Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Midnapore Central Correctional Home

শূন্য কারাগারে পুঁইয়ের আস্ফালন

মাটি ঢেকে সবুজের আস্ফালনে সাহায্য করছে। আয়ের সঙ্গে নিজেদের খাবার হিসাবেও এই সব আনাজ ব্যবহার করেন আবাসিকরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০৪:১৩
Share: Save:

২০১৮ সালের জানুয়ারির গোড়ায় পথ চলা শুরু করেছিল মুক্ত সংশোধনাগারটি। ধীরে ধীরে বাড়ল আবাসিকদের আনাগোনা। তাঁদের হাত ধরে সংশোধনাগারের আশেপাশে বাড়তে লাগল নানা আনাজ চাষও। তাতে ছেদ ফেলল করোনা আবহ। পরিচর্যার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করল আনাজ। মাঠেই নষ্ট হতে লাগল তা। স্থানীয়রা অনেকে কখনও কখনও সেই আনাজ কাজে লাগিয়েছে। সেই সুযোগে অনাদরে বাড়ছে পুঁই শাক। সে তার ইচ্ছামতো বংশ বিস্তার করতে শুরু করছে। ঘটনাস্থল মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগার। যা ৪৬০৮০ মিনিট বন্দি শূন্য।

করোনা প্রতিরোধের অন্যতম শর্ত দূরত্ববিধি। কিন্তু দেশের বিভিন্ন সংশোধনাগারের ধারণক্ষমতার থেকে বেশি আবাসিক থাকেন। সংশোধনাগারে 'ভিড়' কমাতে সাজাপ্রাপ্তদের প্যারোলে এবং বিচারাধীনদের অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়ার জন্য একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের জন্য সব রাজ্যকেই নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে বঙ্গের সংশোধনাগার থেকেও তিন মাসের জন্য মুক্তি পান আবাসিকরা। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্যারোলে ছাড়া পান মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারের আবাসিকরা। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে ছাড়া পেতে শুরু করেন তাঁরা। নানা জটিলতায় কয়েকজনের ছাড়া পেতে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ গড়িয়ে যায়। আর ১০ জুন একবারে শূন্য হয়ে যায় ৭১ জনের রাত কাটানোর বাসস্থানটি। যখন থেকে এই ছাড়ার পর্ব শুরু হয়, তখন ৭১ জন বন্দি ছিলেন। ৩২ দিন ধরে শূন্য কারাগার।

নিয়মানুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংশোধনাগারেরর গণ্ডির বাইরে থাকতে পারেন আবাসিকরা। ওই সময়ে নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাঁরা। কারণ, আয়ের সংস্থান নিজেদের করতে হয় মুক্ত সংশোধনাগারের আবাসিকদের। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয় তাঁদের। দোতলা সংশোধনাগারের বিভিন্ন ঘর বা বারান্দায় নিজেদের জন্য রান্না করেন আবাসিকরা। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সংশোধনগার লাগোয়া মাঠে আনাজও ফলান তাঁরা। করোনা আবহে আবাসিকরা বাড়ি চলে যাওয়ায় অনাদরেই আনাজ নষ্ট হয়েছে। ফলে সেখানে নানা আগাছা মাথা চাড়া দিচ্ছে। মাঠের বিভিন্ন অংশও জঙ্গলের রূপ নিচ্ছে। তার মাঝেই নিজের মতো করে লতিয়ে লতিয়ে বংশ বিস্তার করেছে 'আদরহীন' পুঁই শাক। যা মাটি ঢেকে সবুজের আস্ফালনে সাহায্য করছে। আয়ের সঙ্গে নিজেদের খাবার হিসাবেও এই সব আনাজ ব্যবহার করেন আবাসিকরা। তবে আনাজ মাঠে নষ্ট হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীনও হয়েছেন আবাসিকদের কেউ কেউ।

কোনও আবাসিক মুক্ত সংশোধনাগারে এলে প্রথম তিন মাস তাঁর খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে মাইনের ব্যবস্থাও দফতর করে থাকে। কারণ, ওই তিন মাস কাজ খোঁজার সুযোগ দেওয়া হয় তাঁকে।

তবে লকডাউন পর্বে সব বন্ধ থাকায় কাজকর্ম করতে পারেননি আবাসিকরা। তাই বাড়ি যাওয়ার আগে পর্যন্ত মেদিনীপুর মুক্ত সংশোধনাগারে আবাসিকদের খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল কারা দফতর। আবাসিকহীন সংশোধনাগারে যাতে ময়লার আস্তরণ পুরু না হয়, তাই সেখানে নিয়ম করে আসছেন কর্মী-আধিকারিকরা। সংশোধনাগারে নতুন সুপার নিয়োগ করেছে কারা দফতর।

তিন মাস প্যারোলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও দু'মাস। মেয়াদ বৃদ্ধির নথিপত্রও বন্দিদের কাছে পৌঁছতে শুরু করেছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেদিনীপুরের মুক্ত সংশোধনাগারের আবাসিকহীন অবস্থাও মেয়াদ বৃদ্ধির ইঙ্গিত করছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Midnapore Central Correctional Home Pui Saag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy