নিজস্ব চিত্র
একটি কাঠের খুঁটিতে বাঁধা গরু। ধামসা, মাদলের শব্দে দড়ি ছেঁড়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছে খুঁটিতে বাঁধা গরু। হাতে চামড়ার টুকরো নিয়ে নাচতে নাচতে গরুর কাছে যাচ্ছেন যুবকেরা। গরুর শিং-এর গুঁতো খেয়ে একে একে ছিটকে পড়ছেন চার দিকে। আর চার দিকে গোল করে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য উপভোগ করছেন অসংখ্য মানুষ। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার সন্ধ্যায় এই দৃশ্য দেখা গেল বাঁকুড়ার নবজীবনপুর গ্রামে। শত শত বছরের রীতি ও পরম্পরা মেনে এই সময়ে নবজীবনপুর গ্রামের আদিবাসীরা মেতে ওঠেন এই উৎসবে। এর নাম ‘গরু খুটান’। সেই উৎসব হল এ বছরও।
কার্তিক মাসের অমাবস্যায় যখন দীপাবলি ও কালীপুজোর উৎসবে মাতোয়ারা গোটা বাংলা, তখন বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার আদিবাসী সাঁওতাল গ্রামগুলিতে পালিত হয় ‘সহরাই উৎসব’। কার্তিক মাসের অমাবস্যার দিনকে তাঁরা বলেন 'উম-মাহা' অর্থাৎ ‘জাগরণ’। এ দিন রাতভর গোয়ালে ‘আহিরা’ নামের বিশেষ এক ধরনের গান করে পোষ্য গবাদি পশুকে রাতভর জাগিয়ে রাখা হয়। প্রতিপদের দিনকে বলা হয় ‘জিল দাকা’ অর্থাৎ মাংস খাওয়ার দিন। এ দিন প্রতিটি আদিবাসী বাড়িতে মাংস রান্না করা হয়। বাড়িতে আসা আত্মীয় স্বজন সকলে মিলে জমিয়ে চলে খাওয়া দাওয়া। দ্বিতীয়ার দিনকে বলা হয় ‘গরু খুটান’। গ্রামের সব থেকে সবল গরুগুলি চিহ্নিত করে তাদের গায়ে খড়িমাটি দিয়ে এঁকে দেওয়া হয় আলপনা। শিংয়ে মাখানো হয় সর্ষের তেল। নতুন ধানের শিষ দিয়ে বুনে বিশেষ এক ধরনের মুকুট পরানো হয় গরুর মাথায়। এর পর গ্রামের সকলে মিলে গ্রাম সংলগ্ন মাঠে হাজির হয়ে শুরু করেন 'গরু খুটান'। আহিরা গানের তালে তালে ধামসা মাদল বাজিয়ে গরুকে উত্তেজিত করা হয়। যে খুঁটিতে গরুটি বাঁধা হয় তার মাথায় বাঁধা থাকে একটি ছাতা। সেই ছাতার সঙ্গে ঝুলতে থাকে লাড্ডু, বিস্কুট-সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার। গরুর সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে অসম লড়াই চলার পর সুযোগ বুঝে একজন উঠে পড়েন খুঁটির আগায়। ছাতা থেকে লোভনীয় খাবার পেড়ে তা মুখে পুরে ফেললে শেষ হয় খুটান পরব।
কিন্তু কেন এই ধরনের রীতি? নবজীবনপুর গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধেশ্বর হেমব্রম বলেন, ‘‘সহরাই আমাদের সমাজের সব থেকে বড় উৎসব। এই উৎসবের সব চেয়ে আকর্ষণীয় আচার গরু খুটান। আমন ধান মাঠ থেকে খামারে তুলে আনার ঠিক আগে গরু খুটানের মধ্যে দিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া হয় গবাদি পশুর শারীরিক সক্ষমতা। এই 'গরু খুটান'-এ গবাদি পশুরা যেমন আনন্দ পায়, তেমনই এই আচার আমাদের কাছে অন্যতম বিনোদন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy