মহার্ঘ্য: বাঁকুড়ার দোকানে। —নিজস্ব চিত্র
পঞ্চব্যঞ্জন দেখেও ভার মুখেই অনেকে ভাত খাচ্ছেন। আসল জিনিসটাই যে পাতে নেই! উপায়ই বা কী? দর বাড়িয়ে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে পোস্ত। কেজি প্রতি ১২০০-১৩০০ টাকা দরের পোস্ত নিয়মিত পাতে রাখা যে বিলাসিতা! তাই মন ভাল নেই বাঁকুড়ার অনেক খাদ্য রসিকের। হেঁসেলের সেই হা-হুতাশ উঠে এসেছে পাড়ার আড্ডা থেকে অফিসেও। নানা সব্জি থেকে মাছের পদ খেয়েও অনেকেই আক্ষেপ করে বলছেন— ‘পেট ভরলেও মন ভরল না’।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই পোস্তর দর ঊর্ধ্বমুখী। সেই সময় খোলা বাজারে পোস্তর দর যাচ্ছিল কেজি পিছু ৯৫০ টাকা। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এখন সেই পোস্তই কেজিতে ১৩০০ টাকা ছুঁয়েছে। হাটে-বাজারে মধ্যবিত্তের আক্ষেপ তাই কিছুতেই কমছে না।
বাঁকুড়ার সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্ত বলেন, “একসময়ে বাঁকুড়ার খেটে খাওয়া মানুষজন পোস্ত-ভাত খেয়ে দুপুরের ঘুম দিয়ে পরিশ্রম লাঘব করতেন। মধ্যবিত্তদের কাছেও পোস্ত খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দিনে দিনে সেই পোস্তই দামে খাসির মাংসকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভাবতেই কেমন লাগছে।” বাঁকুড়ার নুনগোলা রোডের বাসিন্দা পেশায় টোটো চালক প্রবীর ঘোষ বলেন, “পাতে যতই মাছ কিংবা ডিম থাকুক, পোস্ত না পেলে ভাত খাওয়ার তৃপ্তিটাই পাই না। কিন্তু যা দর বেড়েছে, তাতে পোস্ত কেনার আগে সাত-পাঁচ ভাবতে হচ্ছে।’’ মিথিলা এলাকার একটি আবাসনের বধূ মানু কর্মকার বলেন, “যা দাম হয়েছে, তাতে পোস্ত বাটা বা পোস্তর বড়া খাওয়া ছাড়তে হয়েছে। তবে না খেয়ে তো আর থাকা যায় না। খরচ কমাতে তাই আলুপোস্ত খেয়েই খুশি থাকতে হচ্ছে।”
পোস্ত নিয়ে টানাপড়েনে পড়েছে জেলার হোটেলগুলিও। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা এলাকার একটি হোটেল মালিক রাজীব দত্ত জানান, সব্জি-ভাতের থালিতে তাঁরা নিয়মিত পোস্তর বড়া দেন। তবে বাম বেড়ে যাওয়ায় ইদানীং তাঁরা পোস্তর বড়ার মাপ ছোট করেছেন। তিনি বলেন, “খাবারের দাম তো একঝটকায় বাড়াতে পারি না। তাই পোস্তর বড়া ছোট করে দিয়েছি।’’ আগে তাঁর হোটেলে দৈনিক যেখানে ৪০০ গ্রাম পোস্ত খরচ হত, এখন তা কমিয়ে ১৫০ গ্রামে এনেছেন।
পোস্তর বড়ার স্বাদের জন্য বিষ্ণুপুরের রবীন্দ্র স্ট্যাচু এলাকার একটি হোটেলের পেশ নামডাক রয়েছে। তবে দর বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা পোস্তর বড়ার আকার ছোট করেছেন। ওই হোটেলের অন্যতম মালিক জীতেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “লোকজন বারবার পোস্টর বড়ার টানেই আমাদের হোটেলে আসেন। তাই দর বাড়াতে পারিনি। তবে বাধ্য হয়েই বড়ার মাপ ছোট করতে হয়েছে।’’
পোস্ত ব্যবসায়ীরাও স্বস্তিতে নেই। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পোস্তর বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছে। বাঁকুড়া শহরের নতুনগঞ্জ এলাকায় পাইকারি ব্যবসায়ী দেবেন্দ্র আগরওয়াল জানান, মাসে যেখানে ১৫-২০ কুইন্টাল পোস্ত বিক্রি হত, গত এক মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২-৪ কুইন্টালে। পোস্তর আমদানি কমে যাওয়াতেই দর এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন তিনি। বাঁকুড়ার বড়কালীতলা এলাকার মুদি দোকানি জনার্দন দত্ত বলেন, “প্রতি মাসে যাঁরা এক সঙ্গে কয়েক কেজি করে পোস্ত কিনতেন, তাঁরাই এখন মাঝে মধ্যে এসে অল্প অল্প করে পোস্ত কিনছেন। আমরাও লোকসানের মুখে পড়েছি।”
আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাঁকুড়ায় জেলার দামোদর নদের বিভিন্ন চরায় পোস্তর চাষ চলছে বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেলে জেলা আবগারি দফতর অভিযান চালিয়ে চাষ নষ্ট করে। আবগারি দফতর জানাচ্ছে, চলতি বছরেই এখনও পর্যন্ত কেবল মেজিয়া ব্লকে প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে পোস্ত চাষ নষ্ট করেছে তারা। অথচ বাইরের ব্যবসায়ীরা কেবল বাঁকুড়ার বাজার থেকেই পোস্ত বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা রোজগার করে নিয়ে যাচ্ছেন। যা দেখে জেলার খাদ্য রসিকদের একাংশের আক্ষেপ, সরকারি নজরদারিতে জেলাতেই কি পোস্ত চাষ করা যায় না? তাহলে জিভ এ ভাবে পোস্ত-বঞ্চিত থাকত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy