শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বেসরকারি স্কুলগুলির ফি বৃদ্ধি নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই অভিযোগ-বিক্ষোভ হয়। ফি কতটা বাড়ানো উচিত, স্কুল-কর্তৃপক্ষকেই এ বার তা ভেবে দেখতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বুধবার সরকার পোষিত স্কুল বাঁশদ্রোণী চাকদহ বিদ্যামন্দিরে ইংরেজি মাধ্যম শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘বেসরকারি স্কুলগুলোর ফি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আপনাদের উপরে ছেড়ে দিলাম।’ কিন্তু এখনও দেখা যাচ্ছে, তাতে কোনও কাজ হয়নি, হচ্ছে না। আমি স্কুল-কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির কাছে আবেদন করব, আপনারা ভেবে দেখুন, এক ধাপে এতটা ফি বাড়ানো কতটা কষ্টের।’’ অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য স্কুল-কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কোনও অভিভাবকের বেশি ফি দেওয়ার ক্ষমতা আছে, কোনও কোনও অভিভাবকের তা নেই। একটা সামঞ্জস্য থাকা দরকার। অন্য রাজ্যে এই সামঞ্জস্য আছে। এই রাজ্যেও মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে কথা শুরু করেছিলেন। আপনারা সকলের সঙ্গে কথা বলে ফি ঠিক করুন।’’
২০১৭ সালের মে মাসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, যে-সব বেসরকারি স্কুল মোটা টাকা নেয়, তাদের নিয়ে কমিটি গড়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, এ বছর সেটা স্পষ্ট। সম্প্রতি ফি বৃদ্ধি নিয়ে সাউথ পয়েন্টের অভিভাবকেরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। এ দিনের সভায় সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নাম উল্লেখ করে পার্থবাবু বলেন, ‘‘স্কুলে বিক্ষোভ হবে কেন? আর অভিভাবকেরাই বা বেশি ফি দিয়ে দূরের স্কুলে তাঁদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করবেন কেন? নাকতলার ছেলেকে কেন লা মার্টিনিয়ারে পড়তে যেতে হবে?’’
সেই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘অনেক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে বাংলা পড়ানো হয় না এবং অনেক ক্ষেত্রে বাংলাকে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে বলে কয়েক জন অভিযোগ করেছেন। কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যা, জানি না। তবে কোন কোন বেসরকারি স্কুলে বাংলা পড়ানো হয় না, সেটা আমরা নজরে রাখছি। বাংলা তুলে দিয়ে কোথাও কিছু করা যাবে না।’’ সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন সরকারি স্কুলের কর্তৃপক্ষকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘‘সরকার নির্ধারিত ফি-পরিকাঠামোর বাইরে যাবেন না। গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিন বাঁশদ্রোণীর ওই স্কুলে শিক্ষামন্ত্রী জানান, তিনি ইংরেজি মাধ্যমের পক্ষাপাতী নন, ইংরেজি শিক্ষার পক্ষপাতী। আগেকার বামফ্রন্ট সরকার যেটার ভিত নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে। ‘‘বুদ্ধদেববাবুর (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) উপলব্ধি হওয়া উচিত, তাঁর কমরেডরা ডুবিয়েছেন,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনশন নিয়ে এ দিন ফের কটাক্ষ করে পার্থবাবু জানান, কোনও একটা দাবি নিয়ে শিক্ষকেরা অনশনে বসে পড়ছেন! এই চিত্র পাল্টাতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর মতে, গত এক বছরে স্কুল-কলেজে প্রচুর শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে রাজ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন এতই বেশি যে, উপাচার্য খুঁজে পাচ্ছি না। ধনখড় সাহেবকে (রাজ্যপাল-আচার্য জগদীপ ধনখড়) বলছি, কয়েক জন উপচার্য খুঁজে বার করুন।’’ মন্ত্রীর মতে, শুধু পরিকাঠামোর উন্নতি দিয়ে কিছু হয় না। স্কুলে পঠনপাঠনের মান কেমন, শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেমন পড়াচ্ছেন, অভিভাবকেরা সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে কতটা ভাবছেন— এ-সবেই পড়াশোনার মান সার্বিক উন্নতি হয়।
‘আমার নয়, দর কমছে শিক্ষার’
শিক্ষা নিয়ে কেউ ভাবেন না বলে বুধবার বাঁশদ্রোণী চাকদহ বিদ্যামন্দিরের অনুষ্ঠানে খেদ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তা হলে কি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তাঁরও দর কমছে? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘আমার কেন দর কমবে? শিক্ষার দর কমেছে। শিক্ষিত মানুষের দর কমছে। আমার এত বড় চেহারা, আমার দর কমতে পারে?’’ ওই মঞ্চে ছিলেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পার্থবাবুর বক্তব্য নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই নিয়ে মন্তব্য করব না। শুধু বলব, পার্থদা বক্তৃতায় অনেক সময় অনেক কিছু বলেন। উনি বলেছেন। পার্থদা শিক্ষামন্ত্রী এবং দলের মহাসচিব। শিক্ষা ক্ষেত্রে উনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন।’’
নিজস্ব সংবাদদাতা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy