দোকানে ব্যস্ত দীপক মাহাতো। — নিজস্ব চিত্র।
বছর পাঁচেক আগের কথা। পুরুলিয়া মফস্সল থানার শ্যামদাসডিহি বাসিন্দা দীপক মাহাতোর জীবন তখন বইছিল ভিন্ন খাতে। তিনি ছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র। দিন কাটত পড়াশোনায়। ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসত শেক্সপিয়র, কিটস, শেলি, বায়রনের কথা। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের জেরে সেই দীপক এখন চালান মুদিখানা। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন আপাতত শিকেয় তুলে, সাহিত্যের ছাত্র ঘুপচি দোকানে মেপে দেন চাল, ডাল, তেল, নুন।
পুরুলিয়ার শ্যামদাসডিহি গ্রামে বাড়ি দীপকের। বাড়ি বলতে মাটির দেওয়াল এবং খাপরার চাল। সেই বাড়ির পাশেই মাটির দেওয়াল এবং খাপরার চাল দিয়ে তৈরি দীপকের মুদিখানা দোকান। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষায় ইংরেজিতে এমএ করেছিলেন দীপক। পেয়েছিলেন প্রথম শ্রেণি। কিন্তু, চাকরি পাননি। ফলে এই মুদিখানাই এখন ভরসা দীপকের। নিত্যদিন সকাল থেকে সেই দোকানে চাল, ডাল, তেল, নুন, চানাচুর বিক্রিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দীপক। কেন করছেন এই কাজ? প্রশ্ন শুনে একটুও অবাক হলেন না দীপক। পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘‘আর কী করব বলুন?’’ বললেন, ‘‘পাঁচটা বছর কেটে গেল এমএ করে বসে আছি। বিএড করেছি। কিন্তু, একটা চাকরি জোটাতে পারছি না। বাবা ধার করে বিএড পড়িয়েছেন আমাকে। এখন কোনও মতে সেই দেনা তো শোধ করতে হবে।’’
শ্যামদাসডিহি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষক এবং শ্রমজীবী। দীপকের বাবা দুর্গাদাস মাহাতোরও রয়েছে সামান্য জমি। মা ফুনু মাহাতো বাড়িতে থাকেন। দীপকের দোকানেও যৎসামান্য জিনিসপত্রের আয়োজন। কত টাকা আয় হয় এই দোকান থেকে? দীপক জানালেন, দোকান থেকে দৈনিক প্রায় ২০০ টাকা উপার্জন হয়। এই আয়ে সংসার চালিয়ে কী করে দেনা শোধ করবেন? প্রশ্ন শুনে এক ঝটকায় নিজের প্রতি দিনের অভ্যাসটাও জানিয়ে দিলেন দীপক। বললেন, ‘‘ধার শোধ করব বলেই তো দিনের বেলা এই দোকান চালাই আর রাতে ছাত্র পড়াই।’’
ছোট থেকেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল দীপকের। বছর সাতাশের তরুণ বলেন, ‘‘শিক্ষক হব বলেই কষ্ট করে বিএড করেছিলাম। কিন্তু, দীর্ঘ দিন এসএসসি না হওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারিনি। জানি না আমার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে কি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy