কৃতি: সিউড়ির অনুষ্ঠানে শংসাপত্র হাতে করোনা-জয়ীরা। নিজস্ব চিত্র
করোনা আক্রান্ত হওয়ায় গ্রামবাসীরা বয়কট করেছিল। বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছিল জলের কল। চরম সমস্যার মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে পরিবার পরিজনদের। এখনও গ্রামের অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখেন। জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের কাছে সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন করোনা থেকে সেরে ওঠা এক বাসিন্দা। প্রশাসনের কর্তারা আশ্বাস দিলেন এমন যাতে না হয় তা রুখতে তাঁরা পদক্ষেপ করবেন। আক্রান্তদের মনোবল বাড়াতেও সুস্থ হয়ে ওঠা বাসিন্দাদের কাজে লাগানো হবে বলে জানাল প্রশাসন।
শনিবার করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা জেলার এমন বহু বাসিন্দা হাজির ছিলেন সিউড়িতে। প্রশাসনের উদ্যোগে জেলায় করোনা জয়ীদের নিয়ে গঠিত হল ‘কোভিড যোদ্ধা ক্লাব’। শনিবার সিউড়ির ডিআরডিসি হলে ক্লাব গঠন হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, লিশ সুপার শ্যাম সিংহ, বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রী আড়ি-সহ অন্যরা।
জেলা প্রশাসনের কর্তারা বক্তব্য রাখার পর করোনা জয়ীদের বলার সুযোগ দেওয়া হয়। সেই সময় নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের জানান সিউড়ি ১ ব্লকের তিলপাড়া পঞ্চায়েতের বাঁশজোড় গ্রামের ওই বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘আমার পরিবার চরম সমস্যার মধ্যে ছিল। আমার ছোট মেয়ে দু’দিন না খেয়ে ছিল। এখনও গ্রামের অনেকে আমাদের সন্দেহের চোখে দেখেন। আমি প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব আমরা যেন সমস্ত সুযোগসুবিধা পাই তার ব্যবস্থা করার জন্য।’’ এই অভিযোগ শোনার পরেই জেলাশাসক জানান যে, সিউড়ি থানার আইসি এবং বিডিও গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলবেন এবং সমস্যার সমাধান করবেন। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘আমরা এটা জানতাম না। আগামী দিনে আর এমন হবে না।"
তবে বাঁশজোড় গ্রামের বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, ওই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। গ্রামবাসীরা ওই দুঃস্থ পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, আক্রান্তের যখন গৃহ নিভৃতবাসের থাকার কথা ছিল তখন তিনি গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছেন। নিয়মিত আত্মীয় পরিজনদের বাড়ি গিয়েছেন। এমনকি যেদিন তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে সেদিনও তিনি বাইরে গিয়েছিলেন বলে দাবি গ্রামের অনেকের। তবে করোনা-আক্রান্তদের সঙ্গে অন্য বাসিন্দাদের কোনও রকম ভুল বোঝাবুঝি এড়াতেই এই ক্লাব কাজ করবে।
এ দিন পঞ্চাশ জনেরও বেশি করোনা থেকে সুস্থ হওয়া পুরুষ ও মহিলা ওই ক্লাবে নাম নথিভুক্ত করেন। করোনা যোদ্ধা হিসেবে তাঁদের একটি করে মানপত্র দেয় প্রশাসন। তাছাড়াও জেলা ও রাজ্যের যে কোনও কোভিড হাসপাতালে পরিষেবা প্রদান সংক্রান্ত পদে কর্মসংস্থানের দিশা দেখানো হয়। জেলাশাসক বলেন, ‘‘জেলায় আপাতত বোলপুর ও রামপুরহাট একটি করে কোভিড হাসপাতালে রয়েছে। সেখানেই জেলার করোনা জয়ীরা কাজের সুযোগ পাবেন। ইচ্ছুকরা ভিন জেলা বা কলকাতায় গিয়েও কাজ করতে পারবেন।’’
প্রসাসন সূত্রের খবর, চিকিৎসা সংক্রান্ত দক্ষতা লাগে এমন কাজ নয়, খাবার দেওয়া, ওয়ার্ডের টুকিটাকি কাজ, রোগীদের কাউন্সেলিংয়ের মতো কাজ এই তালিকায় রয়েছে। কোভিড হাসপাতালে কাজ করতে রাজি হয়েছেন অনেকেই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা কাজে করবেন তাঁদেরকে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ‘‘যাঁরা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাঁদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার কথা আক্রান্তদের বললে আক্রান্তদেরও মনোবল অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই এই পরিকল্পনা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy