Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coromandel Express accident

কাজের জন্য কেন ভিন্‌ রাজ্যে, দায় ঠেলাঠেলি

ঘটনা হল, একশো দিনের কাজ যেমন বন্ধ, তেমনই পুরুলিয়া জেলায় শিল্প প্রসারের গতিও শ্লথ। এ ছাড়াও কাজ যদি বা জোটে, তার মজুরি তুলনায় কম।

An image of the tragic incident

পাশে: সমীর বাউরির খোঁজ নেই। তাঁর অসুস্থ স্ত্রীর পাশে পরিজনেরা। ছবি: সঙ্গীত নাগ ও তারাশঙ্কর গুপ্ত।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ ০৯:২৮
Share: Save:

ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় পুরুলিয়া জেলার চার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিন শ্রমিক। ওড়িশা ও বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও পাঁচ শ্রমিক। তিন শ্রমিক অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরলেও দুর্ঘটনায় ভয়াবহ স্মৃতি টাটকা তাঁদের মনে। প্রশ্ন উঠেছে, এত শ্রমিকদের কেন এক-দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে ভিন্‌ রাজ্যে কাজের সন্ধানে যেতে হয়েছিল? এর দায় কার?

এ নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। শাসক দল তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে এ রাজ্যে প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ একশো দিনের প্রকল্পের কাজ। এলাকায় কাজ না পেয়েই শ্রমিকদের ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হচ্ছে। অন্য দিকে, বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এক যুগ ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের রাজ্য সরকার জেলায় শিল্প গড়তে পারেনি, সেচ ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারেনি। তাই শ্রমিকেরা পাড়ি দিচ্ছেন ভিন্‌ রাজ্যে। এই ঘটনার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়কেই দায়ী করছে সিপিএম।

ঘটনা হল, একশো দিনের কাজ যেমন বন্ধ, তেমনই পুরুলিয়া জেলায় শিল্প প্রসারের গতিও শ্লথ। এ ছাড়াও কাজ যদি বা জোটে, তার মজুরি তুলনায় কম। পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের থেকে অন্য রাজ্যগুলিতে, বিশেষত দক্ষিণ ভারতে মজুরি অনেক বেশি। সে কারণেই অনেক আগে থেকেই শ্রমিকদের একাংশ ভিন্‌ রাজ্যমুখী হয়েছেন।

কাশীপুরের চাকলতা গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক কৈলাস মাহাতোর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। তাঁর ছেলে প্রদীপ মাহাতোও রাজমিস্ত্রির কাজে অন্য রাজ্যে যান। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার মজুরিতে পোষায় না। দক্ষিণে একই কাজের মজুরি দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ বেশি।’’ আবার ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে ছেলের খোঁজ করা রঘুনাথপুরের অজিত বাউরি জানাচ্ছেন, তাঁর ছেলে সমীর এলাকাতেই দিনমজুরি ও একশো দিনের কাজ করতেন। একশো দিনের কাজ বন্ধ হওয়াতেই তিনি ভিন্‌ রাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, করোনায় লকডাউনে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে কাজ দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু গত দু’বছর ধরে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে একশো দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার। সে কারণেই আরও বেশি শ্রমিককে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়া জেলায় কমবেশি ৩০ হাজার পরিবার একশো দিনের কাজ করত। মজুরি বাবদ তাদের বকেয়া ১১৮ কোটি টাকার বেশি। এর দায় বিজেপিকেই নিতে হবে।’’

বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘একশো দিনের কাজের টাকা খরচের হিসাব রাজ্য দিতে পারছে না বলেই নিয়ম অনুযায়ী টাকা বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র সরকার। সে দায় তৃণমূল এড়াতে পারে না। দলীয় স্তরে সমীক্ষা করে দেখেছি, করোনা-পর্বে পুরুলিয়া জেলার এক লক্ষ ৬৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরেছিলেন। তখন একশো দিনের কাজ বন্ধ ছিল না। তাহলে করোনার আগে কেন লক্ষাধিক শ্রমিককে কাজের সন্ধানে বাইরের রাজ্যে যেতে হয়েছিল?’’

এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য দু’পক্ষকেই দায়ী করছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, ‘‘তৃণমূল নেত্রীর শিল্প বিরোধী আন্দোলনের জেরেই রাজ্য তথা পুরুলিয়া জেলায় শিল্প গড়তে আগ্রহ হারিয়েছে শিল্প মহল। বাম আমলে রঘুনাথপুরে ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়। একাধিক শিল্প সংস্থাকে জমি দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরেই তারা রাজ্যকে জমি ফিরিয়ে দিয়েছে। বাম আমলে প্রস্তাবিত শিল্পগুলি রূপায়িত হলে কাজের সন্ধানে যুবকদের ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হত না।’’

প্রদীপের সংযোজন, পুরুলিয়ায় শিল্প না গড়ে ওঠার পিছনে সমান দায়ী বিজেপিও। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও এক সাংসদ থাকা সত্ত্বেও গত চার বছরে তারা কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে এই জেলায় শিল্প গড়তে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন।

জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেনের দাবি, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই রঘুনাথপুরে ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী’ ঘোষণা করে অর্থ বরাদ্দ করেছেন। বাম আমলে জমি ফিরিয়ে দেওয়া সংস্থা আমাদের সরকারের আমলেই এখানে কারখানা গড়েছে। তৃণমূলের সরকারই বরং শিল্প-বান্ধব।’’

তরজা চলছেই। ঘরে ফেরা শ্রমিকদের কেউ কেউ তাই বলছেন, ‘‘এখানে কাজ না জুটলে দুর্ঘটনার স্মৃতি আঁকড়েই হয়তো কয়েক মাস পরে ফের করমণ্ডল এক্সপ্রেসেসওয়ার হতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coromandel Express accident Tragedy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy