Advertisement
E-Paper

বড় স্কুলবাড়িটা খাঁ খাঁ করছে, পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনতে মাইক ভাড়া করে ঘোষণা প্রধান শিক্ষকের

মুর্শিদাবাদের ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া শমসেরগঞ্জের ভাসাই পাইকর হাই স্কুলে ৯৩২৭ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে উপস্থিতির হার ৭.৬ শতাংশ। পঞ্চায়েত ভোট মেটার পরে স্কুল খুললেও এই অবস্থা।

SCHOOL.

ভাসাই পাইকর হাই স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ ০৫:৪৮
Share
Save

বিরাট বিদ্যালয় ভবন। প্রচুর ছাত্রছাত্রী। শিক্ষকও পর্যাপ্ত। কিন্তু দুপুরে এক রকম খাঁ খাঁ করছে ঘরগুলো।

মুর্শিদাবাদের ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া শমসেরগঞ্জের ভাসাই পাইকর হাই স্কুলে ৯৩২৭ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে উপস্থিতির হার ৭.৬ শতাংশ। পঞ্চায়েত ভোট মেটার পরে স্কুল খুললেও এই অবস্থা। প্রধান শিক্ষক তাসিকুল ইসলাম তাই মাইক ভাড়া করে মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসার জন্য আবেদন করছেন। তাসিকুলের বক্তব্য, ‘‘ছুটির বাড়বাড়ন্তই শেষ করে দিল স্কুলটাকে।’’ লম্বা গরমের ছুটির পরে স্কুল খুলে ফের ২৩ জুন পঞ্চায়েত ভোটের জন্য বন্ধ হয়। আবার খোলে ১৩ জুলাই। তাসিকুলের দাবি, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসার আগ্রহই হারিয়ে ফেলছে। অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ফেব্রুয়ারিতে। তার উপরে সামনেই আবার পুজোর ছুটি।’’

সুতির ছাবঘাটি হাই স্কুলে ১০,৩০০ জন পড়ুয়া। গরমের ছুটির পরে যে চার দিন স্কুল খোলা ছিল, উপস্থিতির হার ছিল ১১ শতাংশ। এর পরে ভোটের জন্য আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানেরা চলে আসেন, স্কুলও বন্ধ হয়ে যায়। জওয়ানেরা এখনও রয়েছেন। স্কুলও খোলেনি। প্রধান শিক্ষক কৌশিক দাস বলছেন, “একে তো মাত্রাতিরিক্ত গরমের ছুটি, তার পরেও ভোটের জন্য প্রায় ২০ দিন ধরে স্কুল বন্ধ। সবাইকে বলেছি স্কুলটা খুলতে দিন, বাহিনী সরান। সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে ছেলেমেয়েদের।’’ এই স্কুল লাগোয়া এলাকা বিড়ি শ্রমিকদের মহল্লা বলে পরিচিত। বছরে ২২০ দিন ক্লাস হওয়ার কথা। স্কুল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এ বছর ১০০ দিনও স্কুল করা যাবে না। কৌশিক জানাচ্ছেন, গ্রামাঞ্চলে স্কুলই এক মাত্র ভরসা অনেকের। সেখানে পড়াশোনার সুযোগ কমে গেলে পড়ুয়ারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।

শমসেরগঞ্জের ভাসাই পাইকর হাই স্কুলের বিজ্ঞপ্তি।

শমসেরগঞ্জের ভাসাই পাইকর হাই স্কুলের বিজ্ঞপ্তি। —নিজস্ব চিত্র।

এলাকার অনেক ছাত্রই দিনমজুরের কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। আশঙ্কা, তাদের কেউ কেউ ভিন্ রাজ্যেও চলে যেতে পারে। ছাত্রীরা বাড়িতে বসে বিড়ি বেঁধে সংসারে সাহায্য করছে। আগে তা করেও স্কুলে যেত, এখন সারা দিনই সংসারের কাজ ও বিড়ি বাঁধায় কাটছে।

কিন্তু স্কুলের খাতায়-কলমে নাম কাটছে না। শিক্ষাবিদদের ধারণা, তার কারণ, কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে সবুজ সাথী পর্যন্ত একাধিক সুযোগ-সুবিধা ছাত্রছাত্রীরাই পায়। ছাবঘাটিতে কন্যাশ্রীর সুবিধা পেয়েছে ৩ হাজার ৫০০ জন, সবুজ সাথীর সাইকেল পেয়েছে ৯৮৬ জন। ভাসাই পাইকরের স্কুলটিতে এ বছর কন্যাশ্রীর সুবিধা পেয়েছে প্রায় ১২৫০ জন ছাত্রী, সাইকেল পেয়েছে এক হাজারের কিছু বেশি।

তাসিকুলের বক্তব্য, ‘‘কিন্তু এইটুকুতেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলে তো মুশকিল। আরও অনেক দূর পড়াশোনা করা দরকার। অনেকেই আবার প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া।’’ তাসিকুল নোটিস দিয়েছেন যে, স্কুলে না এলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা না মেলার আশঙ্কাও রয়েছে।

এবিটিএ-র জেলা সভাপতি জুলফিকার আলির বক্তব্য, “এখনও বহু স্কুলে বাহিনী রয়েছে। হাজিরা কমছে জেলার প্রায় সব গ্রামীণ স্কুলেই। অথচ দু’সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় মূল্যায়ন। বহু স্কুল প্রথম মূল্যায়নের ফলাফলই দিতে পারেনি এখনও।’’ তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির বিদায়ী জেলা সভাপতি মহম্মদ শেখ ফুরকানও বলেন, “পড়ুয়াদের হাজিরা দিন দিন কমছে। স্কুলগুলিতে কার্যদিবস বাড়াতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Samserganj school Students

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}