Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

ভাষায় লাগাম, তপ্ত হল যুব বিধানসভা

বিরোধীদের তোপের মুখে দলীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এতখানি নাস্তানাবুদ হতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি খোদ মুখ্যমন্ত্রীও! পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামতে হয় তাঁকে।

বোলপুরে যুব সংসদ প্রতিযোগিতা। ছবি: বিশ্বজিত্‌ রায়চৌধুরী

বোলপুরে যুব সংসদ প্রতিযোগিতা। ছবি: বিশ্বজিত্‌ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৭
Share: Save:

বিরোধীদের তোপের মুখে দলীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এতখানি নাস্তানাবুদ হতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি খোদ মুখ্যমন্ত্রীও!

পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামতে হয় তাঁকে। ঠিক যেমন ভাবেননি, শাসক দলের বিধায়কের কাছে নাজেহাল অবস্থা হবে তাও ভাবেননি বিরোধীরা। কিন্তু তর্ক-তপ্ত রাজনীতির ‘মক’ ময়দানে কোনও পক্ষই শালীনতা ছাড়ালেন না। বুধবার কার্যত এ ভাবেই দু’পক্ষের বাদানুবাদে সরগরম রইল বিধানসভা কক্ষ।

না, এই বিধানসভা আসল বিধানসভা নয়। এ দিন ছিল, বোলপুর ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে এবং জামবুনির শ্রীনন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনায় বোলপুর- শ্রীনিকেতন ব্লক স্তরে যুব সংসদ। সভায় ছিলেন বিডিও শমিক পাণিগ্রাহী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাবুলাল হাঁসদা, স্বাস্থ্য-শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নুর উদ্দিন মোল্লা, শিশু ও নারী কল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ আলপনা বুট প্রমুখ।

বার্ষিক ব্লক যুব বিধানসভার প্রতিযোগিতায় এবার যোগ দিয়েছিল পারুলডাঙ্গার শিক্ষানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়, আলবাঁধা উচ্চ বিদ্যালয়, বাহিরী-ব্রজসুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়, রজতপুর ইন্দ্রনারায়ণ বিদ্যাপীঠ ও শ্রীনন্দা উচ্চ বিদ্যালয়। লটারির মাধ্যমে প্রথমে পারুলডাঙ্গা শিক্ষানিকেতন বিদ্যালয়ের পর যোগ দেয় আলবাঁধা উচ্চ বিদ্যালয়। বিরোধী পক্ষের দলনেত্রীর ভূমিকায় দাঁড়িয়ে সওয়াল তোলেন তন্দ্রা মুখোপাধ্যায়। তিনি সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারি দূরীকরণ, শিল্পের অবস্থা এবং নারী নির্যাতন নিয়ে জানতে চান। ঠিক অন্য শিবিরে অর্থাত্‌ শাসক শিবিরে সংশ্লিষ্ট দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর ভূমিকায় উঠে, জবাব দেন স্কুল পড়ুয়া শ্রাবণী বিশ্বাস, কমলিকা ঘোষ, মহনা ভট্টাচার্যরা। কিন্তু তাঁরা মন্ত্রীদের আদলে জবাবি ভাষণে সরকারের নানা প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরতেই টেবিল চাপড়ে সভা সরগরম করে তোলে বিরোধী পক্ষ।

নকল হলেও, এ বারের যুব বিধানসভা প্রতিযোগিতা ছিল নানা ইস্যুতে সরগরম। বিরোধীদের উত্তাল বিরোধিতা সত্ত্বেও যেমন দেখা গেল, পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামতে হল মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মী ঘোষকে। তিনি বিরোধী পক্ষের উদ্দেশ্যে সরকারের উদ্যোগ এবং সাম্প্রতিক কালে নেওয়া পদক্ষেপগুলি সবিস্তারে বর্ণনা দেন। প্রয়োজনীয় প্রস্তাব আহ্বান করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে সব থেকে সাড়া ফেলে দেয় বিরোধীদের পক্ষের মৃগাঙ্ক শেখর ঘোষের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকার প্রসঙ্গটি। রাজ্য সরকারকে এক হাত নেন তিনি। সেই ইস্যুতেই মুলতবি প্রস্তাবও আনেন তাঁরা। এমনভাবেই কার্যত দিনভর রাজ্য-রাজনীতির নানা ঘটনাকে ছুঁয়ে রইল এ বারের যুব বিধানসভা। সে কলেজে ছাত্র সংঘর্ষ হোক অথবা, কেন্দ্রের অসহযোগিতা।

তর্কের মেজাজ রক্ষার জন্য টেবিল চাপড়ে দু’পক্ষ মেতে থাকলেও কখনও ভাষা লাগাম ছিঁড়ল না। অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করতে হয় লড়ে গেলেন দলনেত্রী। ভাষার শালীনতা এবং সৌজন্যবোধ হারননি কেউ। সে শাসক দলই হোক অথবা বিরোধী পক্ষ। সভাশেষে সব বাদানুবাদ ও বিতর্ক ভুলে, পরস্পরকে আলিঙ্গনের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময়ও করেছেন। যা এ দিনের সভা শেষে, কার্যত বড়দের কাছেও একটি দৃষ্টান্ত এবং বার্তা হয়ে রইল বলেই দাবি।

প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলির পক্ষে অন্যতম প্রধান শিক্ষক পূর্ণকাম চট্টোপাধ্যায়, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক বিশ্বনাথ দাসরা জানান, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই তর্ক-বিতর্ক মনোভাবই নয়, তাদের মধ্যে শালীনতা, সৌজন্যবোধ যাতে থাকে তার জন্যও নজর দেওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

bolpur yuba bidhansabha tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy