এসো মা লক্ষ্মী... শশীভূষণ দে স্ট্রিটের একটি বাড়িতে চলছে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
ফুল-ফলে হাত ছোঁয়ানোর জো নেই। আনাজ আগুন। সরা হোক বা প্রতিমা, তারও দর চড়া। কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনার প্রস্তুতিতে হাত পুড়ছে সাধারণ গৃহস্থের।
মহানগরী থেকে গাঁ-গঞ্জ— লক্ষ্মীপুজোয় চড়া বাজার সর্বত্র। শনিবার কলকাতার প্রায় সব বাজারেই ফুল-ফল-আনাজের দাম বেড়েছে গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা। লেক মার্কেটে আপেল বিকিয়েছে কিলো প্রতি ১০০-১২০ টাকায়। গড়িয়াহাট বাজারে নাসপাতির দর ছিল কিলো প্রতি ১০০ টাকা, পানিফল ৮০ টাকা, পেয়ারা ৬০-৮০ টাকা, আতা ২০০ টাকা, আনারস কিলো প্রতি ৬০-৭০ টাকা। ফুলের বাজারে একটি পদ্ম বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। রজনীগন্ধা, কমলা এবং হলুদ গাঁদা যথাক্রমে কিলো প্রতি ৩৫০, ৭০ এবং ৮০ টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, এই দাম প্রায় দ্বিগুণ।
জেলাতেও বাজার অগ্নিমূল্য। দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে ফুলকপি প্রতি পিস ২০-৩০ টাকায়, ঝিঙে, বেগুন যথাক্রমে ৩০ টাকা, ৫০ টাকা কিলোয় বিক্রি হয়েছে। পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরে ঝিঙে কিলো প্রতি ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, কুমড়ো ১৬ টাকা, গাজর ৮০, পটল ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ঝালদার আনাজ বিক্রেতা কমল কুইরির কথায়, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যে টোম্যাটোর দাম হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পাইকারি বাজারে আলুর বস্তা ৪৪০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা। কম দাম নেব কী করে?’’ পূর্ব বর্ধমানের একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেগুন ৫০ টাকা, ডাঁটা দেড়শো টাকা, লঙ্কা ৬০ টাকা, ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, টোম্যাটো ৬০ টাকা, বিনস দেড়শো
টাকায় বিকোচ্ছে। কাঁঠালি কলার ডজন ৫০ টাকা, নারকেল প্রতি পিস ৩০-৩৫ টাকা। এক কিলোর কাছাকাছি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,১০০ থেকে ১,৪০০ টাকা দরে। বনগাঁর আনাজ বিক্রেতা শ্রীকৃষ্ণ ঘড়ামি বললেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় আনাজের দাম অনেকটাই বেড়েছে। ক্রেতারা আনাজ কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।’’
নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও লক্ষ্মীপুজোর জোগাড়ে মধ্যবিত্তের পকেটে টান পড়েছে। অনেকেই আয়োজনে কাটছাঁট করছেন। মালবাজারের বিশ্বজিৎ দত্তের কথায়, “আমাদের বাড়িতে ১০ কেজি চাল-ডালের খিচুড়ি, ঘ্যাঁট রান্না হয়। আনাজের চড়া দামের জেরে এ বার ৪ কেজির খিচুড়ি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা মানসী গিরি বলেন, ‘‘পুজো তো বছরে একবারই। তাই সবই নিতে হয়েছে। পরিমাণে কিছুটা কম নিয়েছি।’’ প্রতিমার দামও ছিল চড়া। ১৫০-২০০ টাকার নীচে ছোট ছাঁচের প্রতিমা বাজারে নেই।
মাঝারি মাপের প্রতিমার দাম ৪০০-৫০০ টাকা। মেদিনীপুরে মৃৎশিল্পী আশিস দে বলেন, ‘‘কাঠ থেকে কাপড়, জিএসটি-র জন্য সবই বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই প্রতিমার দাম খানিক বেড়েছে।’’
পুজোর মুখে বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে আনাজ চাষে বেশ ক্ষতি হয়েছে। জলে পচে নষ্ট হয়েছে ফুলও। তার জেরেই দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে বলে বিক্রেতাদের মত। পুজোর ঠিক আগেই ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবিত হয়েছিল হাওড়ার
উদয়নারায়ণপুর ও আমতার একাংশ। বহু আনাজ নষ্ট হয়। হাওড়ার বিভিন্ন বাজারে আনাজের দর কিলো প্রতি ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বাড়ার এটা অন্যতম কারণ বলে জানালেন বিক্রেতারা। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েকও বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর আগে বৃষ্টিতে প্রচুর ফুলের ফলন নষ্ট হয়েছে। অথচ এই সময় চাহিদা থাকে বেশি। দাম তো স্বাভাবিক ভাবেই বাড়বে।’’
‘ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গ্যানাইসেশন’, ওয়েস্টবেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলে অবশ্য বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর সময়ে প্রতিবারই আনাজ এবং ফলের দাম বাড়ে। কারণ, চাহিদা বেশি থাকে। লক্ষ্মীপুজো মিটলেই দাম কমে যাবে।’’
মা লক্ষ্মীর কাছে গৃহস্থের
প্রার্থনাও তা-ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy