Advertisement
E-Paper

মেয়ের সাজা চান ‘জঙ্গি’ প্রজ্ঞার বাবা-মা

আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুত তাসনিম নামে জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি-র নারী বাহিনীর যে সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা দফতর, সে-ই হুগলি জেলার ধনেখালির ওই মেয়ে।

প্রজ্ঞা দেবনাথ।

প্রজ্ঞা দেবনাথ।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০৩:৪৮
Share
Save

বারান্দার একপাশে নীল লেডিস সাইকেলটা দাঁড় করানো। বছর চারেক হয়ে গেল সাইকেলের মালিক বাড়ি নেই! দু’চাকার বাহনটিতে চেপে হুগলির ধনেখালির ভাণ্ডারহাটিতে পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়াত যে মিতভাষী মেয়েটি, তার ‘দিগ্‌ভ্রষ্ট’ হওয়ার খবরে মায়ের মুখে কথা সরে না। একটু ধাতস্থ হয়ে বলেন, ‘‘শেষে জঙ্গি দলে নাম লেখাল!’’

আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুত তাসনিম নামে জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি-র নারী বাহিনীর যে সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা দফতর, সে-ই হুগলি জেলার ধনেখালির ওই মেয়ে। এখানে অবশ্য সে প্রজ্ঞা দেবনাথ। হরিপাল থেকে ধনেখালি যাওয়ার রাস্তার মাঝে ভাণ্ডারহাটি-১ পঞ্চায়েতের পশ্চিম কেশবপুর গ্রাম। পিচরাস্তার ধারে অপরিসর কংক্রিটের পথ নেমে গিয়েছে। কয়েক পা এগিয়েই ছোট একতলা বিবর্ণ বাড়ি। দেওয়ালে ফাটল। চালার বাঁশ থেকে ঝুলছে দড়িতে বাঁধা হ্যারিকেন। শনিবার দুপুরে সে দিকেই অপলক তাকিয়ে গীতা দেবনাথ, প্রজ্ঞার মা। জানান, আর পাঁচটা মেয়ের মতোই বেড়ে উঠেছিল প্রজ্ঞা। প্রথমে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার পরে ভাণ্ডারহাটি বালিকা বাণীমন্দির থেকে মাধ্যমিক। কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ভাণ্ডারহাটি বিএম ইনস্টিটিউশন থেকে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক— দুই পরীক্ষাতেই দ্বিতীয় বিভাগ। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ধনেখালি শরৎ সেন্টিনারি কলেজে বিএ তৃতীয় বর্ষের পরে আর পড়েনি প্রজ্ঞা।

২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে ‘দরকারে’ কলকাতায় যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি। আঁধার ঘনাতেই ‘নট রিচেবল’ হয়ে যায় তার মোবাইল। মাস তিনেক পরে সে বাড়িতে ফোন করে জানায়, ইসলাম ধর্ম নিয়েছে। পরিবার মেনে নিতে পারলে সে ফিরবে, না হলে নয়। গীতা বলেন, ‘‘ওর কথায় আকাশ থেকে পড়ি। এই মেয়েই পুজো-পার্বণে আনন্দ করত! কালীপুজোয় রাত জাগত! চলে যাওয়ার এক মাস আগে ঠাকুমার শ্রাদ্ধকাজ করল নিষ্ঠার সঙ্গে! বলেছিলাম, প্রজ্ঞা হয়েই ফিরে আয়!’’

আরও পড়ুন: উড়ান বন্ধই সার, যাত্রী আসা কি ঠেকানো গেল?

এল না। পরিবারের দাবি, বাংলাদেশ থেকে আসা মিনিট পাঁচেকের সেই ফোনই তার সঙ্গে শেষ যোগাযোগ। শনিবার সকালে আনন্দবাজারে মেয়ের জঙ্গি পরিচয়ে আঁতকে ওঠেন বাবা-মা। ছবি দেখে ডুকরে কাঁদেন। বাবা প্রদীপ বলেন, ‘‘মেয়ে সারা ক্ষণ ফোন নিয়ে থাকত। ওর মাথায় যে এই সব ঢুকেছে কে জানত! এর পিছনে নিশ্চয়ই কেউ ছিল।’’ হঠাৎ চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে তাঁর, ‘‘মেয়ে দোষ করলে সাজা পাক। যেমন কর্ম, তেমন ফল পাবে।’’

মায়ের ক্ষোভ, ‘‘কত কষ্টে দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করলাম। মেয়ে আমার এই সম্মান দিল! তার যা সাজা প্রাপ্য, তাই হোক।’’ পর ক্ষণেই কান্নায় ভেঙে পড়েন, ‘‘নিজেকে শুধরে ও ফিরে আসুক।’’

আশপাশের অনেকেই এ দিন উঁকি দিয়েছেন প্রজ্ঞাদের বাড়িতে। রাস্তার জটলায় তার কথা উঠেছে। পুলিশ প্রজ্ঞার ভাইকে ডেকে খোঁজখবর নিয়েছে। পড়শি রঘুনাথ মালিকের কথায়, ‘‘যা শুনছি, প্রজ্ঞার মধ্যে তার বহিঃপ্রকাশ কিন্তু দেখিনি। ব্যবহার ভাল ছিল। তবে গ্রামে তেমন বন্ধুবান্ধব ছিল না।’’

JMB Pragya Debnath Terrorist Dhaniakhali

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}