দিল্লির হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ ভবনে সিপিম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।
বিপর্যয়ের পরেও ঘরে আবার নতুন করে যুদ্ধ!
প্রথমে আড়াই বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়। কয়েক মাস আগে আবার বাংলায় বিধানসভা ভোটে বেনজির ভরাডুবি ঘটে শূন্যে নেমে যাওয়া! এমন বিপর্যয়ের সুযোগে সিপিএমের অন্দরে আবার শক্তি সঞ্চয় করতে নামল প্রকাশ কারাট শিবির। তাদের এ বার লক্ষ্য, সীতারাম ইয়েচুরির বদলে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক পদে বৃন্দা কারাটকে নিয়ে আসা। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার লাইনে দলকে নিয়ে গিয়েই বিপর্যয় হয়েছে, এই যুক্তি দেখিয়ে ইয়েচুরিকে দলে কোণঠাসা করতে চাইছেন কারাটেরা। এই প্রয়াসে তাঁদের মূল শক্তির কেন্দ্র কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এমন চেষ্টা সফল হবে কি না, তা অবশ্য নির্ভর করছে দলের রাজনৈতিক লাইনে আবার বদল ঘটাতে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং তার পরে পার্টি কংগ্রেস কী অবস্থান নেবে— তার উপরে।
আগামী বছর এপ্রিলে কেরলের কান্নুরে হতে চলেছে সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেস। পরপর দু’বার কেরলে ক্ষমতায় এসে এখন দলের মধ্যে প্রবল প্রতাপশালী বিজয়ন ও তাঁর সঙ্গীরা। অন্য দিকে, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর পরে বাংলার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বামেদের ভরাডুবি হয়েই চলেছে। সিপিএমের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের নিরিখে দেখলে ইয়েচুরি দলে যতটা চাপের মুখে, ততটাই ছড়ি ঘোরানোর জায়গায় কারাট-বিজয়ন জুটি। দলের গঠনতনন্ত্র অনুযায়ী, দু’বারের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি আরও এক দফার জন্য ওই পদে থাকতে পারেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকার বয়ঃসীমা (৭৫) কার্যকর হয়ে গেলে পরে আর বৃন্দার জন্য সুযোগ মিলবে না! তাই রাজনৈতিক লাইনে রদবদল করার পক্ষে সওয়াল করে কান্নুর পার্টি কংগ্রেসেই ক্ষমতা বদল চাইছেন বিজয়নেরা।
পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক দলিল নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার থেকে দিল্লির হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ ভবনে শুরু হয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের বৈঠক। প্রথম দিনে সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি রিপোর্ট পেশ করে পুরনো লাইনকেই আরও শক্তিশালী করার কথা বলার পরেই নজিরবিহীন ভাবে পলিটবুরো সদস্য বিজয়ন উঠে সওয়াল করেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার লাইনে গিয়ে সিপিএমের কী লাভ হচ্ছে? বিজেপির মোকাবিলা করতে গিয়ে কংগ্রেস এখন কেরল-সহ নানা রাজ্যেই ‘নরম হিন্দুত্বের’ রাস্তা নিয়েছে। তাদের সঙ্গ ছেড়ে সাবেক বাম রাজনীতি নিয়ে চলে বরং কেরলে সাফল্য এসেছে। উল্টো দিকে, বাংলায় সরাসরি কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ঝুলি শূন্য! একই সুর কেরলের ভারপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদক এ বিজয়রাঘবন বা অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানার নেতাদের।
বাংলার শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের মতো নেতারা পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, শুধু কেরল দিয়ে গোটা ভারতকে বিচার করা যায় না। এমন বিরাট দেশে রাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ‘বাধ্যবাধকতা’ও আলাদা হয়। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যের নেতাদেরও এমন মত। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এই বিতর্কের পরে নভেম্বরে বসবে পলিটবুরোর বৈঠক। তার পরে আগামী জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠকে রাজনৈতিক দলিলের খসড়া চূড়ান্ত হবে, যা ওয়েবসাইটে দিয়ে মতামত নেওয়া হবে। তিন বছর আগে, ২০১৮ সালে এই প্রক্রিয়ায় বিতর্ক মেটেনি বলে কারাট-এস আর পিল্লাইদের রাজনৈতিক দলিলের পাশাপাশি ইয়েচুরি বিকল্প দলিল পেশ করেছিলেন হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে। দলের একাংশের মতে, কারাট-বিজয়নেরা এ বার ‘বদলা’ চাইছেন!
দু’দফায় সাধারণ সম্পাদক থাকলেও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাল্লা ভারী থেকেছে কারাটদেরই। যুক্তির জোরে তিন বছর আগের মতো ইয়েচুরি ফের সংখ্যার ঘাটতি মেটাতে পারবেন কি না, প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য অবশ্য বলছেন, ‘‘লাইন নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। আগে রাজনৈতিক খসড়া ঠিক হোক, তার পরে অন্য বিষয়ে ভাবা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy