Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
আজ ইডি-র মুখোমুখি মন্ত্রী

ভাবিনি এমন দিনও আসতে পারে: শ্যাম

সারদাকে সিমেন্ট কারখানা বেচে ইডি-র (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) তদন্তের মুখে পড়তে হবে বলে ভাবতে পারেননি বস্ত্রমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়। আজ, সোমবার ইডি-র মুখোমুখি হওয়ার আগে রবিবার বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান বলেন, ““সিমেন্ট কারখানায় লাভ হচ্ছিল না। খদ্দের পেয়েছিলাম, বেচে দিয়েছিলাম। তখন সারদার নামও অত শোনা যেত না। ভাবতেই পারিনি এই রকম দিন আসতে পারে।”

বিষ্ণুপুরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।

বিষ্ণুপুরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:২৩
Share: Save:

সারদাকে সিমেন্ট কারখানা বেচে ইডি-র (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) তদন্তের মুখে পড়তে হবে বলে ভাবতে পারেননি বস্ত্রমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়। আজ, সোমবার ইডি-র মুখোমুখি হওয়ার আগে রবিবার বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান বলেন, ““সিমেন্ট কারখানায় লাভ হচ্ছিল না। খদ্দের পেয়েছিলাম, বেচে দিয়েছিলাম। তখন সারদার নামও অত শোনা যেত না। ভাবতেই পারিনি এই রকম দিন আসতে পারে।”

ইডি-র নোটিস পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই মানুষজন কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। সারদাকাণ্ডে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের তদন্তে ডাক পড়বে তা নিয়ে সংশয় না থাকলেও কিন্তু সেই তালিকায় মন্ত্রী হিসেবে প্রথম নামই যে শ্যামবাবুর হবে তা অনেকে ভাবেননি। তাই বৃহস্পতিবার রাতে ইডির শ্যামবাবুকে তলব করার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হইচই শুরু হয়ে যায় জেলার রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক মহলে। সোমবার তিনি ইডি-র সঙ্গে দেখা করতে যাবেন কি, যাবেন না, তা নিয়ে মন্ত্রীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দেখে সংশয় দেখা দিয়েছিল। কৌতূহলও তৈরি হয় পুরবাসীর মধ্যে। তাই বৃহস্পতিবার মাঝরাতে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখতে বহু মানুষ ভিড় করেছিলেন। শ্যামবাবুর মধ্যে অবশ্য কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি। দলের কর্মীদের কথায়, শ্যামবাবু বৃহস্পতিবার মাঝরাতে দলীয় ভাবে বিষ্ণুপুর শহরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। সেখানে তাঁকে স্বমেজাজেই দেখা গিয়েছে। পরের দিনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি হাজির থেকেছেন। আয়োজকদের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছেন।

বাঁকুড়া-দুর্গাপুর ৯ নম্বর রাজ্য সড়কের পাশে বেলিয়াতোড় থানার বেলবনিতে ২০০৬ সালে একটি সিমেন্টের কারখানা তৈরি করেন শ্যামবাবু। তখন তিনি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি। এ দিন শ্যামবাবু দাবি করেছেন, ওই কারখানার অংশীদার ছিলেন ছ’জন (সকলেই শ্যামাপ্রসাদবাবুর আত্মীয়)। ২০০৯ সালে ওই কারখানা সারদাগোষ্ঠীকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই ইডির তরফে শ্যামবাবুকে ফোন করে ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসেব (রিটার্ন) সহ কারখানা বিক্রি করার নথিপত্র নিয়ে ইডির দফতরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। শ্যামবাবু বলেন, “বেলবনিতে ১৮ বিঘা জমির উপরে ওই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসা সে ভাবে না জমায় কারখানা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অবশেষে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সারদাগোষ্ঠীকে ২ কোটি ৭১ লক্ষ টাকায় কারখানা বিক্রি করে দেওয়া হয়।”

শ্যামবাবু দীর্ঘ প্রায় তিন দশক বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। বিষ্ণুপুর বিধানসভায় জয়লাভ করে তিনি রাজ্যের মন্ত্রীও হন। তাই শ্যামবাবুকে ইডি-র নোটিস দেওয়ার পরে তা রাজনৈতিক মহল থেকে চায়ের দোকানের আড্ডা থেকে গৃহস্থের অন্দরের আলোচনাতেও ঢুকে পড়েছে। তাই স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁকে কী ভাবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যে জল্পনা চলছিল।

পুরসভা ছাড়াও বিষ্ণুপুরের নানা অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা গিয়েছে একই ভাবে। তবে সবসময় অনুগামীদের ঘেরাটোপের মধ্যেই ছিলেন তিনি। অবশ্য একাধিকবার বিভিন্ন মহল থেকে সারদার প্রসঙ্গ উঠে এলেও হাসি মুখেই তা সামলে নিয়েছেন মন্ত্রী। শ্যামবাবু বলেন, “কারখানায় লাভ হচ্ছিল না। খদ্দের পেয়েছিলাম বেচে দিয়েছিলাম। তখন সারদার নামও অত শোনা যেত না।”

শ্যামবাবু যাই বলুন, বিতর্ক কিন্তু পিছু ছাড়ছে না তাঁর। কয়েক মাস আগেই ভোটকর্মীদের মারধর করে ছাপ্পাভোটে অভিযুক্ত সোনামুখীর বিধায়ক দিপালী সাহার জামিনের জন্য তিনি বিষ্ণুপুর আদালতে সওয়াল করেছিলেন। এই ঘটনার পরে তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’-র অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। মন্ত্রিত্ব থেকে অবিলম্বে তাঁকে বরখাস্ত করার দাবিও তোলা হয়। সেই ঘটনার রেশ পুরোপুরি কাটার আগেই ফের ‘ইডির তলব’কে কেন্দ্র করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে শ্যামবাবুকে ঘিরে।

এ দিকে সামনের বছরেই পুরভোট। এই পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার কথা ভাবছে বিরোধী দলগুলি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনে শ্যামবাবু সম্পত্তির যে হিসেব দিয়েছিলেন তাতে এই কারখানা বিক্রি করে পাওয়া টাকার কোনও উল্লেখ ছিল না। আমার কাছে সেই নথি রয়েছে। ওই টাকা কোথায় গেল তা জানতে মুখিয়ে রয়েছি আমরা।” তাঁর আরও দাবি, এই ঘটনা আগামী পুরভোটে শ্যামবাবুর বিপক্ষেই যাবে।

বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার দাবি করেন, “শ্যামবাবু সারদাকাণ্ডে জড়িয়েছেন। এ বার আরও অনেক নেতাই জড়াবেন। পুরভোটের আগে বিষ্ণুপুরবাসীর কাছে শ্যামবাবুর আসল চেহারাটা ফাঁস হয়ে গেল।”

তবে পুরো ঘটনাটিকে নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “আমাদের কাছে যা খবর আসছে সবই সংবাদ মাধ্যম মারফত্‌। এর বাইরে কিছু জানি না। তাই কোনও মন্তব্য করতে পারব না।” তবে বিরোধীরা যতই গলা উচু করুক, পুরভোটে বিষ্ণুপুরের মানুষ শ্যামবাবুর পক্ষেই রায় দেবেন বলেই দাবি করেছেন এই পুরসভার উপ পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছেন, “শ্যামবাবু নির্দোষ। শীঘ্রই তা প্রমাণিত হবে। শহরের মানুষ আমাদের পাশেই আছেন। দেখবেন এ বারও পুরভোটে শ্যামবাবুর নেতৃত্বে তৃণমূলই জিতবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy