— প্রতীকী চিত্র।
বেসরকারি বাসের ধাক্কায় সল্টলেকে পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাসখানেক আগের ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাস্তায় বাসের গতি নিয়ন্ত্রণে আদর্শ বিধি প্রকাশ করল রাজ্য সরকার।
শুক্রবার পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে ছ’পাতার ওই বিধি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বেপরোয়া বাস চালানো রুখতে একগুচ্ছ নির্দেশিকা ছাড়াও এই প্রথম বাস চালকদের সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। নতুন আদর্শ বিধি সম্পর্কে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ করে পথ দুর্ঘটনা রুখতে সরকার বদ্ধপরিকর। নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে চালকদের গাড়ি চালাতে হবে। পাশাপাশি, তাঁদের গাড়ি চালানোর খুঁটিনাটির উপরে নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারি চলবে। তার প্রস্তুতিও চলছে।”
বিধি অনুযায়ী, চালক বাসের স্টিয়ারিংয়ে বসার আগেই নির্দিষ্ট অ্যাপে লগ ইন করতে হবে তাঁকে। যত ক্ষণ ওই বাস চলবে, অ্যাপের মাধ্যমে বাসের গতিবিধি নজরে রাখবে সরকার। চালক কেমন গতিতে বাস ছোটাচ্ছেন, কোথায় কত ক্ষণের জন্য থামছেন, পুরো রুট ধরে যাতায়াত করছেন কি না, নিয়ম ভেঙে সীমার বাইরে গতি বাড়িয়ে ছুটছেন কি না, সবই নজরে রাখবে মোবাইলের অ্যাপ। নির্দিষ্ট সময় পরে অ্যাপের তথ্য বিশ্লেষণ করে চালকের মধ্যে নিয়ম ভাঙার প্রবণতা ফুটে উঠলে তাঁর নামে এসএমএস মারফত সতর্কবার্তা পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতা বাড়লে চালকের লাইসেন্স সাময়িক ভাবে ‘ব্লক’ করা হতে পারে।
নতুন ওই অ্যাপের কার্যপদ্ধতির নানা খুঁটিনাটি তৈরির কাজ চলছে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর। তবে ওই অ্যাপ ছাড়াও এ দিন পরিবহণ দফতরের জারি করা নির্দেশিকায় চালক ও গাড়ির মালিকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে আরও কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী, বাসে চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে হবে। বাসে ‘ব্রিদ অ্যানালাইজ়ার’ বা নিঃশ্বাসে মাদকের উপস্থিতি যাচাই করার যন্ত্র রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই যন্ত্রে চালকের সুস্থতা যাচাই করে তবেই বাস চালানোর কথাও রয়েছে বিধিতে।
এ ছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তায় বাস চালকদের যত্রতত্র পরীক্ষা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। নির্দেশিকায় যাত্রী কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তায় অন্য বাসকে ধাওয়া করে ছোটা, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান বজায় না রেখে ছোটা কোনও ভাবেই বরদাস্ত না করার কথা বলা হয়েছে। সব সময়ে রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষে নির্দিষ্ট লেন বজায় রেখে বাস চালানোর পাশাপাশি নির্দিষ্ট বাসস্টপে বাস থামানোর কথাও রয়েছে। বিধি অনুযায়ী, পরিবহণ দফতর এবং পুলিশের সাহায্য নিয়ে চালক ও কন্ডাক্টরদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা (রিফ্রেশার কোর্স) করানো হবে। বাসে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর খাতা, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, খারাপ যন্ত্রপাতি নিয়ে বাস চালানো যাবে না। বিধি অনুযায়ী, প্রতিদিন বাস চালানোর আগে চালকদের ব্রেক, ইঞ্জিন-সহ গাড়ির নির্দিষ্ট যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
প্রাথমিক খসড়ায় বাসচালকদের নির্দিষ্ট পোশাকের কথা বলা হয়েছিল। তবে মালিক সংগঠনগুলির আপত্তিতে ওই বিষয়টি আদর্শ আচরণ বিধিতে রাখা হয়নি বলে সূত্রের খবর। চালক এবং কর্মীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে কমিশন প্রথার বিকল্প খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে বাসমালিকদের। চালক এবং কন্ডাক্টরকে যাত্রীদের সঙ্গে যথাযথ আচরণ করার কথা বলা হয়েছে আদর্শ বিধিতে। তবে, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানোর বিষয়টি উল্লিখিত হয়নি নতুন নির্দেশিকায়।
সরকারি নির্দেশিকা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাস মালিক সংগঠন সিটি সাবার্বান সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা। তিনি বলেন, “সরকার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে। বাস পরিষেবা আরও আধুনিক হবে বলে আমরা আশা করছি। বাসের যাত্রীরাও জানতে পারবেন বাস কোথায় আছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy