভোট দিয়েছিল? আপনারা এত ঘোরাচ্ছেন, বিষয়বস্তুটাই বলতে পারছেন না!” তখন এক বুথ সভাপতিকে বলতে শোনা যায়, “কিছু বেকার যুবক বিপথে চালিত হয়েছিলেন।” আর এক বুথ সভাপতি বলে ওঠেন, “স্থায়ী সরকারের লক্ষ্যে মানুষ ভোট দিয়েছিল।” এরপর অভিষেক ফের বলেন, “আপনাদের কি মনে হয় না, রামমন্দির, ধর্ম এসবের প্রভাব ছিল?” এরপরে একাধিক বুথ সভাপতি এক সঙ্গে নানা কারণ বলতে শুরু করলে অভিষেক বলে ওঠেন, “এ বার চুপ করুন। অনেক বলেছেন, আমাকে বলতে দিন। না হলে আপনি এসে বলুন, আমি ওখানে গিয়ে বসছি।” তাঁর দাবি, “মানুষ নিজের অধিকারকে সামনে রেখে ভোট দেয়নি, মানুষ ধর্ম আর রামমন্দিরকে সামনে রেখে ভোট দিয়েছিল। তাই রাম মন্দির হলেও দেশে পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস অগ্নিমূল্য।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির দাবি, ‘‘ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে জড়ালে আখেরে তৃণমূল ও বিজেপি উভয়েরই লাভ।’’ বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহ দাবি করেন, ‘‘বুথ সভাপতিরা আসল সত্যিটা জানেন। তাই তৃণমূলের যুবরাজের সঙ্গে তাঁদের মতের মিল হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy