সংস্কারের পরে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পানায় ঢেকেছে সাহেববাঁধ। ছবি: সুজিত মাহাতো।
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে জলাশয় থেকে সরানো হয়েছিল কচুরিপানা। বছর ঘুরতে ফের পানায় ঢেকে গিয়েছে সাহেববাঁধের টলটলে জল। প্রাতর্ভ্রমণকারীরা সকালে সাহেববাঁধের পাড়ে ঘোরাঘুরি করেন। সেই রাস্তাও সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যে সেই রাস্তাও ভেঙে পড়েছে।
এ নিয়ে সরব ছিলেন বিরোধীরা। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে তৃণমূল পরিচালিত পুরুলিয়া পুরসভার বিরুদ্ধে সাহেববাঁধ সংস্কার নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন খোদ দলেরই বিধায়ক কে পি সিংহ দেও। বিধানসভায় তিনি এ নিয়ে সরব হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে দল। কংগ্রেস পুরো ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তবে পুরকর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, ঢিলেমির অভিযোগ ঠিক নয়। ধাপে ধাপে সংস্কারের কাজ চলছে।
১৮৩৮ সালে পুরুলিয়ার তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার কর্নেল টিকলে সাহেব পুরুলিয়া জেলের কয়েদিদের দিয়ে এই জলাশয় খনন করিয়েছিলেন। সময় লেগেছিল প্রায় পাঁচ বছর। একজন সাহেব খনন করায় এই বাঁধের নাম হয়ে যায় সাহেববাঁধ। পরবর্তী কালে জেলার বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী নেতা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণচন্দ্রের নামানুসারে এই সরোবরের নাম হয় ঋষি নিবারণচন্দ্র সায়র।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যখন এই বাঁধ খনন করা হয়েছিল তখনকার তুলনায় বর্তমানে জলাভূমির পরিমাণ কমে গিয়েছে। তবুও শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই সাহেববাঁধ এখনও পুরুলিয়ার ফুসফুস নামে পরিচিত। ফি বছর গ্রীষ্মে জলাভাবের সময় এই সরোবরের জল শহরের বহু এলাকার মানুষ পান করেন। কিন্তু দূষণের অভিযোগও উঠেছে। লাগোয়া বসতি, গ্যারাজ, নর্দমা প্রভৃতির জল এই সরোবরের এসে পড়ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠেছে বার বার। এই সরোবর রক্ষায় গড়ে উঠেছে সাহেববাঁধ বাঁচাও কমিটি। কেন্দ্রীয় সরকার এই জলাশয়কে জাতীয় সরোবরের স্বীকৃতি দিয়ে সংস্কারের জন্য ১২ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। সংস্কারের কাজ কী ভাবে হবে তা দেখভালের জন্য একটি কমিটিও গড়ে তোলা হয়। বিধায়ক হিসেবে কে পি সিংহ দেও নিজে এই কমিটির সদস্য।
তিনি জানান, খরচের ৭০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকারের, বাকি ৩০ শতাংশ রাজ্য সরকারের। প্রথমে কাজের দেখভাল করছিল প্রশাসন। পরে তা পুরসভার হাতে যায়। তাঁর দাবি, “সাহেববাঁধ সংস্কারের কাজের গতি এমনিতে খুব শ্লথ। তার উপরে গত বছর ২৩ লক্ষ টাকা খরচ করে সরোবর থেকে পানা সাফ করা হল। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা গেল ফের কচুরিপানায় ঢেকে গিয়েছে সরোবর। মাস ছয়েক আগে সরোবরের পাশে রাস্তা তৈরি হল ১৬ লক্ষ টাকা খরচ করে। ইতিমধ্যেই সেই রাস্তা নষ্ট হতে শুরু করেছে। তাঁর মতে, পানা পরিস্কারের কাজ যদিও মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেটই করছে, তবু পুরসভাই কাজের দেখভাল করছে। তাই পুরসভা দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
ওই তৃণমূল বিধায়কের সুরেই গলা মিলিয়েছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের বিভাস দাস। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে তদন্তের দাবি তুলে আমরা পুরসভার সামনে দিনভর অবস্থান করেছি। কাউকে পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেই এমন দায়সারা ভাবে কাজ হচ্ছে।” ‘সাহেব বাঁধ বাঁচাও কমিটি’-র মুখপাত্র আবু সুফিয়ান বলেন, “সাহেববাঁধের পানা পরিস্কার নিয়ে নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে পানা পরিষ্কার করতে কত টাকা, কী ভাবে খরচ করা হল তার তদন্ত দাবি জানাব।”
পুরুলিয়ার তৃণমূলের পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সংস্কারের কাজ করছে মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেট। তাদের নির্দেশেই সাহেববাঁধ থেকে পানা সাফাইয়ের পরে কিছু পানা রাখা হয়েছিল। পরে তা ছড়িয়ে যাওয়াতেই বিপত্তি।” তাঁর আশ্বাস, পানা পরিস্কারের কাজ চলছে। তিনি জানান, রাস্তা নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের কাছে রাস্তাটি কেন ভেঙে পড়েছে তা জানতে চাওয়া হবে। তবে কাজের ঢিলেমি নিয়ে বিধায়কের তোলা অভিযোগ নিয়ে পুরপ্রধান অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেটের পুরুলিয়ার সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণ রায়চৌধুরী-র দাবি, “ওই বাঁধে যেখান দিয়ে জল ঢোকে সেখানে ফিল্টার বেড তৈরির জন্য কিছু পানা বেল্টে বেঁধে জলাশয়ের মাঝখানে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টিতে ওই বেল্ট ছিঁড়ে চারপাশে পানা ছড়িয়ে পড়ে।” এ দিকে বিধায়কের দাবি, সংস্কারের প্রকল্প রিপোর্টে বাঁধে যে যে এলাকা দিয়ে জল ঢোকে সেখানে ফিল্টার বেড তৈরি করার কথা বলা থাকলেও আসলে কী হচ্ছে তা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কী কাজ হচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে না।
কল্যাণবাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, “ওই ফিল্টার বেড বর্তমানে মেকানিক্যাল বেড করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। এই কাজের জন্য এক বছর ধরে চারবার টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। কিন্তু কোনও ঠিকাদার আগ্রহ না দেখানোয় দেরি হয়েছে। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে একজন ঠিকাদারকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বার কাজ শুরু হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy