Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
BJP

গুজরাতের নাগরিক নির্দেশ নিয়ে তরজা এ রাজ্যে, সংশয়ও

দেশের সাম্প্রতিক সব নির্বাচনেই প্রচারে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ‘নাগরিকত্ব’। শুধু তাই নয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ ( সিএএ)-কে সামনে রেখে লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে ব্যাপক প্রচার করেছে বিজেপি।

তরজা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

তরজা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৭:১৭
Share: Save:

গুজরাতের দুই জেলায় নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণার পরই তা নিয়ে ফের তরজা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিরোধীরা বলছে, ভোটের স্বার্থেই এই কৌশল নিয়েছে বিজেপি। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে পরস্পরবিরোধী মততৈরি হয়েছে রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যেও।

দেশের সাম্প্রতিক সব নির্বাচনেই প্রচারে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ‘নাগরিকত্ব’। শুধু তাই নয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ ( সিএএ)-কে সামনে রেখে লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে ব্যাপক প্রচার করেছে বিজেপি। অন্য অনেক রাজ্য তো বটেই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে শাসক ও বিরোধীদের প্রচারে তা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। সোমবার গুজরাতের মেহসানা ও আনন্দ জেলায় এই আইন কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ জারি হওয়ার পর তা নিয়েও প্রচার ও পাল্টা শুরু হয়ে গিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘এটা তো হওয়ারই ছিল। গুজরাতে হয়েছে। এ বার তা পশ্চিমবঙ্গেও কার্যকর করা হবে।’’ কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও বলেন, ‘‘এটা আমাদের মতুয়াদের কাছে আনন্দের খবর। আমি নিশ্চিত, গুজরাতে প্রথম দফায় নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হচ্ছে। ধীরে ধীরে এ রাজ্যেও হবে।’’

অন্য দিকে, ২০১৯ সালে সংসদের উভয়কক্ষে পাশ হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন থাকা সত্ত্বেও কেন ১৯৫৫ সালের আইন কার্যকর করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার। মতুয়া অধ্যুষিত নদিয়ার হরিণঘাটা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত অসীমের প্রশ্ন, ‘‘পুরনো আইনেই যদি নাগরিকত্ব দেওয়া হয় তা হলে সিএএ-র জন্য এত আন্দোলন করা হল কেন?’’

প্রসঙ্গত, গুজরাতের দুই জেলার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে তা ২০১৯ নয়, ১৯৫৫ সালে তৈরি দেশের মূল নাগরিকত্ব আইনের ভিত্তিতে। পুরনো আইনে ধর্মের কোনও উল্লেখ না থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় ইসলাম ছাড়া ৬টি ধর্মের কথা বলা হয়েছে। সিএএ-তেও ওই ধর্মগুলির উল্লেখ করে নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছিল বলেই বিতর্ক বেধেছিল।

বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক অসীমের মন্তব্যের ফারাক রয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপির অন্দরেও এই মতানৈক্য রয়েছে। যদিও রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মানুষ রায় দিয়ে দলকে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যে কোনও মন্তব্যই বিচ্যুতি।’’

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগকে ভাঁওতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর কংগ্রেস এবং সিপিএম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই পদক্ষেপের আইনি বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ভোটের মুখে সেতু ভেঙে বিজেপি বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে। তা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে নাগরিকত্বের কথা বলা হয়েছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা নাগরিক তাঁদের আবার আলাদা করে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘মোরবীতে বিপর্যয় হয়েছে, অন্য কোনও অস্ত্রও কাজ করছে না। এই অবস্থায় ধর্মীয় বিভাজন উস্কে দিয়ে বিজেপি এক দিকে গুজরাতের আসন্ন বিধানসভা ভোটে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে, আবার অন্যত্রও দেখানোর চেষ্টা করছে যে, নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘১৯৫৫ সালের মূল আইনে নাগরিকত্ব দেওয়ার হলে ৬ মাস, এক বছর বা আরও আগেই দেওয়া যেত। এত দিন সময় লাগবে কেন?’’

লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে, ‘‘আমাদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কোনও সংস্থান নেই। যদি ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব এতই সহজ হত, তা হলে সিএএ পাশ হয়ে যাওয়ার তিন বছর পরেও বিধি প্রণয়ন করা গেল না কেন? গুজরাতে যা হচ্ছে, ভোটের আগে আর একটা রাজনৈতিক জুমলা!’’ অধীরের বক্তব্য, এ দেশের মুসলিমেরা কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলেননি। তবু বার বার অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিভাজন ঘটানোর উদ্দেশ্যে।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Gujarat Citizenship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy