Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Swasthya Sathi

Swasthya Sathi: সুস্থদের ভর্তি রেখে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে টাকা আদায়, অভিযুক্ত একাধিক নার্সিংহোম

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়েও তঞ্চকতার অভিযোগ! গ্রামে স্বাস্থ্য শিবিরের নাম করে বা দালাল লাগিয়ে বুঝিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে আসা হচ্ছিল ‘সুস্থদের’।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২১ ০৬:০২
Share: Save:

করোনার টিকা নিয়ে প্রতারণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়েও তঞ্চকতার অভিযোগ! গ্রামে স্বাস্থ্য শিবিরের নাম করে বা দালাল লাগিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে আসা হচ্ছিল ‘সুস্থদের’। যে-কোনও ভাবে তাঁদের দিন দশেক নার্সিংহোমে রেখে বানিয়ে ফেলা হচ্ছিল ৬০-৭০ হাজার টাকার বিল! এই ছকেই রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের টাকা হাতানোর ফন্দি এঁটেছিল বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু নার্সিংহোম। তাতে তাদের রোজগারও হচ্ছিল ভালই।

সাধারণ গা বা মাথাব্যথায় কে-ই বা আর হাসপাতাল-নার্সিংহোমে ভর্তি হতে চান! অভিযোগ, নার্সিংহোমে ভর্তির টোপ হিসেবে যাতায়াতের খরচ, হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সময় বিনামূল্যে এক সপ্তাহের ওষুধ, এমনকি ১০ দিনের বেশি নার্সিংহোমে থাকলেই নগদ ১০ হাজার টাকা গুঁজেও দেওয়া হচ্ছিল উপভোক্তার হাতে! শারীরিক সমস্যা না-থাকলেও এই টোপে কেউ কেউ স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হয়ে যাচ্ছিলেন। চিকিৎসার নামে কার্ডের সব টাকা চলে যাচ্ছিল সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের কাছে।

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে অনিয়মের এই অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। সব ক্ষেত্রেই মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে ওই প্রকল্প থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের মানিকদীপা গ্রামের এক উপভোক্তার ছেলের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে স্বাস্থ্য দফতর তিনটি নার্সিংহোমকে শো-কজ় করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। তিনটি নার্সিংহোমই বাঁকুড়া জেলার। দু’টি সোনামুখী অঞ্চলের এবং একটি ওন্দা রামসাগর এলাকার। অভিযোগ, তারাই রোগী ধরে আনত গোয়ালতোড় থেকে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাতায়াতের খরচ দিয়ে, এমনকি গাড়ি পাঠিয়ে গ্রামের লোকেদের নার্সিংহোমে এনে ভর্তি করেছে। সামান্য গায়ে ব্যথা বা জ্বরে ৮-১০ দিন করে তাঁদের নার্সিংহোমে রেখে ৭০-৭৫ হাজার টাকার বিল করেছে। অনেককে নার্সিংহোমে আসার জন্য টাকাও দিয়েছে।’’

এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, কোনও চিকিৎসা না-করে যদি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প থেকে ৭০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া যায়, তা হলে তার থেকে ১০ হাজার টাকা উপভোক্তাকে দিলেও লাভ নার্সিংহোমেরই। এটা জানাজানি হলে আরও বেশি লোক টাকার লোভে রোগ না-থাকলেও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ভর্তি হতে চাইবেন। নার্সিংহোমগুলি স্বাস্থ্যসাথীর প্রচুর রোগী পাবে।’’

গত ২২ ও ২৩ জুন স্বাস্থ্য দফতরের চার তদন্তকারী অভিযুক্ত বিভিন্ন নার্সিংহোম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের কিছু গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে দেখেন। স্বাস্থ্যসাথীতে চিকিৎসা করিয়েছেন, এমন অনেকের সঙ্গে কথাও বলেন তাঁরা। তদন্তকারীরা জানান, ওই সব নার্সিংহোমের নথিতে দেখা গিয়েছে, এক-এক দিনে ১০-১২ জন রোগী একই এলাকা থেকে, একই রকম গা-ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি-বমি ভাব, ঘুম না-আসার মতো ‘নন-স্পেসিফিক’ সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, যেটা খুবই অস্বাভাবিক। এ বার স্বাস্থ্যসাথীর পোর্টালে এমন ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যেখানে কোন অঞ্চলের লোক কত দূর এসে কোন হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি হচ্ছেন, সে-দিকে নজর রাখা যাবে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড অনেকটা একই ভাবে অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল শহর লাগোয়া কয়েকটি হাসপাতালে।

অভিযুক্তদের মধ্যে ওন্দা এলাকার আনন্দময়ী নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘কারা নাকি অভিযোগ করেছেন যে, আমরা নার্সিংহোমে ভর্তি থাকার জন্য ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছি! কিন্তু এর তো কোনও প্রমাণ নেই। কেউ তো বাচ্চা নন যে, তাঁদের ভুল বুঝিয়ে বা জোর করে অথবা টাকা দিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করাব। আমরা শো-কজ়ের উত্তরে এটাই জানিয়েছি।’’

সোনামুখীর বিজয়কৃষ্ণ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘‘আমাদের কেন শো-কজ় করা হয়েছে, সেই বিষয়ে কিছু বলব না।’’ সোনামুখীর গ্লোকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায়, ‘‘আমরা পঞ্চায়েতকে জানিয়ে ক্যাম্প করে কিছু রোগী এনেছিলাম। তাঁদের প্রকৃত শারীরিক সমস্যা ছিল। তবে আমরা ক্যাম্পের জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার অনুমতি নিইনি। এ বার থেকে তা নেব।’’ কেন ভিন্ জেলার একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে প্রতি মাসে এত রোগী আসছেন, এ বিষয়ে তাঁদের যুক্তি, ‘‘গোয়ালতোড় এলাকায় কোনও ভাল হাসপাতাল নেই। আর আমাদের হাসপাতাল একেবারে রাস্তার উপরে। আসতে-যেতে নজরে পড়ে। তাই হয়তো ওই জায়গা থেকে এত মানুষ আসতেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Nursing Home Swasthya Sathi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy