Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ধর্মাবতার, ফিরিয়ে দিন দুই মেয়েকে

গরিব বাবার অসুস্থতার ফাঁকে তাঁর এগারো আর ন’বছরের দুই মেয়েকে সরকারি হোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক জনকে ইতিমধ্যে নাকি দত্তকও দিয়ে দেওয়া হয়েছে! এই অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন জলপাইগুড়ির চম্পাসারির শানু দাস। পেশায় মালবাহক শানুর আবেদন, দুই মেয়েকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

গরিব বাবার অসুস্থতার ফাঁকে তাঁর এগারো আর ন’বছরের দুই মেয়েকে সরকারি হোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক জনকে ইতিমধ্যে নাকি দত্তকও দিয়ে দেওয়া হয়েছে! বাবা চাইলেও মেয়েদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।

এই অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন জলপাইগুড়ির চম্পাসারির শানু দাস। পেশায় মালবাহক শানুর আবেদন, দুই মেয়েকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক।

বিপন্ন শৈশবের পাশে যাদের দাঁড়ানোর কথা, সেই জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রেই নানা ধরনের অভিযোগ উঠছে দীর্ঘদিন ধরে। হোমে শিশুদের রাখার ক্ষেত্রে অনিয়ম ছাড়াও নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে শিশুদের দত্তক দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে ওই শিশু কল্যাণ সমিতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান শানু। তাঁর অভিযোগ দার্জিলিং শিশু কল্যাণ সমিতির বিরুদ্ধেও।

৩৫ বছরের শানুর অভিযোগ, তিনি হাসপাতালে আধো-অচেতন থাকাকালীন দার্জিলিং শিশু কল্যাণ সমিতির লোকেরা এসে একটি ফর্মে তাঁর টিপসই নিয়ে চলে যান। তার পরে দুই মেয়েকে হোমে রাখা হয়। পাঁচ বছর আগে ওই যুবকের স্ত্রী দীপা চার সন্তানকে তাঁর কাছে রেখে চলে যান। ‘‘একাই কষ্টেসৃষ্টে চার সন্তানকে মানুষ করছিলাম। ২০১৬ সালের মে মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় উত্তরবঙ্গের হাসপাতালে ভর্তি হই। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় এক সপ্তাহ কেটে যায়। চার সন্তানকে নিয়ে যায় আমার বোন মামণি। জলপাইগুড়ির বাইপাসে থাকে সে,’’ বলেন শানু।

ওই যুবকের অভিযোগ, পাড়ার কয়েক জন হাসপাতালে তাঁকে দেখতে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অচেনা দু’জন। তাঁর কথায়, ‘‘আধা-চেতনার মধ্যে এটুকু মনে আছে, ওঁরা বলেছিলেন, মেজো মেয়ে মোহিনী আর সেজো মেয়ে সঙ্গীতাকে হস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। তবে আমার টিপসই সে-দিন নেওয়া হয়েছিল কি না, মনে নেই।’’ সুস্থ হয়ে বোনের বাড়িতে গিয়ে শানু দেখেন, মোহিনী ও সঙ্গীতা সেখানে নেই। বোনকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানান, পাড়ার কয়েক জন এসেছিলেন। শানু দুই মেয়েকে দেখতে চেয়েছে বলে জানিয়ে তাঁরা তাদের নিয়ে যান। বলেন, এর পরে দু’জনকেই হস্টেলে রাখা হবে।

সুস্থ হয়ে শানু ওই পড়শিদের কাছে গেলে তাঁরা তাঁকে শিশু সমিতির ঠিকানা দেন। হন্যে হয়ে মেয়েদের খুঁজতে থাকেন বাবা। কয়েক মাস ধরে এক অফিস থেকে অন্য অফিসে ঘুরে বেড়িয়েও তাদের হদিস পাননি। শেষ পর্যন্ত জলপাইগুড়ির একটি হোমে গিয়ে দুই মেয়েকে দেখতে পান শানু। কিন্তু মেয়েদের তাঁর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। ‘কাগজপত্র’ তৈরি করে আনতে বলা হয়। বাড়ি ফিরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন শানু। চিকিৎসার জন্য প্রথমে ভেলোরে যান, সেখান থেকে বেঙ্গালুরু। ফিরে এসে জলপাইগুড়ির ওই হোমে গিয়ে দেখেন, সেটি তালাবন্ধ। ফের শুরু হয় খোঁজ। দেড় বছরেও মেয়েদের না-পেয়ে জানুয়ারিতে দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগাল এড ফোরামের দ্বারস্থ হন শানু।

সেই ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার যোগাযোগ শুরু করলে একটি কাগজ তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাতে লেখা, ‘শানু স্বেচ্ছায় মেয়েদের হোমে পাঠিয়েছেন।’ শানুর টিপসই রয়েছে সেই কাগজে। ২ ফেব্রুয়ারি জলপাইড়ির শিশু কল্যাণ সমিতিতে শানুকে ডেকে পাঠিয়ে দুই মেয়েকে দেখানোও হয়। কিন্তু তাঁর হাতে দেওয়া হয়নি মেয়েদের। অমিতবাবুর কথায়, ‘‘এর পরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া শানুর আর কিছু করার ছিল না।’’ রাজ্য শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার কানে এসেছে সপ্তাহ দুয়েক আগে। এই নিয়ে জলপাইগুড়ির জেলাশাসককে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy