বড়জোড়ার স্টার ক্লাবের মণ্ডপে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতিটি ভ্রূণই সম্ভাবনার বীজ। তাই কন্যা ভ্রূণ হত্যা বন্ধের বার্তা দিয়ে সমাজে সচেতনতা ছড়ানোর চেষ্টা করল বাঁকুড়ার বড়জোড়ার একটি জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি। সেই সঙ্গে উপযুক্ত সুযোগ পেলে মেয়েরা যে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সফল হতে পারেন, তা মণ্ডপে বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরেছে বড়জোড়ার স্টার ক্লাব। জগদ্ধাত্রী পুজোয় এ বার নজর কেড়েছে তাদের ‘থিম’।
ইউএসজি-তে গর্ভের সন্তান কন্যা বলে চিহ্নিত হলে একসময়ে অনেক পরিবার সেই ভ্রূণ নষ্ট করে দিত। পরে আইন করে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ নিষিদ্ধ করা হয়। তবুও কোনও কোনও পরিবার এখনও ইউএসজি করাতে গিয়ে ভ্রূণের লিঙ্গ জানতে চান। সেই ভাবনা দূর করতেই পুজো কমিটির ওই থিম।
এখানে মণ্ডপের দু’দিকে মাটির মডেলের মাধ্যমে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে, তা জানতে গোপনে আলট্রাসাউন্ড করানোর দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। পাশেই রয়েছে কন্যা ভ্রূণ নষ্ট করতে চিকিৎসকের কাছে আকুতি।
মণ্ডপ দেখতে আসা হাটআশুড়িয়ার সবিতাব্রত দত্ত বলেন, ‘‘কন্যা ভ্রূণ নষ্ট করতে চাওয়া মানুষদের মডেল মণ্ডপে দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। পরে দেখলাম উল্টো দিকে রয়েছে মেয়েদের সমান অধিকার দিলে, উচ্চশিক্ষিত করলে তারাও দশ জনের এক জন হয়ে ওঠে। মন ভরে গেল।’’
মণ্ডপের এক জায়গায় রয়েছে একটি কন্যা ভ্রূণের চার পাশে সফল ভারতীয় মহিলাদের ছবি। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষকে বার্তা দিতে মেয়েদের জন্য কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, রূপশ্রী এমন কী কী সরকারি প্রকল্প রয়েছে, তা-ও মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। সঠিক বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ে না দেওয়ার বার্তাও রয়েছে।
স্টার ক্লাব পুজো কমিটির সম্পাদক অসিত ঘোষ বলেন, ‘‘এই যুগেও কন্যা সন্তান জন্মানো অনেকেই আনন্দের সঙ্গে নেন না। অথচ সুযোগ পেলে মেয়েরাও পরিবারের গর্ব হয়ে উঠতে পারে। সমাজকে বার্তা দিতেই এই থিম।’’ পুজো কমিটির সভাপতি চন্দন কর জানান, মায়ের কাছে ছেলে-মেয়ে সবাই সমান। সেই বার্তা দিতে জগদ্ধাত্রী প্রতিমাও এ বার অন্যরকম করা হয়েছে। জগদ্ধাত্রী প্রতিমার সামনে ছেলেমেয়েদের নিয়ে রয়েছে মানবী রূপের দেবী দুর্গা।
এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক অতনু ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘দেশে বর্তমানে ১০০০ জন পুরুষের মধ্যে ৯৪০ জন মহিলা। এটা ভাল লক্ষণ নয়। পার্থক্য যত বেশি থাকে, সমাজে নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপও বাড়তে থাকে। ছেলেমেয়ে সমান এই মানসিকতা না তৈরি হলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতিও ব্যাহত হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy