শান্তিনিকেতনের মতো গাছতলায় স্কুল দেখা যাচ্ছে বাংলার বহু এলাকায়। ছবি: সংগৃহীত। —ফাইল চিত্র।
প্রকৃতির কোলে মুক্ত আবহাওয়ায় শিক্ষার আহ্বান জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ নিজেই তার সূচনা করেছিলেন শান্তিনিকেতনে। কবির সেই ডাকে কাজ হোক না-হোক, এখন এই করোনা-কালের বাংলায় দেখা যাচ্ছে, কোনও স্কুলের নাম ‘গাছতলায় পাঠশালা’, কোনও স্কুলের পরিচয় ‘গ্রামের মাঝে মুক্ত বিদ্যালয়’, আবার কোনওটির নাম ‘লকডাউন স্কুল’।
প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় যেখানে নেট-সংযোগ নেই বললেই চলে কিংবা সংযোগ থাকলেও বাড়িতে স্মার্টফোন রাখার মতো আর্থিক অবস্থা পড়ুয়াদের নেই, সেখানে অনেক শিক্ষক নিজেদের উদ্যোগে এ ভাবেই নানান নামে অস্থায়ী পাঠশালা খুলে পাঠ দান করছেন। বাড়ি গিয়ে পড়ুয়াদের ডেকে এনে গ্রামের দুর্গামন্দিরের চাতালে বা গাছতলায় বা ক্লাবের উঠোনে চলছে পাঠশালা। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট ‘গ্রুপ’ বা দল তৈরি করে সপ্তাহে দু’তিন দিন পড়াচ্ছেন তাঁরা।
অনলাইন-পাঠের হরেক সমস্যার মোকাবিলায় কিছু দিন আগে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, যে-সব জায়গায় নেট-সংযোগ দুর্বল, সেখানে শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে ছেলেমেয়েদের পড়ালে ভাল হয়। জঙ্গলমহলের আদিবাসী অধ্যুষিত ভুগলোশোল গ্রামে লকডাউন পাঠশালা খুলে পড়াচ্ছেন শালবনির একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তন্ময় সিংহ। ‘‘দীর্ঘদিন লেখাপড়া বন্ধ ছিল। সেই অনভ্যাসের ফলে পড়া ভুলে গিয়েছিল অনেক খুদে পড়ুয়া। এখন সপ্তাহে দু’দিন ক্লাস নিই। ওরা আবার পঠনপাঠনের অভ্যাসে ফিরে এসেছে। গ্রামে নেট-সংযোগ নেই। আদিবাসী বাচ্চারা এতই গরিব যে, স্মার্টফোন চোখে দেখেনি,’’ বললেন তন্ময়বাবু। গ্রামের একটি ফাঁকা মাঠে লকডাউন পাঠশালায় তন্ময়বাবু ছাড়াও কচিকাঁচাদের পড়াচ্ছেন অন্য কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের আদিবাসী-প্রধান গ্রামের গাছতলায় গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য পাঠশালা খুলেছেন একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক গৌরাঙ্গ চৌহান। তিনি জানান, এই সব আদিবাসী পড়ুয়ার বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় ওদের পাশে দাঁড়ানো খুব জরুরি ছিল। “বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ুয়াদের আসতে বলেছি। বলেছি, কোনও ভয় নেই। স্কুলে সাবান রাখা থাকবে। দূরে দূরে বসেই ছেলেমেয়েরা পড়বে। ওদের বাড়ির লোকেরা স্কুলে পাঠিয়েছে। সপ্তাহে দু’দিন পড়াই,’’ বললেন গৌরাঙ্গবাবু।
একই ভাবে পূর্ব বর্ধমানের কালনা থেকে অনেকটা দূরে, প্রত্যন্ত গ্রাম জিউধারার গাছতলায় গরিব বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন স্কুলশিক্ষিকা ঝুমা সাহা। তিনি বলেন, “সব পড়ুয়াকে স্যানিটাইজ়ার বা হাতশুদ্ধি দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। তবে গাছতলায় যেখানে পড়াই, তার পাশে সাবান ও জল রেখেছি। বাচ্চারা যাতে হাত ধুয়ে পড়তে বসে, সে-দিকে নজর রাখি।”
লকডাউনের প্রথম মাসের পর থেকে রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা নিজেদের উদ্যোগে ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন বলে জানালেন ওয়েস্ট বেঙ্গল তৃণমূল প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। তিনি বলেন, “কোনও রাজনৈতিক ব্যানারে নয়, গ্রামের গরিব পড়ুয়াদের কথা ভেবে আমরা এই কর্মসূচি নিয়েছি। যেখানে অনলাইনে পড়াশোনা সম্ভব নয়, ইচ্ছুক শিক্ষকদের সেখানে গিয়ে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে পড়াতে অনুরোধ করেছিলাম। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাই তাতে রাজি হয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy