বর্ধমান পুরসভার প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করল সিবিআই। একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় নাম জুড়ে যায় প্রণবের। সেই মামলাতেই তাঁকে বৃহস্পতিবার কলকাতায় গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার সকালে আসানসোলের সিজেএম তোলা হলে তাঁকে তিন দিনের সিবিআই হেফাজতে পাঠানো হয়। সোমবার ফের তাঁকে আদালতে তোলা হবে।
সিবিআই সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতা, আইনজীবী তথা বর্ধমান পুরপ্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবনে শুক্রবার হানা দেয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির একটি দল। বর্ধমান শহরের ঢলদিঘিতে তাঁর অফিসেও তল্লাশি করে তারা। প্রণবের বিরুদ্ধে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কুলটি থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪১৯, ৪২০, ৪৬৮ ও ১২০/বি নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এই মামলায় ২০১৮ সালে তদন্ত শুরু করে সিবিআই।
সিবিআইয়ের দাবি, প্রায় ৪ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে। সম্প্রতি এই মামলার চার্জশিটে চন্দ্রশেখর সাভার এবং সৌম্যদ্বীপ ভৌমিকের নাম ছিল। চার্জাশিটে প্রথমে প্রণবের নাম না থাকলেও পরে তা যুক্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে এই মামলায় জেরার জন্য প্রণবকে কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। সেই জেরা শেষে বিকেলে বেরোতেই সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে তারা।
আরও পড়ুন:
শুক্রবার আসানসোল আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী দীপক পড়িয়ার দাবি, ‘‘বর্ধমানে নিজেদের বাড়িতে এই চিটফান্ডের অফিস করতে ভাড়া দিয়েছিলেন প্রণব চট্টোপাধ্যায়। বর্ধমান আদালতের আইনজীবী প্রণব চট্টোপাধ্যায় ওই সংস্থার আইনি পরামর্শদাতাও ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে এই চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে থাকার একাধিক প্রমাণ রয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে গিয়েছে ও লেনদেন হয়েছে। তাঁর স্ত্রী রেখা চট্টোপাধ্যায়ও এতে জড়িত।’’ প্রণববাবুর আইনজীবী শেখর কুণ্ডুর পাল্টা দাবি, ‘‘প্রথম চার্জশিটে আমার মক্কেলের নাম নেই। তা সত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বার বার জেরায় তিনি উপস্থিত থেকেছেন। বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রশাসক পদের মতো দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকার পাশাপাশি তিনি আইনজীবীও। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।’’ তবে বিচারক প্রণবের জামিন নাকচ করে সিবিআই হেফাজত মঞ্জুর করেন।
বর্ধমান সনমার্গ চিটফান্ড-কাণ্ডে প্রণবকে গ্রেফতার করা হলেও এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রেখা চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে সিবিআইয়ের টিম এসেছিল। তারা সনমার্গ (বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা) নিয়ে তদন্ত করছে। আমাদের একটি বাড়িতে কিছু দিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিল সনমার্গ। সিবিআই আধিকারিকদের জানিয়েছি, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’’ আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রণবের কাছে সংবাদমাধ্যম জানতে চেয়েছিল, তিনি চক্রান্তের শিকার কি না? তাতে তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘২০১০ সালের মামলায় ২০২১ সালে আমাকে গ্রেফতার করা হল। আপনারাই বুঝে নিন।’’
প্রসঙ্গত, মাস চারেক আগে বর্ধমান পুরসভার প্রশাসক হিসেবে প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। শুক্রবার সিবিআইয়ের দুর্নীতিদমন শাখার আধিকারিকেরা তাঁকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার সকালে প্রণবকে আসানসোল সিজিএম আদালতে তোলা হয়। তাঁকে তিন দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ নিয়েছে আদালত।