বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
যে সব দুর্নীতি নিয়ে শাসকের দিকে আঙুল তুলছেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী, এ বার সেই সব তির তাঁর দিকেই ঘুরিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গরু-কয়লা পাচার থেকে শুরু করে নিয়োগ দুর্নীতি পর্যন্ত সব কিছুর দিকে ইঙ্গিত করে অভিষেকের দাবি, ‘‘শুভেন্দুকে ধরা হোক। উনি সব জানেন।’’ পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শুভেন্দু অবশ্য বিভিন্ন সময় অভিষেকের বিরুদ্ধে তোলা তাঁর অভিযোগই ফের তুলে এনেছেন। নাম না করে প্রশ্ন তুলেছেন, বিদেশের অ্যাকাউন্টে লেনদেন নিয়ে।
কয়লা ও গরু পাচারের অভিযোগ তুলে বার বার অভিষেকের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন শুভেন্দু। নাম না করলেও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে ইঙ্গিত করে সেই সব অভিযোগে ‘ভাইপো’র কথা টেনেছেন তিনি। সাম্প্রতিক কালে চর্চিত শিক্ষা দুর্নীতির প্রসঙ্গও জুড়েছে সে সবের সঙ্গে। শনিবার তা নিয়েই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ করে অভিষেক বলেন, ‘‘কয়লা পাচার, গরু পাচার, এসএসসি দুর্নীতির কোথাও কোনও যোগাযোগের প্রমাণ থাকলে সামনে আনুন। ১০ পয়সার লেনদেন হয়ে থাকলে আমি মৃত্যুবরণ করব। ই়ডি, সিবিআই লাগবে না।’’
শিক্ষক নিয়োগের প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বললেও শুভেন্দু অবশ্য এ দিনও অভিষেকের বিরুদ্ধে পুরনো তিরই ছুড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আত্মীয়তার সূত্রে কে কোথা থেকে কত টাকা পেয়েছেন, খোঁজ নিন। কার নামে তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে? এখানকার টাকা ভাটে বদল হয়ে, কী ভাবে সেখানকার অ্যাকাউন্টে গেল? কার মাধ্যমে গেল, সে সব খোঁজ নিন।’’ অভিষেক অবশ্য আগেই বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে নাম করে বলুন। তারপর যা করার আমি করব।’’
অভিষেকের বিরুদ্ধে একাধিক বার রিগিংয়ের অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু-সহ অন্য বিরোধীরা। শুভেন্দুর সেই অভিযোগের জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দিতে না পারলে আমাকে বলবেন। আমি দাঁড়িয়ে থেকে মনোনয়ন দেওয়াব।’’ সেই সঙ্গে বিরোধী দলনেতাকে কটাক্ষ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘৭০ হাজার প্রার্থীর তালিকা তৈরি করতে হবে তো! সেই দায়িত্ব তো শুভেন্দু অধিকারীকে নিতে হবে। প্রার্থী খুঁজে দিতে পারব না।’’
নির্বাচন নিয়ে অভিষেকের কটাক্ষের জবাবে শুভেন্দু বলেন, ‘‘(আমি) ওঁর দলের মালিককে হারানো লোক। ওঁকে আমার প্রতিপক্ষ বলে মনে করি না।’’ তারপরই তিনি বলেন, ‘‘১৯৮৮ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতি করছি। যখন বিরোধীরা প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছিলেন, যখন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-নেতাই হচ্ছিল, তখন উনি (অভিষেক) নিশ্চিন্তে দিল্লিতে ছিলেন। যখন সরকারি ক্ষমতা হাতে এল। তখন হঠাৎ ব্রিগেডের সভায় চলে এলেন।’’ মনোনয়ন নিয়ে অভিষেকের এই মন্তব্যের সমালোচনা করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন,“ আরাবুল-অনুব্রতের প্রতিচ্ছবি অভিষেকের মধ্যে। মোদীজির নির্দেশে বিজেপির মনোনয়নের বরাত যে পিসি-ভাইপো নিয়েছেন, তা স্পষ্ট হল।”
রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ করে অভিষেক এ দিন ১০০ দিনের কাজের প্রসঙ্গ তুলেছেন। এ দিন ডায়মন্ড হারবারে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ৬ হাজার কোটি টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। ভুয়ো জব কার্ডের শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতের মতো রাজ্যগুলি। কারও টাকা আটকানো হয়নি। জিএসটি বাবদ রাজ্যের প্রাপ্যও দেয়নি কেন্দ্র।’’ জবাবে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কেন্দ্র বলেনি জব কার্ডের টাকা দেবে না। আপনারা চুরি বন্ধ করুন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করিয়েছেন? কেন করাননি? তাহলে কি সব ভুয়ো?’’
পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূলের যুবনেতা বিনয় মিশ্রের সঙ্গে শুভেন্দুর যোগাযোগ নিয়ে এ দিন ফের খোঁচা দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘একবারও তো বলছেন না, তিনি বিনয় মিশ্রের সঙ্গে কথা বলেননি। বলুন না। তারপর তো আদালতে প্রমাণ দেব।’’ এই অভিযোগের জবাবে অভিষেকের উদ্দেশে এ দিন শুভেন্দু বলেন, ‘‘আপনার সিলিংয়ে, বাথরুমে, গুদামে অনেক টাকা। টাকা দিয়েই গলা নকল করিয়েছেন।’’
অভিষেকের প্রশাসনিক বৈঠক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘উনি প্রশাসনিক সভা করতে পারেন না। বিরোধী দলনেতা হিসেবে মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানতে চাইব কার নির্দেশে এই সভা হল। সাত দিন অপেক্ষা করব। তারপর আদালতে যাব। আজ থেকে পশ্চিমবঙ্গে রাজতন্ত্র চালু হল।’’ অভিষেক অবশ্য তাঁর বৈঠকের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘প্রত্যেক জনপ্রতিনিধিরই এইরকম বৈঠক করা উচিত। তাতে স্থানীয় উন্নয়নের কাজে ছোট ছোট বাধা কাটিয়ে এগোনো সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy