Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Hura Ratha Yatra

৫৬ পদের রাজভোগে চলে জগন্নাথ সেবা

দ্বিপ্রহরে নির্ঘণ্ট মেনে প্রতি দিন ছাপ্পান্ন ভোগের আয়োজন থাকে তাতে, যার পোশাকি নাম রাজভোগ। কী নেই সেখানে?

উল্টো রথে ৫৬ ভোগ.পুরুলিয়ার হুড়ায়।

উল্টো রথে ৫৬ ভোগ.পুরুলিয়ার হুড়ায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হুড়া শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৫:২৮
Share: Save:

কাকভোরে, ঠিক সাড়ে ৪টেয় মঙ্গলারতি। ৭টায় দর্শনারতি, দুপুর ১২টায় ভোগ-আরতি আর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সন্ধ্যারতি। নিজগৃহ থেকে মাসির বাড়ি, রথযাত্রা থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত টানা ন’দিন এ ভাবে নিয়ম মেনে চলে জগন্নাথদেবের সেবা।

কথায় বলে, মামাবাড়ি ভারী মজা, কিল চড় নাই। জগন্নাথদেবের মাসির বাড়িতে কি তার অন্যথা হতে পারে! এখানেও ভারী মজার পরিবেশ রয়েছে, জানাচ্ছিলেন হুড়া সর্বজনীন রথযাত্রা কমিটির মুখপাত্র গৌতম কুণ্ডু। মন্দিরের প্রধান সেবক কমলনয়ন দাসের কথায়, “ইসকনের রীতি মেনে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পুরীতে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন প্রভু জগন্নাথকে ছাপ্পান্ন ভোগ নিবেদন করেছিলেন। সেই প্রথা মেনে এখানেও জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে ছাপ্পান্ন ভোগ নিবেদন করা হয়।” তিনি আরও জানান, ভোরে মঙ্গলারতির পরে বাল্যভোগ দেওয়ার প্রথা চলে আসছে। বাল্যভোগে থাকে ক্ষীর, মিষ্টি, আম, আপেল ও খেজুর। দর্শনারতির সময়ে জলখাবার নিবেদন করা হয়, জানাচ্ছিলেন হুড়া জগন্নাথ মন্দিরের পূজারী অচ্যুত রাজাগোপাল দাস। তাঁর কথায়, “লুচি, তরকারি, পনির, ডালনা, মিষ্টি, আম, লেবু ও পাকা কাঁঠাল থাকে দর্শনারতির জলখাবারে। রথযাত্রার দিন থেকে প্রতি দিনই এ ভাবেই সেবা চলে।”

তবে মূল আকর্ষণ মধ্যাহ্নভোজে। দ্বিপ্রহরে নির্ঘণ্ট মেনে প্রতি দিন ছাপ্পান্ন ভোগের আয়োজন থাকে তাতে, যার পোশাকি নাম রাজভোগ। কী নেই সেখানে? চার-পাঁচ রকমের স্যালাড, পাঁচ রকমের অন্ন, ধনেপাতা-বাঁধাকপি-আলু পকোড়া, বেগুনি, চার-পাঁচ রকম শাক, দু’ধরনের ডাল, আট-দশ রকম ভাজার সঙ্গে থাকে চার-পাঁচ রকমের তরকারিও। সঙ্গে টম্যাটো, আম ও পাঁচমিশেলি ফলের চাটনি। শেষপাতে জগন্নাথদেবের পছন্দের মিষ্টি গজা, মালপোয়া, রসগোল্লা, পরমান্ন, অমৃতি, হালুয়া ও বোঁদে ও রায়তা। একই ভাবে সন্ধ্যারতির পরেও লুচি, হালুয়া, সবজি ও নানা মিষ্টান্ন সহযোগে ভোগ অর্পণ করা হয়।

কমলনয়নের কথায়, “টানা ন’দিন মন্দিরে যেমন বিগ্রহের সেবা চলে, ভক্তেরাও প্রসাদ পান। পুরীর জগন্নাথদেবের রথের আদলে, ইসকনের নির্দেশে মায়াপুরে রথ তৈরি করা হয়েছিল। ফি বছর পুরী থেকে রথের লাল ধ্বজা নিয়ে আসা হয়। উল্টোরথের পরে তা জগন্নাথদেবের চরণে রাখা হয়।” চলতি বছরে হুড়ার রথযাত্রা নবম বর্ষে পদার্পণ করল জানিয়ে কমিটির সভাপতি নৃপেণ কর বলেন, “জেলার মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভক্তের ভিড় জমে এই হুড়াতেই।”

গৌতম জানাচ্ছিলেন, একদা পঞ্চকোট রাজবংশের রাজধানী ছিল হুড়ার কেশরগড়ে। সেখানে ধূমধাম করেই রথযাত্রা পালিত হত। আজ থেকে প্রায় দু’শতাব্দী আগে কেশরগড় থেকে রাজধানী কাশীপুরে সরে গেলে রথযাত্রাও বন্ধ হয়ে যায়। ন’বছর আগে হুড়ায় রথযাত্রা শুরু হয়েছে। কেশরগড়েও রথযাত্রা চলছে। সেই বছর থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত ৫৬ ভোগের আয়োজন করা হচ্ছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চার বেলা ভোগ রান্নার খুঁটিনাটি সামলানোর ঝক্কিও অনেক। কমিটির অন্যতম সদস্য শ্যামাপদ দত্ত বলেন, “প্রতিদিনই দিনভর ভোগ রান্না চলে। ইসকন মন্দির থেকে শুধু রান্নার জন্যই পাচকেরা উল্টোরথ পর্যন্ত এখানে থাকেন। কী ভাবে যে এত মানুষ সুষ্ঠু ভাবে প্রসাদ পান, বোঝাই যায় না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Ratha Yatra hura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy