ফাইল চিত্র।
এত দিন করোনা আক্রান্ত রোগীদের সামাজিক হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে। সুস্থ হওয়ার পরেও নানা সময়ে, নানা ভাবে তাঁরা হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এর কারণ, কোভিড নিয়ে অমূলক আতঙ্ক। কিন্তু এ বার একাধিক বেসরকারি হাসপাতালও কোভিড-আতঙ্কে ভুগছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করল।
কারণ, প্রতিদিন সংক্রমিতের সংখ্যাবৃদ্ধি সত্ত্বেও বেসরকারি হাসপাতালের একাংশ নিজেদের যে ভাবে কোভিড চিকিৎসা থেকে পুরো বিযুক্ত রেখেছে, তাতে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে চিকিৎসকেদের একটা বড় অংশের মধ্যে। তাঁরা এ-ও বলছেন, কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্রের ‘তকমা’ লেগে গেলে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক ‘ক্ষতি’ হবে, এটা ভেবেও অনেক হাসপাতাল এই পরিষেবায় নিজেদের যুক্ত করছে না। ফলে কৃত্রিম শয্যাসঙ্কট তৈরি হচ্ছে। এক সরকারি কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসকের কথায়, ‘‘চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যেই যদি কোভিড নিয়ে ‘স্টিগমা’ থাকে, তা হলে সাধারণ মানুষের আর কী দোষ?’’ আর এক সরকারি চিকিৎসক বলেন, ‘‘সোজা কথায় বললে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে, তাই বেসরকারি অনেক হাসপাতাল এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে চাইছে না।’’
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের বক্তব্য, ‘‘কোভিড চিকিৎসায় যুক্ত হলে জীবাণুনাশ, পিপিই সরবরাহ করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা-সহ যে আর্থিক বোঝা বহন করতে হবে, সেটা সম্ভবত অনেক হাসপাতাল চাইছে না।’’ কার্ডিয়োথোরাসিক চিকিৎসক কুণাল সরকার মনে করেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা আরও বাড়ানো দরকার। কারণ প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে ৫০ শতাংশ রোগীও যদি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে চান, তখন তা কুলিয়ে ওঠা যাবে না। শয্যার জন্য হাসপাতালের বাইরে রোগী ও তাঁর পরিবার বা অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে থাকুক, এটা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।’’
আরও পড়ুন: করোনা-উপসর্গ থাকলেও তথ্য ‘মিলছে না’ বিমানযাত্রীদের
তথ্য বলছে, বর্তমানে শহরের ১০টি বেসরকারি হাসপাতালে মাত্র ৪৯০টি শয্যা কোভিডের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। অথচ সেখানে মোট শয্যা সংখ্যা ৩,১৮৭। রাজ্যে ১৫৬৬টি সরকারি হাসপাতালে ৭৮,৫৬৬টি শয্যা রয়েছে। আর ৬৯৭টি বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৩৪,৯৭৯। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯২৮, বেসরকারি ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা ১৭৪৮। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘হাতে পর্যাপ্ত শয্যা রয়েছে, অথচ জরুরি পরিস্থিতিতে তা কাজে লাগাব না এটা হতে পারে না!’’
কী বলছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন? সংগঠনের প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘যে সব হাসপাতাল ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে, তাদের বলা হয়েছে শয্যা বাড়াতে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য অসুবিধাও রয়েছে। কোভিড-নন কোভিড বিষয়ে অনেক সতর্ক থাকতে হচ্ছে। অনেক স্বাস্থ্যকর্মীও আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।’’ যে সব বেসরকারি হাসপাতাল এখনও যুক্ত হয়নি, তাদেরও কোভিডের জন্য শয্যা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রূপকবাবু।
আরও পড়ুন: সংক্রমিত এলাকা মিলিয়ে হাওড়ায় বাড়বে কন্টেনমেন্ট জ়োন
তবে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি করোনা চিকিৎসার খরচ নিয়েও সরকারের সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের আরও বেশি আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেদের একটা বড় অংশ মনে করেন, খরচ নিয়ে সরকার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে ঠিকই। কিন্তু তাতে অনেক কিছুরই উল্লেখ নেই। সেই নির্দেশিকা মানা হচ্ছে কি না, তার নজরদারিরও ব্যবস্থা নেই। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘খরচ নিয়ে একটা সার্বিক নীতি ঠিক হোক। না হলে করোনা চিকিৎসায় এক-একটি হাসপাতালে এক-এক রকম বিল করার ঘটনা ঘটতেই থাকবে। রোগ নিয়ে আতঙ্কের পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ নিয়ে আতঙ্কে মানুষ আরও বেশি জেরবার হবেন।’’
যদিও রূপকবাবুর দাবি, করোনা চিকিৎসার খরচ কতটা কমানো যায়, তা তাঁরা নিজেদের মধ্যে বসেই ঠিক করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে নন-কোভিড এবং কোভিড রোগীর চিকিৎসার খরচের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। কোভিডের ক্রিটিক্যাল রোগী যখন আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে যাচ্ছেন, তখনই খরচটা চোখে পড়ছে। তবে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে খরচ কমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু জোর করে বেসরকারি হাসপাতালের উপরে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে তা ঠিক হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy