• গভীর রাত। বেশির ভাগ ট্রেনযাত্রীই ঘুমে কাদা। হঠাৎ প্রবল জলস্রোত এসে ভাসিয়ে নিয়ে গেল রেললাইন। দুর্ঘটনার কবলে পড়ল দু’টি যাত্রিবাহী ট্রেন— কামায়নী এক্সপ্রেস ও জনতা এক্সপ্রেস। মারা গেলেন ২৯ জন। আহত ৪৫।
গত বছর ৪ অগস্ট ভোপালের হড়দা এলাকার ঘটনা। রেলের নিজস্ব তদন্তই বলছে, রেললাইনের পাশে একটি বাঁধের জল উপচে বিপত্তি। এবং জলস্রোতের এ-হেন ঘাতক হানাদারির মূলে আছে রেললাইনে যথাযথ নজরদারির অভাব।
• সন্ধ্যা থেকে বেশি রাত পর্যন্ত ট্রেন ছাড়ছে না। উদ্বিগ্ন ভিড় উপচে পড়ছে শিয়ালদহ স্টেশনে। সব প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন। খবর আসছে, ডিভিশনের সব শাখারই বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকে পড়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির বিচারে চলতি বছরের ২৩ মে-র এই ঘটনা আর গত অগস্টে ভোপালের দুর্ঘটনার মধ্যে তুলনা চলে না। তবু দু’টি ঘটনার মিল তাদের কার্যকারণে। নজরদারিতে ঘাটতি। দেখভালে অবহেলা। সময়ের কাজ সময়ে না-করার প্রাণঘাতী মাসুল। ভোপালের দুর্ঘটনা ঘটেছিল ভরা বর্ষায়। আর শিয়ালদহের ঘটনা ঘটে গ্রীষ্মশেষে, বর্ষার প্রাক্কালে।
রেল মহলেরই একাংশ বলছে, প্রাক্-বর্ষা আর বর্ষায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি মনোযোগ ও তৎপরতা দরকার। কিন্তু বর্ষার ভোপালে বা প্রাক্-বর্ষার শিয়ালদহে সেই সক্রিয়তা দেখা যায়নি বলেই ঘটে বিপত্তি। ভোপালে বাঁধের জল যে লাইন ভাসিয়ে দিতে পারে, সেটা আগাম বুঝে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর বর্ষা আসছে জেনেও শিয়ালদহে নিকাশিতে নজর না-দেওয়ায় হঠাৎ-বৃষ্টির জমা জলে ‘রুট রিলে ইন্টারলক সিস্টেম’-এর প্যানেলে গোলমাল দেখা দেয়। গড়বড় শুরু হয় সিগন্যালে। সেই সঙ্গে ওভারহেড তারে লোকাল ট্রেনের প্যান্টোগ্রাফ জড়িয়ে গিয়ে গোলমাল পাকায়।
রেলকর্তা ও কর্মীদের একটি শিবিরের অভিযোগ, প্রাক্-বর্ষা বা বর্ষায় বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রুটিনমাফিক নজরদারিও থাকছে না। তারই পরিণামে যাত্রী-দুর্ভোগ। দুর্ঘটনা। ঝড় হল কি হল না, ওভারহেড তার ছিঁড়ে ট্রেন বন্ধ! বৃষ্টি হল কি হল না, লাইনে জল জমে সিগন্যাল বিকল!!
শুক্রবার সকালের বৃষ্টিতে দমদম স্টেশনের প্রবেশপথের প্রায় পুরোটাই জলমগ্ন হয়ে যায়। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে নিকাশি নর্দমার কাদাগোলা জল ঠেলে ঠেলেই যাতায়াত করতে হয়েছে মেট্রো ও সাধারণ ট্রেনের যাত্রীদের। রেলকর্তারা জানান, ওই পথে টাইলস বসানো হচ্ছে। তাই জল জমে গিয়েছিল। কিন্তু বর্ষার আগে কেন ওই কাজটি সেরে ফেলা হয়নি, তার জবাব দিতে পারেননি রেলকর্তারা।
কী করছেন রেল-কর্তৃপক্ষ?
বর্ষায় ট্রেনযাত্রীদের দুর্ভোগের মোকাবিলায় সব জোনকে সতর্ক করে দিয়েছে রেল মন্ত্রক। রেল সূত্রের খবর, মন্ত্রকের নির্দেশে বলা হয়েছে: • নিকাশি নালা পরিষ্কার না-থাকলে বৃষ্টিতে লাইনের জল নামবে না। তাই সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ ভাবে নিকাশি সাফ রাখার কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের সাহায্য নিতে হবে। • প্রতি বছর যে-সব এলাকায় রেললাইনে জল দাঁড়িয়ে যায়, বিশেষ করে সেই এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সতর্কতামূলক কাজকর্ম সেরে ফেলতে হবে আগেভাগে।
সেই কাজের রোজকার রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। • ওই সব এলাকা সমীক্ষা করার জন্য বিশেষ দল গড়তে হবে রেলকর্তা ও কর্মীদের নিয়ে। প্রয়োজনে ওই সব এলাকায় ২৪ ঘণ্টা নজরদারির দায়িত্ব দিতে হবে রেলকর্মীদের। • সব জোনেই বালির বস্তা, পাথরকুচি, বোল্ডার, তার ও লোহার গার্ডার যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রাখতে হবে। • বিশেষ করে বর্ষায় সকাল-সন্ধ্যায় পর্যবেক্ষণে বেরোতে হবে রেলকর্তা ও কর্মীদের। • আর নিয়মিত আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
প্রশ্ন উঠছে, রেল মন্ত্রকের এই নির্দেশে নতুন কী আছে? এ-সব তো করারই কথা! নির্দিষ্ট সময় মেনে রেললাইনের পাথর বদল করা, লাইনের পাশে গাছের ডাল ছেঁটে দেওয়া, রেলের জমিতে নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা, রেলের ছোট-বড় সব সেতু নিয়মিত পর্যবেক্ষণ...। এ-সব তো রুটিন মেনেই করার কথা!
করার কথা, কিন্তু করা হয় না বলে জানাচ্ছেন রেলকর্মীদেরই একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, এই সব কাজের ব্যাপারে রেলের নিয়মবিধি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাগজে-কলমেই থেকে যায়। কাজটা আর হয়ে ওঠে না।
রেল মন্ত্রকের নতুন নির্দেশে কাজ হবেই, এমন নিশ্চয়তা আছে কি?
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রের দাবি, এ বার অন্তত মন্ত্রকের ওই নির্দেশ কাগজে-কলমে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বৃহস্পতিবারেই পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সব ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ১৫ দিনের মধ্যেই রিপোর্ট পাঠানো হবে রেল বোর্ডে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষও জানান, বুধবার এ ব্যাপারে সব ডিভিশনের কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছেন জেনারেল ম্যানেজার। দক্ষিণ-পূর্ব রেল জোনে বেশ কিছু পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। ওই সমস্ত এলাকা ধস-প্রবণও বটে। সেই এলাকাগুলিতে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy