মমতাকে পুরস্কার দেওয়ায় সরব বিশিষ্টজনেদের একাংশ
দীর্ঘ হচ্ছে তালিকা। অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস, রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এ বার সরব হলেন বাংলার বিশিষ্টজনেদের আরও একটি অংশ। তাঁদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরস্কৃত করায় বাংলা আকাদেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এই মর্মে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, বিশিষ্ট সম্পাদক ও সমালোচক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়, কুন্তল মুখোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেন, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, আজিজুল হক-সহ অনেকে। যে ‘শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের মতামত’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা আকাদেমি, তাঁদের পরিচয়ও প্রকাশ্যে আনার দাবি জানানো হয়েছে একটি খোলা চিঠিতে। ওই চিঠিতে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ‘শাসকদলের বিরোধী গোষ্ঠী’ বলে পরিচিত।
কবিগুরুর জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান মঞ্চে সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজের পাশাপাশি ‘নিরলস সাহিত্য সাধনা’র জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে বিশেষ ‘পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে। তারই বিরোধিতায় খোলা চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণের সম্পত্তি। জনসাধারণের কাছে সরকার দায়বদ্ধ আকাদেমির কার্যকলাপ পরিচালনার বিষয়ে।’ এর পরেই মমতার স্বীকৃতির বিরোধিতা করে স্বাক্ষরকারীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে যে ভাবে পুরস্কার দেওয়া হল, তাতে সরকারি ক্ষমতার গুরুতর অপব্যবহার হয়েছে। চিঠিতে লেখা, ‘যে ভাবে পুরস্কার দেওয়া হল, তাতে আমরা মনে করি আকাদেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সাহিত্যের ঐতিহ্যকে চূড়ান্ত অসম্মান করা হয়েছে এবং সরকারি ক্ষমতার গুরুতর অপব্যবহার করা হয়েছে।’
মমতাকে পুরস্কার দেওয়ার সময় বাংলা আকাদেমির সভাপতি তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, আকাদেমির বিশিষ্ট সদস্যদের দিয়ে তৈরি জুরি বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার পরেই মমতাকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হতেই আকাদেমির তরফে জানানো হয়, এই পুরস্কারই নয়, তাঁদের সব পুরস্কারই আলাদা-আলাদা জুরি বোর্ড (বিচারক মণ্ডলী) ঠিক করে। বাংলা আকাদেমির ১৩ জন বিশিষ্ট সদস্যের কয়েক জন করে এক-একটি পুরস্কারের কমিটিতে থাকেন। এই সদস্যদের মধ্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, সুবোধ সরকার, শ্রীজাত, প্রচেত গুপ্ত, অভীক মজুমদার, অর্পিতা ঘোষ, প্রসূন ভৌমিক, প্রকাশক গিল্ডের কর্তা সুধাংশুশেখর দে, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ আছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় অন্য গুণিজনেদেরও সাহায্য নেওয়া হয়। বুধবারের খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের দাবি, যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন, তাঁদের নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে আনা হোক। এ ছাড়া কোন প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে পুরস্কার দেওয়া হল, তা-ও বিবৃতি জারি করে জনসাধারণকে জানানোর দাবি তোলা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির এই পুরস্কার দেওয়ার পরের দিনই ইস্তফা দিয়েছেন সাহিত্য অ্যাকাডেমির বাংলা ভাষা বিষয়ক উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস। বাংলা আকাদেমি থেকে প্রাপ্ত ‘অন্নদাশঙ্কর রায় স্মারক সম্মান’ ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন বর্ধমানের বাসিন্দা গল্পকার ও লোক-সংস্কৃতি গবেষক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যদিও বিতর্কের এই আবহে মঙ্গলবার ব্রাত্য বলেন, “একমাত্র বাঙালিদের একটা অংশই এমন পারে! বলতে ইচ্ছে করছে, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি। অ-বাঙালিরা এমন করতেন না!” বুধবারও সমালোচকদের কটাক্ষ করে রাজ্যের মন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীর সব পুরস্কারেই বিতর্ক রয়েছে। কোনও পুরস্কারই অবিতর্কিত নয়। প্রশ্ন ছিল বব ডিলানের নোবেল নিয়েও। পদত্যাগের ঘটনা নোবেলেও রয়েছে। নোবেল পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথও কথা শুনেছিলেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy