মৌসুমী কয়ালদের সঙ্গে বিক্ষোভে শামিল হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ এবং কংগ্রেসের কৌস্তুভ বাগচী। —নিজস্ব চিত্র।
কামদুনিকাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টের রায় ও পুলিশি ভূমিকা নিয়ে পথে নামলেন গ্রামবাসীরা। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্তকে কোন যুক্তিতে বেকসুর খালাস করা হল, এই প্রশ্ন তুলে পথ অবরোধ করলেন তাঁরা। শনিবার বারাসতের কামদুনি মোড়ের ওই প্রতিবাদমঞ্চই কাছাকাছি নিয়ে আসে বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমকে। এক দশক আগের সেই আন্দোলনের মুখ মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়ালদের সঙ্গে বিক্ষোভে শামিল হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ এবং কংগ্রেসের কৌস্তুভ বাগচী। যদিও কামদুনিবাসীর বক্তব্য, রাজনীতির রং না-লাগিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তাঁরা।
২০১৩ সালে কলেজপড়ুয়া এক তরুণীকে ধর্ষণ এবং নৃশংস অত্যাচার করে খুনের ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল নিম্ন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (আমৃত্যু) দেওয়া হয়েছিল বাকি তিন জনকেও। শুক্রবার সেই কামদুনিকাণ্ডের রায়ে তিন জনের ফাঁসির সাজা মকুব করল কলকাতা হাই কোর্ট। তাদের মধ্যে দু’জনের জন্য বরাদ্দ হল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের (আমৃত্যু) শাস্তি। বেকসুর খালাস পেলেন তৃতীয় জন। আর যে তিন জনকে যাবজ্জীবন জেলে থাকার শাস্তি দিয়েছিল নিম্ন আদালত, তাঁদের সাজার মেয়াদও কমে হল সাত বছর। সেই হিসাবে ইতিমধ্যেই ১০ বছর জেলে থাকায় শীঘ্রই মুক্তি পাওয়ার কথা তাঁদের। হাই কোর্টের এই রায়ের পরেই ভেঙে পড়েছিলেন নির্যাতিতা-মৃতার পরিবার-পরিজন। ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এ কেমন রায়! আমাদের মেয়ে কি তবে ন্যায্য বিচার পাবে না?’’ এর পরেই শনিবার কামদুনি মোড়ে প্রতিবাদ দেখালেন গ্রামবাসীরা।
টুম্পা, মৌসুমীদের বক্তব্য, এমন ঘৃণ্য অপরাধের পরেও ছাড়া পেয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াবেন অভিযুক্তেরা। এতে গ্রামবাসীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। কামদুনির ঘটনায় ময়নাতদন্ত এবং পুলিশি তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। টুম্পা বলেন, ‘‘গোড়া থেকেই প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে।’’ একই সঙ্গে সিআইডি এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
ধর্ষণকাণ্ডের তিন বছর পর ২০১৬ সালে নিম্ন আদালতে কঠোরতম সাজা পেয়েছিলেন তিন জন। সেই রায়ে ‘সন্তুষ্ট’ ছিল মৃতার পরিবার। তবে আসামিপক্ষ হাই কোর্টে মামলা করে। তার পর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে এই মামলার শুনানি চলছিল। ২৪ জুলাই শুনানি শেষ হয়। এই মামলার সওয়াল-জবাব পর্বে অভিযুক্তদের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি এবং সঞ্জীব দাঁ পুলিশি-তদন্ত এবং সাক্ষীদের বয়ানের নানা ফাঁকফোকর তুলে ধরে সওয়াল করেন যে, এই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দোষ প্রমাণ হয় না। এই সওয়ালের পাল্টা জোরালো সওয়াল রাজ্যের কৌঁসুলিরা দিতে পারেননি। মৃতার পরিবার এবং গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ইচ্ছা করেই রাজ্যের তরফে দুঁদে আইনজীবীদের এই মামলায় নিয়োগ করা হয়নি। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, কোনও এক ‘অজানা’ কারণে ওই মামলায় ১৬ বার সরকারি কৌঁসুলি বদল করা হয়েছে। বারাসত কোর্ট থেকে মামলার বিচার কলকাতার নগর দায়রা আদালতেও সরিয়ে আনা হয়েছিল। এ ছাড়াও ঘটনার পরে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কামদুনিতে গিয়ে সেই বিক্ষোভকারীদের যে ভাবে ‘মাওবাদী’ বলে দেগে দিয়েছিলেন, সেই ঘটনাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
কামদুনি মামলার রায়ে তদন্তকারী এবং সরকারি কৌঁসুলিদের ব্যর্থতা সামনে আসতেই অবশ্য কিছুটা নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য প্রশাসন। সিআইডি ‘আশ্বাস’ দিয়েছে যে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানাবে। তার আগে মৃতার পরিবারের সঙ্গে ‘কথা’ বলবে সিআইডির বিশেষ দল। তবে কবে সেই সব কিছু হবে, তার কোনও নিশ্চিত তথ্য বা তারিখ এখনও পর্যন্ত দিতে পারেনি রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy