Advertisement
E-Paper

unparliamentary words: শব্দে শিকল পরানো সোজা নয়, কেন্দ্রের ‘অসংসদীয়’ তালিকা নিয়ে সরব বিশিষ্টেরা

বুধবার একগুচ্ছ শব্দকে ‘অসংসদীয়’ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রে-রে করে উঠেছে বিরোধীরা। শব্দগুলি সম্পর্কে কী বলছেন ভাষাবিদরা?

সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বুধবার প্রকাশিত হয়েছে ‘অসংসদীয় শব্দের’ একটি তালিকা।

সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বুধবার প্রকাশিত হয়েছে ‘অসংসদীয় শব্দের’ একটি তালিকা। —গ্রাফিক্স সনৎ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ১৮:৫৭
Share
Save

একটি শব্দের কি একটাই অর্থ? না। একই শব্দ দু’রকম করে বললে দুটো মানে বোঝানো যায়। আবার স্থান-কাল-পাত্র ভেদে শব্দের অর্থও বদলায়। কোন শব্দ ‘সংসদীয়’, কোনটা নয় তা ঠিক করার অধিকার কি রয়েছে কোনও সরকারের? এমন অনেক প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন ‘অসংসদীয়’ শব্দের তালিকা নিয়ে। বিরোধীরা রে-রে করে উঠেছেন। ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতো কেউ কেউ চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, বেছে বেছে সেই শব্দগুলিই বলবেন! পারলে সাসপেন্ড করা হোক তাঁকে।

কিন্তু বাংলার ভাষাবিদরা কী বলছেন? প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁরা বলছেন, শব্দকে বেঁধে রাখা যায় না। শব্দে শিকল বাঁধাও যায় না।

বিরোধীদের অভিযোগ, সাংসদদের মুখে ‘লাগাম পরাতে’ সক্রিয় হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বুধবার প্রকাশিত হয়েছে ‘অসংসদীয় শব্দের’ একটি তালিকা। তাতে দেখা যাচ্ছে এমন অনেক শব্দ রয়েছে, যেগুলিকে আপাতদৃষ্টিতে ‘নিরীহ’ বলা যায়। বিরোধীরা এক কদম এগিয়ে বলছেন, যে শব্দগুলিকে ‘অসংসদীয়’ বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে এবং সে কারণে তাদের ব্যবহার ‘নিষিদ্ধ’ করা হচ্ছে, সেগুলি মূলত মোদী সরকারের সমালোচনায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ, মোদী সরকার তাদের নিন্দাসূচক কোনও শব্দ বিরোধীদের বলতে দিতে চায় না। তারা চায় বিরোধীদের ‘কণ্ঠরোধ’ করতে।

কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপিত ‘অসংসদীয়’ শব্দের তালিকায় যেমন রয়েছে ‘লজ্জাজনক’, ‘নির্যাতন’, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, ‘নাটক’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘অযোগ্য’, ‘ভণ্ডামি’র মতো শব্দ, তেমনই রয়েছে ‘নৈরাজ্যবাদী’, ‘শকুনি’, ‘স্বৈরাচারী’, ‘খলিস্তানি’, ‘বিনাশপুরুষ’, ‘জয়চাঁদ’-এর মতো শব্দ। যেগুলি অনেক সময়েই মোদীকে আক্রমণ করতে ব্যবহার করেন বিরোধী শিবিরের সাংসদেরা। প্রসঙ্গত, বিজেপিরা মোদীকে ‘বিকাশপুরুষ’ বলে অভিহিত করার পরেই বিরোধীদের মুখে ‘বিনাশপুরুষ’ শব্দের আমদানি হয়েছিল।

বুধবার কেন্দ্রের ‘অসংসদীয়’ শব্দের তালিকা প্রকাশের পর প্রশ্ন তৈরি হয়েছে ভাষাবিদ পবিত্র সরকার এবং বাংলা ভাষার বিশিষ্ট গবেষক বারিদবরণ ঘোষের মনে। পবিত্রর প্রশ্ন, ‘‘সংসদে ‘লজ্জাজনক’ বলা যাবে না। কিন্তু ‘এটা লজ্জাজনক নয়’ বলা যাবে কি? আবার কেউ যদি বলেন, ‘এটাকে বিশ্বাসঘাতকতা বলা যেতে পারে কিন্তু বলছি না’, সেটা কি অসংসদীয় হবে? আসলে এরা জানেই না যে একই শব্দকে কত রকম ভাবে ব্যবহার করা যায়। কাউকে ‘নিষ্কর্মা’ না বলে যদি বলি ‘উনি করে উল্টে দিয়েছেন’, তবেও একই কথা বলা হবে।’’

বারিদবরণের প্রশ্ন, ‘‘যদি কোনও সাংসদের থেকে আর একজন সাংসদ টাকা নিয়ে ফেরত না দেন, তবে তিনি স্পিকারকে গিয়ে কী বলবেন? বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলা যাবে না? এটা আবার হতে পারে নাকি?’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘স্থানভেদে শব্দের অর্থ বদলে যায়। ‘ইনাম’ মানে পুরস্কার। কিন্তু বাংলাতেই অনেক জায়গায় ‘ইনাম’ অর্থে বোঝায় মদ্যপানের টাকা। তাই কোনও শব্দকে একটি অর্থে ভেবে অসংসদীয় হিসেবে দেগে দেওয়া যায় না। শুধু ‘রাম’ বললে ভগবানের নাম নেওয়া হয় কিন্তু ‘রাম রাম’ বললে তো নিন্দা! ভাষাকে বেঁধে রাখা কঠিন।’’

বস্তুত, ‘অসংসদীয়’ শব্দের তালিকা তৈরির অধিকার সরকারের রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পবিত্র। প্রবীণ এই ভাষাবিদের বক্তব্য, ‘‘কোন শব্দ সংসদীয় আর কোনটা নয়, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব কেন সরকারের হাতে থাকবে। কারণ, সরকার তো আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের রাজনৈতিক দল। এটা নির্ধারণ করা উচিত আদালতের। সংবিধান এবং ভাষাবিজ্ঞানীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মতামতও নেওয়া উচিত।’’

অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ তথা রাজ্যের সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের কথায়, ‘‘মানুষের এক ধরনের অভিব্যক্তি হল ভাষা। যখন কোনও স্বাভাবিক কিছুকে রুদ্ধ করার চেষ্টা হয়, তখন তার সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক থাকে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ক্ষমতা যখনই বিপদে পড়ে, তখনই ভাষাকে আটকানোর চেষ্টা হয়।’’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকের প্রসঙ্গ টেনে এনে অভীক বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের একটি বিখ্যাত নাটকের সংলাপে রয়েছে, ‘জগৎটা বাণীময় রে, তার যে দিকটাতে শোনা বন্ধ করবি, সেইদিক থেকেই মৃত্যুবাণ আসবে।’ অর্থাৎ, ক্ষমতা কথাগুলো না-শুনতে চাইছে। কিন্তু যেখান থেকে শোনাটা বন্ধ হবে, সেখান থেকেই মৃত্যুবাণ আসবে।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা শম্পা চৌধুরীর প্রশ্ন অন্য— ‘‘কেউ যদি সংসদে তাঁর বক্তৃতায় ‘লজ্জাজনক’, ‘নির্যাতন’, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ এই সব শব্দের অর্থ বোঝাতে চান, তবে তিনি কী করবেন? প্রতিশব্দের জোগানও তো সরকার পক্ষেরই দেওয়া উচিত।’’ শম্পা বলেন, ‘‘এটা শুধু ভারতেই হচ্ছে এমনটা নয়। দেশে দেশে ক্ষমতাসীনরা অপ্রিয় কথা শুনতে এমন শব্দ ব্যবহার বন্ধ করতে চায়। কিন্তু রাগ, অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে হলে কিছু চালু শব্দ তো মানুষকে ব্যবহার করতেই হয়।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘কোনও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ না বললে কি লজ্জা কমে যায়? কাউকে বিশ্বাসঘাতক না বললেই কি সেই ব্যক্তির চরিত্র বদলে যায়?’’

আর অভীক বলছেন, ‘‘আমরা সে গল্প শুনেছি যে, হারুন অল রশিদ ছদ্মবেশে রাত্রিবেলা বেরোতেন, মানুষ কী বলছে সেটা শুনতে। সংসদে যান মানুষের প্রতিনিধিরা। সংসদে যদি শব্দ সেন্সর হয়, তা হলে তো মানুষের কথাই শোনা বন্ধ হচ্ছে! তার ফল মারাত্মক হতে পারে। শব্দ ব্রহ্ম হলে কিন্তু তা একদিন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে!’’

Bengali Literature Central Government unparliamentary words

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।