জেলা সংশোধনাগারের বাইরে জল জমে। নিজস্ব চিত্র
শীতের আগে ডেঙ্গির ব্যাটে ঝড় বাঁকুড়ায়।
সরকারি তথ্য বলছে, গত চার মাসে জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২১ গুন বেড়েছে! গত বছরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দুই অঙ্কে আটকে রাখা গেলেও চলতি বছর তা তিন অঙ্ক ছুঁয়েছে। ডেঙ্গি বাড়ছে। আতঙ্কও।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে গত ২৩ জুলাই জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮। গত ১৩ নভেম্বর সংখ্যাটা এক লাফে হয়েছে ১৭১! যার অর্থ জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ সময় থেকে নভেম্বর দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২১ গুনের বেশি। এই সময়কালে প্রতি মাসে গড়ে ৪০ জন মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৫। তবে স্বস্তির খবর এটাই যে এখনও পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি-মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওন্দা ব্লকে ডেঙ্গির প্রকোপ সব থেকে বেশি। তার পরেই রয়েছে বড়জোড়া এবং বাঁকুড়া পুরসভা এলাকা। আবার মেজিয়া, রাইপুর, হিড়বাঁধ, খাতড়ার মতো ব্লকগুলিতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম।
তথ্য বলছে খাস বাঁকুড়া পুর-শহরে ২০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। যা শুনে অবাক খোদ তৃণমূল পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন পুরপ্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘বাঁকুড়া শহরে এক জনও ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন বলে আমার কাছে খবর নেই। এই সব তথ্য কোথা থেকে উঠে আসছে জানি না।”
শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ে রীতিমতো বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধীদলের মধ্যে। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের অভিযোগ, ‘‘শহরের নিকাশি নালাগুলির ৬০ শতাংশই মজে গিয়েছে। নালা দিয়ে জল যায় না। কোথাও আবার নালা ভাঙায় নিকাশি ব্যবস্থার মানচিত্রে বদল এসেছে। অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকায় এসে জল জমে যাচ্ছে। এ সব থেকেই ডেঙ্গির মশা ছড়াচ্ছে।” তাঁর দাবি, ‘‘জল জমে থাকার সমস্যা পুরসভা মেটাতে পারলে ডেঙ্গি শহরে থাবা বসাতে পারত না।’’
পুরসভার কাজ নিয়ে সুভাষবাবুর মন্তব্যে চটেছেন তৃণমূল পুরপ্রধান। মহাপ্রসাদবাবুর পাল্টা তোপ, ‘‘ওঁর কাজই হল কেবল মন্তব্য করা ও নিত্যনতুন নাটক করা।’’ সঙ্গে সংযোজন, ‘‘ভোটে জেতার পরে ছ’মাস পার হয়ে গিয়েছে। পুরসভার সমালোচনা না করে শহরের উন্নয়নের জন্য উনি কী করেছেন সেই তথ্য দিন।’’
জেলা প্রশাসনের পরামর্শ, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও তাতে আতঙ্কের কিছু নেই। কারণ পরিস্থিতি তেমন কিছু খারাপ নয়। জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের একাংশ মনে করছেন, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ হল মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি।
বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাসের দাবি, ‘‘আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ এখন ডেঙ্গি নির্ণয় পরীক্ষা করাতে এগিয়ে আসছেন। মানুষ সচেতন হচ্ছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জ্বর না ছাড়লে ডেঙ্গি পরীক্ষা করানোর বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা ডেঙ্গির লার্ভার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির ভিতরে জমে থাকা জলে সেই লার্ভা মিলছে। মানুষ এখন সচেতন হয়েছেন বলেই ঠিক সময়ে ডেঙ্গি নির্ণয় পরীক্ষা করাচ্ছেন। এতে রোগ দ্রুত ধরা পড়ছে। দ্রুত চিকিৎসাও শুরু হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy