Advertisement
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bridge collapse

শালি নদীর জলস্তর নামতেই ভেঙে পড়ল সেতুর একাংশ, বাঁকুড়ার সোনামুখীর ঘটনায় শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর

অগস্টের প্রথম সপ্তাহে ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে শালি নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেতে থাকায় নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল এলাকায়।

ভেঙে পড়ল ব্রিজ।

ভেঙে পড়ল ব্রিজ। নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ২৩:৪৪
Share: Save:

ঘূর্ণাবর্তের বৃষ্টি কমতেই নামতে শুরু করেছিল শালি নদীর জলস্তর। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। শুক্রবার সন্ধ্যায় শালী নদীর উপর থাকা রামপুর থেকে পিয়ারবেড়া যাওয়ার রাস্তায় থাকা সতীঘাট সেতুর একাংশ বিপজ্জনক ভাবে বসে যাওয়ায় ওই সেতু দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল চলাচল। এই সেতুর বেহাল দশা নিয়ে একে অপরকে বিঁধেছে বিজেপি ও তৃCমূল। নদীর জলস্তর আরও একটু নামলে বিকল্প ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছে বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন।

বাঁকুড়ার একাংশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শালি নদী সারা বছর নির্জলা থাকলেও ফি বছর বর্ষায় এই নদী ফুলেফেঁপে ওঠে। নদীর মাত্রাতিরিক্ত জলস্ফিতির জেরে কোনও কোনও বছর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় সোনামুখী ও পাত্রসায়ের ব্লকে। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে শালি নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেতে থাকায় নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল এলাকায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলতি সপ্তাহের শুরুতেই বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে শালি নদীর জল। চলতি বছর শালি নদীর দু’পাড়ের মানুষ বন্যার হাত থেকে বাঁচলেও শেষ রক্ষা হল না। সপ্তাহ দুই আগে সোনামুখী ব্লকের হামিরহাটির কাছে থাকা সতীঘাটের সেতু ধীরে ধীরে বসতে শুরু করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই সেতু একাধিক পিলার পুরোপুরি বসে যাওয়ায় সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ে। আর তাতেই বন্ধ হয়ে যায় শালি নদীর দু’পাড়ে থাকা কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনামুখী ব্লকের হামিরহাটির কাছে থাকা সতীঘাটের এই সেতু সোনামুখী ব্লকের হামিরহাটি, পিয়ারবেড়া ও ধুলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষের লাইফলাইন। প্রতিদিন স্কুল-কলেজ যাওয়া থেকে শুরু করে নিত্যদিনের বাজার হাট আনা, এমনকি হাসপাতাল যাতায়াত ও এলাকায় উৎপাদিত সবজি বাজারে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ওই ৪০টি গ্রামের মানুষের কাছে একমাত্র মাধ্যম ওই সেতু। আচমকাই সেতু ভেঙে পড়ায় আপাতত সোনামুখীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল ওই ৪০টি গ্রামের মানুষের। স্থানীয় বাসিন্দা বিমল পাল বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে বালি তোলার ফলেই সেতুটির ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়ে। সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণও হয়নি। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিতে সেই নড়বড়ে অংশ আরও বেহাল হয়ে ভেঙে পড়েছে। এর ফলে এলাকার ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম সমস্যার মুখে পড়ে গিয়েছি। দ্রুত নতুন সেতু তৈরি না হলে এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়বে।’’

শুক্রবার সন্ধ্যায় সেতুটি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়ার পর শনিবার সকালে পৃথক পৃথক ভাবে এলাকায় যান স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি থেকে শুরু করে সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। সেতুটি ভেঙে পড়ার জন্য তৃণমূলকে কাঠগোড়ায় তুলেছেন বিজেপি বিধায়ক দিবাকর। বিধায়ক বলেন, ‘‘সেতুটি তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। ওই সেতু দিয়ে বহু যান চলাচলও করে। সেতুটি বেশ কিছু দিন ধরে বেহাল হয়ে পড়লেও প্রশাসন মেরামত করতে এগিয়ে আসেনি। উপরন্তু সেতুর গোড়া থেকে দিনের পর দিন তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মদতে বালি চুরি হওয়ায় সেতুটি ভেঙে পড়েছে। দ্রুত ওই স্থানে নতুন সেতু না হলে আমরা লাগাতার আন্দোলনে শুরু করব।’’ স্থানীয় হামিরহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জয়রাম পাল বলেন, ‘‘বালি চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় মেরামতির কাজ সময় মতো না হওয়া এবং অতি বৃষ্টির কারণেই সেতুটির এমন অবস্থা হয়েছে।’’ সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় সেতু সরেজমিনে দেখে বলেন, ‘‘এই সেতুর স্বাস্থ্য দেখার কাজ আমাদের নয়। তবে আমাদের ধারণা শালি নদীর প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া জলে সেতুর ভিতের নীচের মাটি ধুয়ে যাওয়াতেই এই সমস্যা হয়েছে। এত বড় সেতু নতুন করে তৈরির আর্থিক ক্ষমতা পঞ্চায়েত সমিতির নেই। কিন্তু আমরা দ্রুত নদী পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা করছি। আপাতত নৌকা অথবা ভাসমান কাঠের সেতু তৈরি করে দেওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে"। বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই সেতু ৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। সপ্তাহ দুই আগে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছিলেন সেতুটি মেরামতি করে কোনও লাভ হবে না। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেতুটির একাংশ ভেঙে গিয়েছে। বিপদের আশঙ্কায় ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই জায়গায় নতুন সেতু তৈরির জন্য জেলাশাসক বিষয়টি রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bridge collapse bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE