দুল খুলে নেওয়ায় অভিযুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স চালক। নিজস্ব চিত্র।
শারীরিক অসুস্থতা বাড়ায় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রোগিণীকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য জানিয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া দেওয়ার টাকা নেই পরিবারে হাতে। এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক পৌঁছে দিয়েছেন। বদলে খুলে নিয়েছেন রোগিণীর কানের দুল। সম্প্রতি এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। অ্যাম্বুল্যান্স চালকের এমন অমানবিকতায় স্তম্ভিত সেখানকার বাসিন্দারা। বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন সেখানকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা। তাঁদের চাপেই সোনার দুল ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন ওই চালক।
জামালপুর থানার উত্তরশুড়ার বাসিন্দা মালিক পরিবার। তাঁদের সকলেই দিনমজুরের কাজ করেন। সেই পরিবারে বউ বুল্টি মালিকের (৩৪) গত ১০ দিন ধরে জ্বর। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে দেখানোর পরেও জ্বর না কমায় মঙ্গলবার তাঁকে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। শারীরিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। তাতেই মাথায় হাত পড়ে ওই পরিবারের।
অসুস্থ বুল্টি মালিকের জা সুমিত্রা মালিক বুধবার জানিয়েছেন, অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে বুল্টিকে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো টাকা তাঁদের কাছে ছিল না। পরে ভাড়ার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বললেও অ্যাম্বুল্যান্স চালক হাসেম মোল্লা ওরফে অসিত বর্ধমান হাসপাতালে যেতে অস্বীকার করেন। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে অসুস্থ বুল্টির সোনার দুল খুলে দিতে হয় অ্যাম্বুল্যান্স চালকের হাতে। চালক দুল জোড়া নিয়ে ২ হাজার টাকা দেন। তা থেকে ১১০০ টাকা পাওয়ার পর ওই চালক বুল্টিকে বর্ধমান হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে যান। এই ঘটনার পর জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান এবং কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন সুমিত্রা। তাঁদের ধমক খেয়ে ওই চালক বাড়ি এসে সোনার দুল ফেরত দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনা নিয়ে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান বলেছেন, “অ্যাম্বুল্যান্স চালক অত্যন্ত অমানবিক কাজ করেছে। এমন কাজ তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন করে না। গরিব মানুষ যাতে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পায়, সে কারণে বাংলার মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়করা বিভিন্ন ক্লাব ও প্রতিষ্ঠানকে অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে রেখেছেন। বিনা ভাড়ায় গরিব পরিবারের রোগীকে বর্ধমান বা কলকাতার হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশও পঞ্চায়েত সমিতি থেকে দেওয়া আছে।’’ অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর কাজ থেকেও হাসেম মোল্লাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: পুলিশ দিদিমণি, থানায় পাঠশালা চালিয়ে পুরস্কার পাচ্ছেন শান্তিনিকেতনের ওসি
অ্যাম্বুল্যান্স চালক হাসেম মোল্লার কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রথমে তিনি সব কিছু অস্বীকার করেন। পরে চাপ দিতেই তিনি জানান, বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল রোগীদের জন্য জামালপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েছেন। সেটিই চালান তিনি। বিনা ভাড়ায় বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলায় ওই পরিবার সোনার দুল দিয়েছিল বলে দাবি তাঁর। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এমন কাজ করা অন্যায় হয়েছে বলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে স্বীকার করেছেন ওই চালক।
জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিক আনন্দমোহন গড়াই বলেছেন, “জামালপুর ব্লক হাসপাতালে সরকারি কোনও অ্যাম্বুল্যান্স নেই। যে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি হাসপাতাল চত্বরে থাকে, সেগুলি হাসপাতালের নিয়ন্ত্রাধীনে নয়। সে জন্যই এমন অমানবিক ঘটনা ঘটছে।”
আরও পড়ুন: মাস্ক পরলে ১ কেজি পেঁয়াজ ফ্রি, বর্ধমানে ক্লাবের উদ্যোগ নিয়ে হইচই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy