Advertisement
E-Paper

যাদবপুরে ব্রাত্যের গাড়ি ভাঙচুর, আহত শিক্ষামন্ত্রী! ছাত্রসংঘর্ষে জখম হলেন একাধিক অধ্যাপকও

পড়ুয়াদের বিক্ষোভে তুমুল বিশৃঙ্খলা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাঙচুর করা হল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ি। ইট ছোড়া এবং হেনস্থার জেরে আহত মন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে।

এসএসকেএম হাসপাতালে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

এসএসকেএম হাসপাতালে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ১৬:১৭
Share
Save

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ব্রাত্য তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার বৈঠক সেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোচ্ছিলেন। সেই সময় ব্রাত্যের গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেন ওই পড়ুয়ারা। গাড়ি থেকে নেমে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তাঁর সামনেই চলতে থাকে বিক্ষোভ। ওঠে ‘চোর-চোর’ এবং ‘গো ব্যাক স্লোগান’। পরে মন্ত্রীর গাড়ি এবং সঙ্গে থাকা দু’টি পাইলট কারে ভাঙচুর চালানো হয়। ভেঙে দেওয়া গাড়ির ‘লুকিং গ্লাস’ও। মন্ত্রী জানান, গাড়িতে ইট ছোড়া এবং হেনস্থার জেরে আহত হয়েছেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তিনি যান এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে।

পড়ুয়াদের বিক্ষোভ থেকে রেহাই পাননি অধ্যাপকেরাও। এক সময় প্রতিবাদী পড়ুয়াদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় ওয়েবকুপার সদস্যদের। যাদবপুরের অধ্যাপক তথা ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্রকে লাঠি হাতে তাড়া করেন বাম এবং অতি বাম সংগঠনের কয়েক জন পড়ুয়া। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ধস্তাধস্তির মধ্যে এক পড়ুয়ার মাথা ফেটেছে। আহত হয়েছেন দুই অধ্যাপক। এক মহিলা অধ্যাপকের শাড়ি ছেঁড়ার অভিযোগও উঠেছে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে  তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনের অফিসে ভাঙচুর।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনের অফিসে ভাঙচুর। —নিজস্ব চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর আগে ছাত্রবিক্ষোভ সম্পর্কে ব্রাত্য বলেন, “এই গুন্ডামি চলতে পারে না। পড়ুয়াদের চার জন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে পারি। কিন্তু সবাই মিলে গুন্ডামি করলে মুশকিল। তবে আমি কোনও প্ররোচনায় পা দেব না। যাঁরা এগুলি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে উপাচার্য পদক্ষেপ করবেন।”

অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রের সঙ্গে ধস্তাধস্তি পড়ুয়াদের। শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রের সঙ্গে ধস্তাধস্তি পড়ুয়াদের। শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে ব্রাত্য বলেন, “এটা যদি উত্তরপ্রদেশে হত, কোন‌ও ছাত্র সংগঠন এই কাজ করতে পারত? আজকের যে ঘটনা, আমরা চাইলেই পুলিশ ডাকতে পারতম। কিন্তু আমি বারণ করেছি, শিক্ষাঙ্গনে যেন এক জনও পুলিশ না প্রবেশ করে।” এর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যাঁরা আজ অধ্যাপকদের উপর আক্রমণ করছেন, তাঁরা শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের বিরুদ্ধে ক’টা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন? তাঁরা তৃণমূলের অধ্যাপকদের উপর আঘাত করতে চান, কিন্তু বিজেপির ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চুপ থাকেন।”

শনিবার বেলায় যাদবপুরের ওপেন এয়ার থিয়েটারে ওয়েবকুপার বৈঠকে যোগ দেন ব্রাত্য। সেই বৈঠক শুরু হওয়ার আগে তৈরি হয় উত্তেজনা। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ ভোটের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই, আইসা, ডিএসএফ (ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস’ ফ্রন্ট)-এর সদস্যেরা। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পাল্টা মানববন্ধন তৈরি করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর সদস্যেরা। বৈঠকে যোগ দিতে এসে বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে পড়েন ব্রাত্য। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করিয়ে ওপেন এয়ার থিয়েটারের পিছন দিয়ে মঞ্চে তোলা হয়।

এসএসএএমে ব্রাত্য বসু।

এসএসএএমে ব্রাত্য বসু। —নিজস্ব চিত্র।

ব্রাত্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিশৃঙ্খলা থামেনি। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনের অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার প্রতিবাদে যাদবপুর এইট বি মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর পড়ুয়ারা। ওই পড়ুয়াদের বক্তব্য, শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর সময় এক পড়ুয়া গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছেন। তাঁর মাথা ফেটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ভেঙে দেওয়া হয়েছে ব্রাত্যের গাড়ির কাচ।

ভেঙে দেওয়া হয়েছে ব্রাত্যের গাড়ির কাচ। —নিজস্ব চিত্র।

এসএসকেএম থেকে বেরিয়ে ব্রাত্য জানান, গাড়ির কাচ ভেঙে তার টুকরো হাতে-মুখে লেগেছে। হাতে এক্স-রে করা হয়েছে। ব্রাত্যকে দেখতে এসএসকেএম চত্বরে পৌঁছে যান তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “আমাদের ধৈর্য এবং সহনশীলতাকে কেউ যেন দুর্বলতা ভেবে না নেয়। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি। হামলাকারীদের গণতান্ত্রিক ভাবেই জবাব দেওয়া হবে।”

ব্রাত্যকে হেনস্থা করার প্রতিবাদ সন্ধ্যা ৭টায় সুকান্ত সেতু থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল। এই মিছিলে যোগ দেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা টালিগঞ্জের বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস, যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ এব‌ং যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার।


Bratya Basu

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}