Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Public outrage in Barasat

পরিযায়ীদের জন্য কোয়রান্টিন কেন্দ্র বারাসতে, দফায় দফায় বিক্ষোভ

কোয়রান্টিন সেন্টার বা নিভৃতবাস কেন্দ্রও তৈরি রাখা হচ্ছে। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদরে সেই পরিকাঠামো ঘিরেই তৈরি হয়েছে অশান্তি।

কোয়রান্টিন কেন্দ্রে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

কোয়রান্টিন কেন্দ্রে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ১৯:২৭
Share: Save:

পরিযায়ী শ্রমিকের স্রোত ঘিরে আতঙ্ক। তাঁদের জন্য যে কোয়রান্টিন সেন্টারের ব্যবস্থা, তা নিয়ে আরও বড় ক্ষোভ। ফলে বিক্ষোভ-অবরোধে দফায় দফায় উত্তাল উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিয়ে এসে কেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে ভিন্‌রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের? কেনই বা ঘনবসতির মাঝে তাঁদের জন্য কোয়রান্টিন সেন্টার তৈরি করা হল? প্রশ্ন বিক্ষোভকারীদের। যাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ, শুধু তাঁদেরই তো কোয়রান্টিন সেন্টারে ঢোকানো হচ্ছে, ভয়ের কী আছে? পাল্টা প্রশ্ন বারাসত পুরসভার প্রশাসকের।

মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরল, দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে যে শ্রমিকরা ফিরে আসছেন বাংলায়, তাঁদের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন অংশেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে। কোয়রান্টিন সেন্টার বা নিভৃতবাস কেন্দ্রও তৈরি রাখা হচ্ছে। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদরে সেই পরিকাঠামো ঘিরেই তৈরি হয়েছে অশান্তি।

ভিনরাজ্য থেকে যাঁরা ফিরছেন উত্তর ২৪ পরগনায়, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বারাসত স্টেডিয়ামে। পরীক্ষায় যাঁদের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। যাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ, তাঁদের রাখা হচ্ছে কোয়রান্টিন সেন্টারে। এই কোয়রান্টিন সেন্টার তৈরি হয়েছে বারাসত সান্ধ্য কলেজে। তাকে ঘিরেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে দফায় দফায় উত্তাল হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর।

আরও পড়ুন: ১ জুন থেকে খুলছে ধর্মীয় স্থান, ৭ জুন চালু হচ্ছে অফিসও, বললেন মুখ্যমন্ত্রী

যে কলেজে কোয়রান্টিন সেন্টার হয়েছে, তার আশপাশে বসতি রয়েছে। আর পরিযায়ীদের সর্বাগ্রে যেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর কোথায় পাঠানো হবে, তা যেখানে ঠিক করা হচ্ছে, সেই বারাসত স্টেডিয়ামও ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকার মাঝেই। ফলে ওই দুই এলাকাতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। কোথাও রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাঁশ-ডালপালা দিয়ে। কোথাও আবার অবরোধ করা হয়েছে।

দেখুন সেই ভিডিয়ো:

বারাসত সান্ধ্য কলেজের সামনে ১১ নম্বর রেলগেটে শুক্রবার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা কংগ্রেস নেতা দীপক দাশগুপ্তর নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলে। আর যশোর রোড থেকে যে রাস্তা বারাসত স্টেডিয়ামের দিকে ঢুকেছে, সেই হাটখোলার রাস্তা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়।

আরও পড়ুন: লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হোটেল, পর্যটন-সহ পরিষেবা ক্ষেত্র, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

১১ নম্বর রেলগেট এবং হাটখোলা এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রবল ভাবে। যে প্রাক্তন কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ-অবরোধ হয়েছে, তাঁর দাবি, ভিন্‌রাজ্য থেকে যে পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশই কোভিড পজিটিভ। কেন তাঁদের ঘনবসতি এলাকায় ঢোকানো হচ্ছে? প্রশ্ন ওই কংগ্রেস নেতার।

কিন্তু বারাসতের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা পুর প্রশাসক বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলছেন, বিক্ষোভ যাঁরা করছেন, তাঁদের মধ্যে মানবিকতা এবং সহানুভূতি নেই। প্রাক্তন কাউন্সিলর তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত অভদ্র আচরণ করেছেন বলে সুনীলবাবুর অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা প্রথমে কোয়রান্টিন জোন শহরের ভিতরে বানাইনি। শহরের বাইরে অ্যাডামাসে কোয়রান্টিন জোন বানিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পরিযায়ীরা ফিরতে শুরু করায় এখানেই কোয়রান্টিন জোন বানানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। মহকুমাশাসকের চিঠি পেয়ে আমি তার ব্যবস্থা করি। তবে এখানে কোয়রান্টিন জোন না করে বাইরে কোনও ফাঁকা এলাকায় বা কোনও বাগানবাড়িতে কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা করা যায় কি না, আমরা তা-ও ভাবছিলাম। কিন্তু আমাদের সময়ই দিল না।’’

প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, সান্ধ্য কলেজে কোয়রান্টিন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে শুধু বারাসতের বাসিন্দাদের জন্য। অর্থাৎ বাইরে থেকে ফেরা যে পরিযায়ীদের বাড়ি বারাসতে, শুধু তাঁদের জন্যই কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়া হয়েছে সান্ধ্য কলেজে। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, প্রশাসক সত্য বলছেন না। বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিককে বারাসতে রাখা হচ্ছে এবং তাঁরা সামাজিক দূরত্ব বিধি না মেনে রাস্তাঘাটে অবাধে ঘোরাফেরা করছেন বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সুনীল মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা বাইরে থেকে ফিরবেন, তাঁদের কি তাড়িয়ে দেব? একটুও সহানুভূতি নেই এঁদের! যাঁর নেতৃত্বে বিক্ষোভ-অবরোধ হচ্ছে, তাঁর বাড়ির কেউ যদি বাইরে থেকে ফিরতেন, তা হলে কী হত?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Barasat Quarantine centre Migrants Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy