Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
violence

এনআরসি-র গুজবে চড়াও বাড়িতে

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ মহিলাদের আধুনিক ইন্টারনেট শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে দেশ জুড়ে ‘ইন্টারনেট সাথী’ প্রকল্প চালু হয়।

নলহাটির কুমারসন্ডা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নলহাটির কুমারসন্ডা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

তন্ময় দত্ত
নলহাটি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৩৩
Share: Save:

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ( সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে জেলায়। আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড সংশোধনীর জন্য দিকে দিকে লম্বা লাইন পড়ছে। নাগরিকত্ব ঘিরে সেই আতঙ্ক থেকেই ছড়াচ্ছে নানা গুজব। তেমনই গুজবের জেরে এক মহিলার বাড়িতে চড়াও হওয়ার উঠল গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে নলহাটি থানার কুমারসন্ডা গ্রামে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গ্রামের মহিলাদের ইন্টারনেটের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নামে ওই মহিলা সিএএ এবং এনআরসি-র জন্য তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, গ্রামবাসীদের ভয় অমূলক।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ মহিলাদের আধুনিক ইন্টারনেট শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে দেশ জুড়ে ‘ইন্টারনেট সাথী’ প্রকল্প চালু হয়। টাটা ট্রাস্টস ও গুগলের উদ্যোগে মহিলাদের জন্য এই ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রকল্প চালু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই প্রকল্পেরই অঙ্গ হিসেবে কুমারসন্ডা-সহ কিছু গ্রামের বাছাই করা কিছু মহিলাকে নলহাটি ১ ব্লকে দুই দিনের ইন্টারনেট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষিত মহিলারা আবার নিজেদের এলাকায় গিয়ে ১৫ থেকে ৪৫ বছরের সব মহিলাকে স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার পদ্ধতি শেখাচ্ছেন। ব্লক অফিসে সেই প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন কুমারসন্ডা গ্রামের বধূ দিলারা পরভীন। গুজবের জেরে তাঁর বাড়িতেই চড়াও হয়েছে জনতা।

দিলারা জানান, তিনি গত জুলাইয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সাইলমাইল, কুমারসন্ডা, সেনপাড়া ও সালিসন্ডা—এই চার গ্রামের ৭০০ জন মহিলাকে ছ’মাসের মধ্যে প্রশিক্ষিত করার জন্য তাঁকে বলা হয়। যাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রকল্পের শর্ত অনুসারে তাঁকে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। ফর্মে মহিলার নাম, ছবি, গ্রাম, বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখতে হয়। এত দিন কাজ করলেও কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি বলে দিলারার দাবি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই কাজে কোনও মহিলার থেকেই ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড নেওয়া হয়নি। অথচ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেউ বা কারা গুজব তোলে, আমি নাকি এনআরসির জন্য তথ্য তুলছি। গ্রামের কিছু মানুষ আমার বাড়িতে চড়াও হয়ে দরজায় লাথি মারতে শুরু করে। আমার স্বামী বেরিয়ে ওদের শান্ত করে। পঞ্চায়েত সদস্য ও বয়স্কদের বাড়ি গিয়ে সমস্ত সত্যি জানানো হয়।’’

রাতের মতো মিটে গেলেও শুক্রবার সকালে ফের গ্রামের কিছু পুরুষ-মহিলা তাঁর বাড়িতে চড়াও হন বলে দিলারার দাবি। তিনি বলেন, ‘‘আবার দরজায় লাথি মারে। আমাকে অশ্রাব্য কথা বলতে থাকে। পরিস্থিতি দেখে আমি থানায় এবং বিডিও-কে ফোন করে সব জানাই।’’ দুপুরের দিকে ব্লকের আধিকারিক ও নলহাটি থানার পুলিশ গ্রামে গিয়ে দিলারাকে উদ্ধার করে ব্লক অফিসে নিয়ে আসে। দিলারা বলেন, ‘‘ওদের কাছে আমি আমার সমস্ত নথি দেখিয়েছি।’’ গ্রামের বাসিন্দা হাসনেআরা বিবি, গুলসানা বিবিরা বলেন, “তিন মাস ধরে কাজ করছেন ওই মহিলা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোবাইল হাতে দিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছে। তাই আমাদের সন্দেহ হয় যে, এনআরসির জন্য সার্ভে করছে। গ্রামবাসীরা জানতে চেয়েছিলাম এই তথ্য কেন তুলেছিলেন।’’ কোনও রকম হেনস্থা করা হয়নি বলেও তাঁদের দাবি।

বিডিও (নলহাটি ২) হুমায়ুন চৌধুরী বলেন, “বেসরকারি সংস্থার হয়ে দিলারার মতো কয়েক জন কাজ করছেন। কিন্তু এখন যেহেতু এনআরসি নিয়ে একটা গণ্ডগোল চলছে, তাই মানুষ ভেবেছেন, সেই সংক্রান্ত সমীক্ষা হচ্ছে। গুজবের জন্যই এটা হয়েছে। আমরা গ্রামে গিয়ে মানুষকে সচেতন করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Violence NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE